মুসলমানীর প্রেম, একটি রবীন্দ্র গল্পপাঠের অভিজ্ঞতা :মৃদুল শ্রীমানী

মুসলমানীর প্রেম, একটি রবীন্দ্র গল্পপাঠের অভিজ্ঞতা :মৃদুল শ্রীমানী
মুসলমানীর প্রেম, একটি রবীন্দ্র গল্পপাঠের অভিজ্ঞতা :মৃদুল শ্রীমানী

রবীন্দ্রনাথের 'দুরাশা' নামে গল্পটি বেশ মনে আছে। দার্জিলিঙে ক্যালকাটা রোডের ধারে এক মুসলমান মেয়ের সাথে দেৎখা হয় গল্পকথকের। সে মেয়ে এক মুসলমান ভুস্বামীর কন্যা । অন্দর মহল থেকে সে কখনো দেখেছে তাদের বাড়ির হিন্দু প্রতিরক্ষা কর্মীটিকে ।  হিন্দু লোকটির স্নান, আর নিয়ম পূজা পাঠ সব মিলে তার মনে এক গভীর মায়াময় সম্ভ্রম তৈরি করে দিয়েছিল। মুসলিম মেয়েটির কল্পনার চোখে হিন্দু সিপাহীটি হয়ে ওঠে রক্তমাংসের দেবতা। তারপর বাধল সিপাহী বিদ্রোহ । হিন্দু সিপাহীটি জড়িয়ে পড়লো বিদ্রোহে । তার প্রতি ভেতরের শ্রদ্ধা ভালবাসার টানে ঘর ছাড়লো মুসলিম মেয়ে । মেয়ে সিপাহীটিকে জানে আপন করে। সিপাহীটি তাকে চেনে না। শুধু তার ব্রাহ্মণ্য আর নিয়মনিষ্ঠাকে অতিলৌকিক আভায় রাঙিয়ে একতরফা প্রেমে পথে নামে মেয়ে। যুদ্ধে আহত হয়ে হিন্দু সিপাহী যখন তৃষ্ণায় কাতর , মেয়ে তখন তাকে পরম ভালবাসায় বিপদ মাথায় করে জল এনে দেয়। ওই রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্যেও হিন্দুয়ানি ছাড়ে নি সিপাহী । মুসলিম মেয়ে কেন জল খাইয়ে তার জাত মারবে? মেয়ের মাথায় কঠিন শক্ত হাতের আরো কঠিন লোহার বালা দিয়ে আঘাত করে সিপাহী । মূর্ছিত হয়ে পড়ে থাকে মেয়ে। কিন্তু হিন্দু নিয়মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ তরুণের প্রতি আস্থা আরো বেড়ে যায় তার। বাপ রে! হিন্দুয়ানি সোজা জিনিস ! কতো জন্মের  পুণ্যফলে তা অর্জিত!
মেয়ে আবার খুঁজে চলে তার অন্তরের দেবতাকে । মাথায় পাওয়া কঠিন লোহার আঘাতকে সে দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে । খুঁজে একদিন পায়। দূর থেকে দেখতে পায় তার রক্ত মাংসের দেবতাটিকে।
তার পর চূড়ান্ত হতাশা। সে হতাশার কথাই ব্যক্ত করেছে মুসলিম মেয়ে গল্পকথকের কাছে।
পরম নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ সমস্ত গরিমা বিসর্জন দিয়ে ভুটিয়া বস্তিতে সংসার পেতে ভুটিয়া স্ত্রী পুত্র সহযোগে ভুট্টা ক্ষেতে ফসল তুলছে । গল্পের নাম দুরাশা । যে হিন্দু ব্রাহ্মণ্যকে সে পরম ও চরম ভেবে এসেছে, তার এই বাস্তবতা দেখে মুসলমান মেয়ের হৃদয় গুঁড়িয়ে গিয়েছে ।

ভেতরে আমার ছটফট করছে গল্পটি ।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.