ছাঁচ বদল ও বাঁকবদলের বাংলা : মৃদুল শ্রীমানী


ছাঁচ বদল ও বাঁকবদলের বাংলা

মৃদুল শ্রীমানী

 ইংরেজ না এলে বাংলা ভাষার চেহারাটা বোঝার চেষ্টা করি। কমা, সেমিকোলন, হাইফেন আর ড‍্যাশ, জিজ্ঞাসা চিহ্ন ও বিস্ময়সূচক চিহ্ন, এসব কোনো কিছুই নেই। কেবল একটি দাঁড়ি ও দুটি দাঁড়ি। আর  গদ‍্য? নাঃ, দলিল বা কেজো চিঠিতে ছাড়া কোথাও সাহিত‍্যিক বাংলা গদ‍্য নেই। তা বলে লোকজন কি গদ‍্যে কথা বলে না? বলার সময় অন্ত‍্যমিল ব‍্যবহার করে নাকি? তা তো নয়। কিন্তু লেখার সময় গদ‍্য লেখে না। কাগজের যোগান নেই। তালপাতার উপর খাগের কলমে লেখা। লিপি? তা একরকম আছে বটে। তবে ব‍্যক্তিভেদে তা নানাবিধ। বানান একেকজন একেকরকম লেখেন। হস্তলিপি সর্বদা সুপাঠ‍্য তো নয়ই, মর্মোদ্ধার কঠিন হয়। একেকজন আপনমনের মাধুরী মিশিয়ে পুঁথির পাঠ দিয়েছেন বদলে। বিখ্যাত কবির নাম ব‍্যবহার করে অক্ষম কবিও ভেলা ভাসিয়ে দিয়েছেন।

ধনী ভূস্বামীরা পিতৃপিতামহের সম্মান রক্ষা করতে লিপিকর ডেকে এনে পুঁথি নকল করান। আবার নকলের নকল করান।  ব্রাহ্মণ ও বর্ণহিন্দুর উঁচু থাকের লোক বিনা পড়ালেখার সুযোগ নেই কারো।  পুঁথি পড়েই বা কে? লালশালু মুড়ে মাথায় ঠেকিয়ে রেখে দেওয়া। ব্রাহ্মণ ছাড়া অন‍্য কারো উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রায় নেই।  আবার ব্রাহ্মণের শিক্ষা বলতে যা আছে, তা স্মৃতিশাস্ত্র, ব‍্যাকরণ, কাব‍্য, ন‍্যায়, তর্কশাস্ত্র ও দর্শন। গণিত ও বিজ্ঞান নৈব নৈব চ। ভূগোল ইতিহাসের বালাই নেই। যুক্তিভিত্তিক ইতিহাসচর্চার ধারণাটাই গড়ে ওঠেনি। হেঁয়ালিপূর্ণ ও দ্ব‍্যর্থবোধক ভাষায় লেখার আদর আছে। স্পষ্ট তথ‍্যনির্ভর সূচীমুখ যুক্তিপূর্ণ গদ‍্য পরে আসবে। এইরকম চলেছে অনেক দিন। চিকিৎসাশাস্ত্রও পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ নির্ভর ছিল না। ল‍্যাবরেটরিতে নিরপেক্ষ নৈর্ব্যক্তিক পরিবেশ গড়ে তুলে বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিক গঠনটাই তৈরি হয় নি। পুঁথিনির্ভর আয়ুর্বেদিক বা কবিরাজী এবং হেকিমী চিকিৎসা ছিল সম্বল।

খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক হয়ে আসা ইউরোপীয় মানুষের চেষ্টায় বাংলার ব‍্যাকরণ লেখার কাজটা হল। বাঙালি জাতির পণ্ডিতসমাজ সংস্কৃত পড়ত। সংস্কৃত কাব‍্য অলঙ্কার ব‍্যাকরণে তর্কপ্রিয় ছিল পণ্ডিতেরা। ধরাবাঁধা সিলেবাস বা পরীক্ষা পদ্ধতি বলতে আজ আমরা যা বুঝি, তা যে সেকালের টোল বা চতুষ্পাঠীতে ছিল না, তা বলাই বাহুল‍্য। তর্ক করে একজন আরেকজনকে হারিয়ে দিচ্ছে, মাথা নত করে দিচ্ছে দশজনের সম্মুখে, এই ছিল দস্তুর। এই জিনিসটাই অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সময় পর্যন্ত চলে এসেছে। সংস্কৃত পড়ে কেউ কেউ সংস্কৃত সাহিত্য ও মহাকাব‍্য অনুবাদ করেছেন। কৃত্তিবাস ওঝা ও কাশীরাম দাস এঁদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ‍্য। পরবর্তীকালের কবি সম্মান প্রদর্শন করে লিখেছেন, 'হে কাশী, কবীশদলে তুমি পুণ‍্যবান'। স্থানীয় মুসলিম শাসকেরা অনেকেই হিন্দুদের মহাকাব‍্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাই সংখ‍্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে মান‍্যতা পাবার আশাতে তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের পণ্ডিত নিয়োগ করে রামায়ণ মহাভারত অনুবাদ করিয়েছেন।


 সাধারণ ভাবে বাঙালির উপর থাকের অংশ পাঠান ও মোগলযুগে শাসকের নেকনজরে থাকার আগ্রহে শাসকের ভাষা আরবি ফারসি পড়তে চেয়েছে। সংস্কৃতজ্ঞানের পাশাপাশি আরবি ফারসিতে দক্ষতা বাঙালির ছেলেকে রাজদরবারে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। শুধুমাত্র শাসকের মন যোগাতে আরবি ফারসি ভাষাচর্চাতেই বাঙালি নিজেকে সীমিত রাখে নি। শাসকের পছন্দের পোশাক আশাক নিজের গায়ে চাপিয়েছে। চোগা চাপকানে আচকানে শামলায় বাঙালি নতুন অবতারে আবির্ভূত হয়েছে। শাসকের ভাষা বাঙালির কলমে জায়গা পেয়ে গিয়েছে। কবি ভারতচন্দ্র রায় লিখেছেন অতএব লিখি ভাষা যাবনী মিশাল। বাংলা কাব‍্য সাহিত্যে ইসলামী শব্দ সবচেয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে কাজী নজরুল ইসলামের কলমে।


 চৈতন‍্যদেবের প্রভাবে তাঁর পুণ‍্যজীবন নিয়ে লিখতে আগ্রহী হয়েছেন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের একাংশ। বাংলা ভাষা, যা মূলতঃ দেশীয় শব্দে ভরপুর ছিল, সেখানে চৈতন‍্য অনুসারী পণ্ডিতদের প্রভাবে একটা নতুন রকমের পুনরুত্থান হয়। সংস্কৃত ভাষার শব্দ অবিকল আকারে নতুন করে বাংলা ভাষায় জায়গা করে নেয়। অথচ বাংলা ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার মৌলিক গঠনগত প্রভেদ আছে। সংস্কৃত কথাটার ভিতরে ঢুকলেই একটা কৃত্রিমতার ছাপ খুঁজে পাই। গোড়ায় যে বৈদিক বা ছান্দস ভাষা ছিল, প্রবহমানতার নিয়মে তা বদলে বদলে চলেছিল। যাজ্ঞবল্ক‍্য পাণিনি প্রমুখেরা তাকে শুদ্ধ করে তোলার মানসে নানাবিধ নিগড়ে বাঁধলেন। অথচ জীবন্ত ভাষা সত‍্যি সত‍্যি কোনোদিন বাঁধন মানে না। লোক মুখে বদলে যাবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তো থামল না। প্রাকৃত, অপভ্রংশ অপভ্রষ্ট অবিহটঠ হয়ে তা বঙ্গঅসমিয়া হয়ে উঠল। এর থেকে প্রত্নবাংলা। এই যে বদলে যাবার ঐতিহ্য, এই পথেই তদ্ভব শব্দ তৈরি। আর ছিল দেশীয় শব্দের পুঁজি। কোল ভীল সাঁওতালি অস্ট্রিক নিষাদগোষ্ঠীর ভাষা থেকে আসা শব্দ, আর দ্রাবিড় উৎস। এই তদ্ভব, দেশীয় আর অস্ট্রিক দ্রাবিড়, এই জিনিস নিয়ে সত্যিকারের বাংলা। তাতে পণ্ডিতরা মিশিয়ে ছিলেন তৎসম শব্দ।  আর পাঠান মোগলের প্রভাবে তাতে মিশল আরবি ফারসি তুর্কি ভাষার শব্দ। পর্তুগিজ দিনেমার ক্রমে ইংরেজি ভাষার শব্দ বাঙালির মনে জায়গা করে নিল।

 ভাষাচর্চার জন‍্য জরুরি ব‍্যাকরণের জ্ঞান। বাংলা ভাষায় প্রথম ব‍্যাকরণ লিখলেন মানোএল দা আসসুম্পসাঁও। তবে তা রোমান হরফে লিখিত। তারপর বাংলা ও ইংরেজি মিশিয়ে ব‍্যাকরণ লিখলেন নাথানিএল ব্রাসি হালেদ। উইলিয়াম কেরিও বাংলা ব‍্যাকরণ নিয়ে বই লিখেছেন। রাজা রামমোহন রায় লিখেছেন গৌড়ীয় ব‍্যাকরণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমেও বাংলা ব‍্যাকরণ ও শব্দ নিয়ে গভীর পড়াশুনার সাক্ষ‍্য নিয়ে গ্রন্থ লিখিত হয়েছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুকুমার সেন, রামেশ্বর শ' প্রমুখ বাংলাভাষার গতিপ্রকৃতির বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় ব্রতী হন।

বাঙালির চর্যাগাথা আর শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গিয়েছিল হারিয়ে। মহোমহাপাধ‍্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে পুঁথি খুঁজে বের করে হাজার বছরের বৌদ্ধ গান ও দোঁহা প্রকাশ করেন। ওই আমাদের চর্যাপদ বা চর্যাগাথা। কেউ বলেছেন চর্যাচর্যবিনিশ্চয়। কেউ বলেছেন আশ্চর্য চর্যাচয়। রাগ ও তালে গীত হত ওগুলি। সহজ ভাষায় চর্যাপদ হিসেবে পরিচয় পেল গানগুলি।   সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বিশ্লেষণ করে দেখান, ওর ভাষাটা বাংলা।  বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এক গোয়ালঘর থেকে আবিষ্কার করেন শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন। সেও গানের ব‍্যাপার স‍্যাপার। বাঙালির গলায় গান ছিল। নিম্নকোটির শ্রমজীবী  বাঙালিও কাজের কষ্ট লাঘব করতে গান গাইত। গান গাইতেন শাক্ত সাধক, বৈষ্ণব সাধক, গান গাইতেন রামায়ণী কথক, আউল বাউল সাঁই দরবেশ ফকির মিশকিন।

পুঁথিনির্ভর পাণ্ডিত্যের দূর দিয়ে লোকায়ত চর্চায় গান ছিল মনের ভাব প্রকাশের সহজ পথ। কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেন গান গেয়েছেন। গান গেয়েছেন লালন শাহ্ ফকির। অনেক পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন গীতিকার ও সুরকার হিসেবে বাংলা গানকে এক আশ্চর্য রকম উচ্চলোকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। 

বাঙালির সাহিত্য ছিল দেবদেবী নির্ভর। মঙ্গলকাব‍্যে তার পরিচয় আছে। বাঙালির জীবনে বিপর্যয়ের কোনো অভাব ছিল না।  বিশেষ করে পুববাংলা ছিল নদীলালিত আর উত্তর দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল জঙ্গল। সাপ বাঘ ও হিংস্র জন্তুর সাথে পাল্লা দিয়ে ছিল বর্গীর অত‍্যাচার, জমিদারের ঠ‍্যাঙাড়ে বাহিনী। মহৎ শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বাংলায় পাঠান ও মোগল আমলে প্রায় ছিলই না। তাই শাসনের নামে উৎপাত, লাগামছাড়া শোষণ, অপশাসন, আর বল্লালী বালাই ছিল বাঙালির জীবনে অভিশাপ। বাঙালি এর বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে পারত না জাত হারানোর ভয়ে।

ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রার্থনা ছাড়া ব‍্যক্তিত্বহীন বাঙালির উপায় থাকত না। এর মাঝে এক আশ্চর্য রকম চরিত্র মাথা তুলে দাঁড়াল। সাধু চন্দ্রধর। তাকে একাকী বহু নির্যাতন, লাঞ্ছনা ও অসম্মানের শিকার হতে হয়েছে। মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল কাব‍্যে সে সময়ের অস্থিরতা আর সুশাসনের অভাব টা যত্নশীল পাঠকের চোখ এড়াবে না। বাঙালি যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে জানত না। বিজ্ঞান চর্চার কথা জানত না সেকালের বাঙালি। কেবল হিংস্র করালবদনা দেবীর অহৈতুকী কৃপা আশা করে অসম্ভব সব স্বপ্ন দেখে গিয়েছে তারা। পরিশ্রম করে নয়, সভ‍্য মার্জিত ব‍্যবস্থায় নয়, দৈবী কৃপায় বাঙালি অর্থবান হতে চেয়েছে। এর ভিতরে চোরাস্রোতের মতো দৈবীমহিমা ক্ষুণ্ন হতেও লক্ষ্য করি। ভারতচন্দ্র রায়ের কলমে 'কুকথায় পঞ্চমুখ কণ্ঠভরা বিষ' বহুচর্চিত বহু আলোচিত। দেবতাকে মাটির মানুষের আদলে আঁকলেন তিনি। হরপার্বতীর দাম্পত্যকে আঁকলেন প্রাকৃত বাস্তবতার তুলি দিয়ে। কবি গাইলেন সবার উপর মানুষ সত‍্য, স্রষ্টা আছে বা নাই। অনেক পরে আধুনিক যুগে কবি কালিদাস রায় বলবেন, মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর।

 ইংরেজ শাসক প্রথম দিকে না চাইলেও একাংশের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের আগ্রহে, উদ‍্যোগে, আর বিত্তশালী ধনাঢ‍্য বাঙালির আগ্রহে রীতিমতো শিক্ষার আয়োজন হয়েছিল। উইলিয়াম কেরির নাম নেব সর্বাগ্রে। আর আলেকজান্ডার ডাফ, ড্রিংক ওয়াটার বেথুন, সিসিল বীডন প্রমুখ। অন‍্য ধারায় ছিলেন ডিরোজিও। ধর্মভাবনার বাইরের মানুষ। আর ডেভিড হেয়ার। তিনিও ধর্মের সংশ্রব রাখতেন না।  বাংলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাইলফলক হিসেবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, শ্রীরামপুর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, হিন্দু কলেজ, আর জেনারেল অ্যাসেম্বলির নাম আমায় করতে হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর মহাশয়ের প্রাণপাত পরিশ্রমে বাংলার গ্রামে গ্রামে সাধারণের জন‍্য সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক বিদ‍্যালয় তৈরি হয়। নারীশিক্ষার সূচনাও তাঁর হাতে।

 ইউরোপীয় মনীষীদের উদ‍্যোগে ও আলোকপ্রাপ্ত বাঙালির উৎসাহে বাংলায় উচ্চতর জ্ঞান বিজ্ঞানচর্চার আয়োজন হয়েছিল। উইলিয়াম জোন্স এর এশিয়াটিক সোসাইটি, উইলিয়াম কেরির উদ‍্যোগে হর্টিকালচার সোসাইটি এর অন‍্যতম। বটানিক‍্যাল সোসাইটি ও যাদুঘরও এইরকম যৌথ উৎসাহের ফসল। কলকাতায় বসেছিল ব্রিটিশ সরকারের সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে বাঙালি বিচারপতি ও বাঙালি ব‍্যারিস্টারের অভাব ছিল না।  বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি ছাত্রাবস্থাতেই ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে প্রগাঢ় দখল রাখতেন। পরে কবিধর্মের প্রেরণায় পাশ্চাত্য সাহিত্যসাগর মন্থন করার লক্ষ্যে জীবনপণ করেন। তাঁর সেই অসামান্য চেষ্টার ফসল মেঘনাদ বধ কাব‍্য, বীরাঙ্গনা আর ব্রজাঙ্গনা কাব‍্য আর শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী নাটক। এরপর বাঙালির ঘরে ঘরে পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর গড়ে ওঠে।

 শ্রীরামপুর মিশনের কর্ণধার হিসাবে বাংলাভাষায় লেখা পুরাতনী সাহিত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে উইলিয়াম কেরি সক্রিয় ছিলেন। ইংরেজ শাসক তাঁর এই প্রচেষ্টার আনুকূল্য করেন নি। ইংরেজ শাসনের আওতার বাইরে ডেনমার্কের শাসনাধীন শ্রীরামপুরে তিনি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। মার্শম‍্যান আর ওয়াটসন, কেরির এই দুই সঙ্গী ও ছিলেন কেরির মনের মতো। প্রাচ‍্যভাষাবিদ লিপিবিশারদ পণ্ডিত চার্লস উইলকিনস বাংলা ভাষার বিস্তর পুঁথি বিশ্লেষণ করে বাংলা হরফের মান‍্যরূপ তৈরি করেন। পঞ্চানন কর্মকার ও জামাতা মনোহর কর্মকার, এই দুই কারিগর তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে লোহার ছাঁচে হরফ বানালে বাংলাভাষায় রচিত বইগুলি মুদ্রিত হয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে গেল। ক্রমে সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্র পত্রিকা গড়ে উঠল। সেখানে মতপ্রকাশ মতপ্রচারের পাশাপাশি বিতর্ক সৃষ্টির পথে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা বিকশিত হল বঙ্গভূমিতে। বাংলা ভাষা সাহিত্যের ইতিহাস ছাঁচ ভাঙার ইতিহাস, বাঁকবদলের রূপকথা।


Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.