![]() |
মৃদুল শ্রীমানী |
শাসক কোনো অন্যায় করতে পারেন না। অন্যায় আর ভুলচুক অবিচার যা যেটুকু হয়, সব দোষ পারিষদদের। শাসক কোনো রকম প্রশ্নের ঊর্দ্ধে। শাসক ঈশ্বরেরই সমতুল। দিল্লীশ্বরোবা জগদীশ্বরোবা। তাই নাগরিকদের ভরসা যোগাতে শাসককে বলো। বাদশা আকবর একটি ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন। অভিযোগকারী ঘণ্টা বাজিয়ে শাসককে ডেকে তুলবেন। শাহেনশা হারুণ অল রশিদ রাত বাড়লে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়ে অপরাধী ধরতেন। ঔরঙ্গজেব রাজকোষ থেকে একটি পয়সা নিজের ভোগে লাগাতেন না। তিনি নিজের খাই খরচ তুলতে টুপি সেলাই করতেন আর কোরাণ নকল করতেন। বাদশা আর বেগমজান আর তাদের ছানাপোনাদের তিনবেলা খাবারের যোগাড় করতে গেলে কয়খানি টুপি সেলাই করতে হবে, সে প্রশ্ন অবশ্যই করবেন না।
সেই লোকটা ভারি মজা করেছিল। বাদশাকে বলো প্রোগ্রামে ঢুকে পড়ল। বাদশা খুশি হয়ে ইনাম দিতে চাইলে লোকটি দশ ঘা চাবুক খেতে চাইল। সকলের সাথে বাদশা এমন অদ্ভুত আবদার শুনে হতবাক। নাছোড় লোকটি চাবুকের ঘা উপহার না নিয়ে ছাড়বেই না। অগত্যা চাবুকের দশ ঘা মঞ্জুর করতে হল। গুণে গুণে পাঁচ ঘা চাবুক নিঃশব্দে হজম করে লোকটি বলল তার এই উপহারের একজন ভাগীদার আছেন। তিনি দরবার হলের দ্বাররক্ষী। বাদশার কাছে যে ইনাম মিলবে তার অর্ধেক তাঁকে দিতে হবে দ্বাররক্ষীর চাপানো এই শর্তে লোকটি বাদশাকে বলো প্রোগ্রামে ঢুকতে পেয়েছে। সেই সুবাদে বাকি পাঁচ ঘা চাবুক দ্বাররক্ষী মহোদয়ের প্রাপ্য।
শাসককে বলো প্রোগ্রামে সফল না হয়ে লেডি গোডিভা দিগবসনা হয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াবেন ঘোষণা করেন। শাসনকর্তা গরিবের উপর সাংঘাতিক হারে কর চাপিয়ে দেওয়ায় রানি স্বয়ং প্রতিবাদে মাতলেন। শাসক আর কি করেন, শহরময় ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিলেন যে জন ঘোড়ার পিঠে বসনহীনা রানিকে দেখবে, তারই কঠোর শাস্তি হবে। শহরশুদ্ধ মানুষ শাসকের তর্জনী সংকেতে দরজা জানালা সিল করে বসে রইল। কেবল এক হতভাগা অলপ্পেয়ে টম জানালার ফাঁক দিয়ে লেডি গোডিভা কে ঘোড়ার পিঠে আকাশবসনা দেখে নিয়েছিল। সাথে সাথে বজ্রপাতে টমের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়। শাসক ভাগ্যবান। ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়।
আর ছিল শাসক ক্যানিউট। প্রজারা সবাই সেই শাসককে ভয় পেত। সবাই ভয় পেতে পেতে শাসক ক্যানিউট বিশ্বাস করে ফেলল যে, সে যা বলবে, তাই সবাই মানবে। শাসক ক্যানিউট আকাশচুম্বী অহমিকার বশে প্রাকৃতিক শক্তিকেও নিজের অনুগত ঠাউরালেন। তারপর সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রতি নির্দেশ দিলেন থেমে থাক। সমুদ্র শুনল না। পাথুরে তটে একটির পর একটি ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকল। মানুষের শুদ্ধ চিন্তার মতোন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন