মিলি আর লিলি : মৃদুল শ্রীমানী

মিলি আর লিলি : মৃদুল শ্রীমানী
মিলি আর লিলি : মৃদুল শ্রীমানী

(কাল্পনিক কথোপকথন)

ও লিলি, শুনছ, একজন বাঙালি নাকি নোবেল প্রাইজ পেয়েছে।

ও মা, আমিও তো তোমাকে সেই কথাই বলতে যাচ্ছি। যে পেয়েছে, সে নাকি ব‍্যানার্জি। জানো তো, বিয়ের আগে আমার মায়ের পদবী ছিল ব‍্যানার্জি। আমার মামা বাড়ির পদবী ব‍্যানার্জি।

অ। তা এখন তো তুমি দাস লেখো, না কি?

তা দাস লিখি। পালটে নিতে কতক্ষণ? আমার ছেলে বলছিল, মা আমার আর তোমার পদবীটা ব‍্যানার্জি করে নাও।

 তা কি করে হবে? তোমার বাবার তো পদবীটা ব‍্যানার্জি ছিল না। তোমার বাপের বাড়ি সদ্গোপ না?

না, আমার মায়ের বাপের বাড়ির পদবীটাই নিয়ে নেব। জানো আমার ছেলে এখনই বলছে, মা, আমি নোবেল প্রাইজ নিয়েই ছাড়ব।

তা, তোমার ছেলে কোন্ ক্লাসে পড়ে?

এই তো সেভেনে উঠেছে। খুব চালাক চতুর জানো। পুজোর সময় ওর বাবার সাথে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। তো একটা প‍্যাণ্ডেলে মহারাজ এসেছিল পুজো উদ্বোধন করতে। আমার ছেলে একেবারে মহারাজের কাছটিতে গিয়ে সেলফি তুলে নিয়েছে। আমার বর বলছে, স্মার্টফোন কেনা আমার সার্থক। একেবারে মহারাজের সঙ্গে ছবি। ভাবা যায়?


কেন যাবে না? আমাদের পাড়ার একটা ব‌উ, আমাদের বাড়ির ঠিক তিনখানা বাড়ির পরে থাকে, সে তো মহারাজার টক শো তে গিয়েছিল। ও তো একেবারে মহারাজের কাছে গিয়ে বলেছে দাদা তুমিও গাঙ্গুলি আমিও গাঙ্গুলি।

এখন দেখবে মায়েরা সব ছেলেদের নাম রাখবে অভিজিৎ।

অভিজিৎ নামটা তো খুবই ভালো। জিৎ টাই আসল। যে কোনো নামের পিছনে জিৎ লাগিয়ে দাও। কেল্লা ফতে।

লোকটা আমাদের প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ত। আমার খুড়শ্বশুর বলছিলেন, তাঁর শালার দুই ছেলেও প্রেসিতে পড়েছে। দুটোই একেবারে যাকে বলে জুয়েল।

তা, শুধুমাত্র প্রেসি কেন, ওই সাউথ পয়েন্টের নামটা বাদ দাও কেন? আমার জ‍্যাঠশ্বশুরের কাছে শুনেছি ওঁর ছোট জামাই সাউথ পয়েন্টের।

দিদি, লোকটা কি নিয়ে নোবেল প্রাইজ পেল?

কি জানি, সবাই তো বলছে অমর্ত্য সেন যা নিয়ে নোবেল পেয়েছে, এই লোকটাও ওই সব নিয়ে পেয়েছে।

আমার বর বলছিল, অর্থনীতি। মানে টাকা পয়সার হিসেব কিতাবের ব‍্যাপার। আমি আবার অতো হিসেব বুঝতে পারি না। যা টাকা দেবে যতক্ষণ না সব খরচ করে ফেলব, হাত সুড়সুড় করবে।

ও তাই, আমার ছেলেটা আবার টাকা পয়সা খুব বোঝে। এবার পুজোয় সবাইকে বলেছে, তোমরা যদি দাও টাকা দেবে। আমি নিজে পছন্দ করে কিনব।

ওম্মা, খুব বুদ্ধিমান ছেলে তো?

বুদ্ধিমান বলে বুদ্ধিমান। একেবারে জিনিস। অন্নপ্রাশনের দিন‌ই আমরা ধরে ফেলেছি। ব‌ই নয়, দোয়াত কলম নয়, খোকা আমার খামচু মেরে টাকার তোড়া ধরল। টাকা থাকলে সব হবে , তাই না দিদি? আচ্ছা, চালাক চতুর বাচ্চাদের লোকজন জিনিস বলে কেন?

আরে, তুমি এটা জানো না, জিনিস মানে বুদ্ধিমান।

তাহলে অভিজিৎ টা একটা জিনিস বলো?

জিনিস বলে জিনিস, এবার সবাই দ‍্যাখো, বাঙালি ফেলনা নয়।

আচ্ছা, ওর ব‌উটাকেও প্রাইজ দিয়েছে না?

হ‍্যাঁ, তাইতো শুনছি।

ব‌উটা না কি বাঙালি নয়। বিদেশে গেলেই জানো তো দিদি ওই। ভালোমানুষ পেলেই পাকড়াও করে নেবে। অমর্ত্য সেনের‌ও না কি এখনকার ব‌উ বাঙালি নয়।

আগের ব‌উটা কিন্তু বাঙালি ছিল। কি সব লিখত টিখত।

আমার ছেলে যখন বলল, মা আমিও বিদেশে গিয়ে নোবেল নিয়ে আসব, আমার ভেতর ধক করে উঠল। বললাম, তা যাস, তবে যেন মেম বিয়ে করে আনিস নি। আমার মায়ের বাপের বাড়ি খাঁটি বামুন। আচ্ছা, সেনরা বদ‍্যি হয়, তাই না দিদি?

অনেকে ওদের বদ‍্যি বামুন বলে। আমার কি মনে হয় জানো তো, চন্দ্রযান টা ঠিক মতো কাজ করছে না তো; তাই নোবেলটা দিয়ে একটা খুশি করার চেষ্টা।

তাই আবার হয় না কি? কত মেজে ঘষে তবে না একটা নোবেল? আমার ছেলেকে বলেছি, আর কিছু করিস না করিস, নম্বরটা ভালো করে তুলে যা।

হ‍্যাঁ, নম্বর। নম্বর পেলে নাম বাড়ে।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.