![]() |
করোনার দিনে পুরোনো কথা : মৃদুল শ্রীমানী |
আরে যাচ্চলে। অক্সফোর্ড ফেরতের কীর্তি দেখে আমি অবাক হই নি। ডাক্তারের বারণ মানবেন কেন তিনি? নবান্ন দেখতে গিয়েছিলেন পণ্ডিত প্রবর। নবান্ন তো দেখতে যাবার জায়গা, ঘুরতে যাবার জায়গাই বটে। বিজন ভট্টাচার্য মহাশয়ের কালজয়ী সাড়া জাগানো নাটক নবান্ন। নাম শুনলেই লোম খাড়া হয়ে যায়। তা করোনা নিয়েই অমন পবিত্র কাজটা করে এলেন মহাশয়। এ হেন কাজ নূতন নয়। ক্ষমতার অলিন্দে থাকলে হৃদযন্ত্রের অলিন্দে বেশি রক্ত চলে। তখন জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্ত ভাবনাহীন। ডাক্তারের বারণ? ডাক্তার কি বোঝে ক্ষমতার? যে জাগিল তার চিত্ত আজিকে ভীম আনন্দে জেগেছে।
করোনার দিনে তাহলে দুটি পুরোনো কথা নিবেদন করি।
দেবলীনা হেমব্রমকে মনে করতে পারছি। লিফটে ওঠার সময় গার্ডের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিটি দেবলীনার আইডেন্টিটি কার্ড দেখতে চেয়েছিলেন। অপরাধ করেছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীর আইডেন্টিটি কার্ড দেখতে চাওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অপরাধ বৈ কি! এহেন অপরাধের শাস্তি হাতে হাতে দিয়েছিলেন দেবলীনা। ঠাঁটিয়ে এক চড় কষিয়ে ছিলেন লিফটের রক্ষীকে। বেশ করেছিলেন।
সুচেতনাকে মনে পড়ে। ভারি মিষ্টি নাম। শিহরণ জাগানিয়া নাম। না, বাবা যদি মুখ্যমন্ত্রী হয়, তাহলে কন্যার অধিকার থাকে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরক্ষা দফতরের দায়িত্বশীল কর্মী অফিসারদের চাকর বাকর মনে করা। খুব স্বাভাবিক। সুচেতনাকে ধন্যবাদ। বাবা সরকারি ক্ষমতায় থাকলে চেহারাটা কেমন দেখানো উচিত, আপনি জানতেন। জানার সুযোগ দিতেন।
রচপাল সিংহ ছিলেন অসাধারণ মানুষ। এমন মানুষের পদধূলি পাওয়া সৌভাগ্যের। তো রচপাল সিংহের ছবিটি দেখে ছিলাম তারিয়ে তারিয়ে। সিংহ পুরুষ তিনি। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীকে দিয়ে জুতোর ফিতা বাঁধাচ্ছিলেন। বেশ করছিলেন। গণতান্ত্রিক দেশে মন্ত্রী মহোদয়ের জুতোর ফিতা বাঁধতে পারা পরম সৌভাগ্য। পুলিশ কর্মীকে দিয়ে জুতার ফিতা বাঁধানো মন্ত্রীর তরফে অহৈতুকী করুণা বিতরণ।
"হল্লাবোল" নাটক করতে করতে মরতে হল সফদর হাশমিকে। আঙুল উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। অমন হয়। হয়েই থাকে। তারপর হাশমির দল কতবার কংগ্রেসের সাথেই ভোটের বোঝাপড়া করেছে, তার আর হিসেব নেই। হাশমি খুন হয়েছে বলে দলের হীরে মাণিক রাজ্যসভার সাংসদ হবে না? হাশমি খুন হয়েছে তো হয়েছে টা কি? নাটক এক বেলার, ভোটের স্বার্থ চিরকালের।
তাপস পাল স্বর্গে গেছেন। রেখে গেছেন দাদার কীর্তি। দাদা, থুড়ি সাংসদ হিসেবে তিনি বলেছিলেন বিরোধী দলের লোকজনের বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে দেবেন। লোকজন সেটার ভুল ব্যাখ্যা করে বললো তাপস নাকি বিরোধী দলের মানুষের মা বোনকে ধর্ষণ করানোর ইঙ্গিত করেছেন। কি অন্যায়, কি অন্যায়। "ছেলে ঢুকিয়ে দেব", এর মানে ধর্ষণের থ্রেট, এটা কোন্ অভিধানে আছে? ছেলেরা মোয়া, নাড়ু বা পেয়ারা চাইতেও তো আসতে পারে! তাপস আপনি আরো কিছু দিন বেঁচে থেকে আমাদেরকে আরো আলো দিতে পারতেন! আমি আপনাকে মিস করি।
মাথার কাজ অকসিজেন কিভাবে করে, তা চমৎকার ভাবে দেখিয়েছেন অনুব্রত বাবু। অকসিজেন এর এই আচরণ ল্যাভয়সিয়ে বা হেনরি ক্যাভেনডিশ কি আঁচ করতে পারতেন। অনুব্রত বাবু, অকসিজেন বিষয়ে আমাদের জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য আপনাকে শতকোটি প্রণিপাত।
বেড টি খেলে কত যে উপকার হয়, তা বুঝি য়ে দিয়েছেন একসময়ের সাংসদ শ্রীমতি ভর্মা। অ, ওই নামে ওঁকে চেনা যাচ্ছে না বুঝি! তাহলে ওঁর মায়ের মূর্তিটির হদিশ দিই? উত্তমকুমার এর সাথে হেলমেট বিহীন মাথায় এই পথ যদি...
বেড টি এর এই গুণগান আসলে ভঙ্গুর চা শিল্পকে জোরদার করার বার্তা। সাত কোটি মানুষ যদি বেড টি না পেলে বিছানা ছাড়ব না পণ করে, তাহলে চায়ের বিক্রি কতগুণ বাড়তে পারে, ভাবুন। আরে মশাই, একটা জিনিসের ভাল দিকটা দেখতে শিখুন।
মনে পড়ে সত্যেন্দ্র দুবেকে। ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন কাকে? না অটলবিহারী বাজপেয়ী জির দপ্তরে। বাজপেয়ী কবি মানুষ। ভারি সুবক্তা। কিন্তু, তাতে ওঁর অফিস থেকে গোপন চিঠিটা লিক হয়ে যাবে না, এই গ্যারান্টি ছিল। কবি বলেই দিয়েছেন, গোপন কথাটি রবে না গোপন...
সত্যেন্দ্র দুবে খুন হলেন। ভাড়াটে খুনি শাস্তি পেল। পর্দার পিছনে নাটের গুরু কে তা আর গণতান্ত্রিক দেশ জানতে পেল না। সত্য যে কঠিন।
সত্য খুন হয়ে গিয়েছে।
দায়বদ্ধতা খুন হয়ে গিয়েছে।
ন্যায়ের বাক্য খুন হয়ে গিয়েছে।
হ্যাঁ মশাই হ্যাঁ।
অনেক দিন আগেই।
পাওয়ার করাপ্টস। অ্যাবসলিউট পাওয়ার করাপ্টস অ্যাবসলিউটলি।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন