![]() |
গোবিন্দ ধর |
রাতাছড়া উচ্চরত বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠ নেওয়ার সময় ক্লাসের খাতায় আঁকিবুঁকিতে ভরিয়ে তুলতেন গোবিন্দ ধর। এতে স্যাররা অসন্তুষ্ট হয়ে বকাবাদ্য করলেও তিনি খাতায় এই আঁকাবুঁকি বাদ দিতে পারেননি। বাংলা পড়াতেন উমেশচন্দ্র দে। ছাত্র অবস্থায় নীরিহ প্রকৃতির ছিলেন গোবিন্দ ধর।কথাও বলতেন মৃদু স্বরে। যা এখনো তাঁর স্বভাব। সারাক্ষণ ক্লাসে বসে থাকতেন। ক্লাস শেষে বাসায়। এই তাঁর বিদ্যালয়ের জীবন।বন্ধু বলতে ইরেশ দেববাথ ছিলো। তাও দ্বিতীয় শ্রেণীতে সে মারা গেলে গোবিন্দ ধর মর্মাহত হন।সারা জীবন তাঁর জীবনে এই ঘটনা রেখাপাত করে। তারপর আব্দুল মতিন ছিলো বন্ধু। যদিও মতিন এক ক্লাস নিচে পড়তো। ১৯৯০ সালে আাবার বাবার মৃত্যুর কারণে তিনি লেখাপড়া আর তেমন চালাতে পারেননি।পরে দ্বাদশমান অব্দি তিনি পড়েন।
রাতাছড়ার দিনগুলো
রাতাছড়ার দিনগুলোতেও যাত্রা ও সাংস্কৃতিক জগতে অন্যমাত্রা আনেন তিনি।এতে কোন কোন যাত্রা শিল্পীও রুষ্ট হন।ঢিল পাটকেলও ছাড়েন।তারপর আবার ক্ষমাও চান।কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থাও আনেন স্রোতস্বিনী সাংস্কৃতিক সংস্থার কাজকর্মের দিনগুলোতে।কিন্ত শেষ মূহুর্তে তাঁর স্বচ্ছতা ও জেদের নিকট তিনি জিতে যান।
কাজ করতে করতে ভালোবাসা ও ছোবল
------------------------------------------------
বারবার রক্তাক্ত হতে হয়েছে। কোন কোন লেখকের বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে কিংবা প্রকাশের পর লেখকের মত পরিবর্তনের জন্য।তাও তরুণদের বই প্রকাশ করে দিয়ে।অথচ তিনি চান সারা বাংলাসাহিত্যে তরুণদের দাপাদাপি বাড়ুক।তাঁর লক্ষ্যে তিনি সফলও।
রক্তাক্ত হতে হয়েছে প্রবীনদের হিংসের নিকট।তাঁকে জড়িয়ে নানা স্ক্যান্ডেল। কখন তৃতীয় বিয়ে কিংবা কখন কারো রুশানলে পড়তে হয়েছে গভীর গোপন বলা যাবে না এমন ঘটনাতেও তাঁকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।যদিও যদিও পদ্মশ্রী মজুমদারকে বিয়ের সময় কোন অপপ্রচার হলো না।অথচ যা নয় তা নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে নানান স্ক্যাণ্ডেল তাঁকে আহত করতো।
ত্রিপুরার একজন আঁতেল কবি যিনি নিজেকে রাজ্যের হিট তালিকায় স্বঘোষিত দাবী করেনএক নম্বর কবি বলে তাঁর একটি বইয়ে গোবিন্দ ধরকে নিয়ে রসিয়ে মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে চারটি গদ্য লিখে একটি বই প্রকাশ করেও তাঁকে রক্তাক্ত করার চেষ্টা করা হয়।কিন্ত গোবিন্দ ধর লক্ষ্যে অবিচল।
কুমারঘাটের দিনগুলো
--------------------------------
২০১২ বারো সালে একদল অশৈল্পিক স্বঘোষিত কবি ও শিল্পীরা তাঁকে নিয়ে হিউমার তুলেন তিনি তৃতীয় বিবাহে আবদ্ধ বলে।তাঁর কর্মস্থলেও তাঁর বিরুদ্ধে ছদ্মনামে কেউ একজন এই অভিযোগ দায়ের করেন।তথাপি তাঁকে দমানো যায়নি।মিথ্যা প্রচার করা হয় তাঁর চরিত্র নিয়ে।সে সময় তাঁর পরিবার এগিয়ে এসে এই স্ক্যান্ডেলকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেন।
রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরেও কউ কেউ তাঁর উপর নানা কুৎসা গালগল্প ছাড়েন।কিন্তু শেষ অব্দি তাঁর দৃঢ় সংকল্প স্বচ্ছতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর নিরলশ যুদ্ধে তিনি সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর।এতেই বারবার তাঁকে বিদ্ধ করতে চেয়েছেন বিরুদ্ধ মতাদর্শিরা।কিন্তু তিনি দমবার নয়।
তিনি অবিচল।লক্ষ স্থির করা একজন অর্জুন।
পারিবারিক সহযোগিতা
---------------------------------
গোবিন্দ ধরকে তাঁর পরিবার সব সময় উৎসাহ দিয়ে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন।করেন।এতে তিনি অনেকটা সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছেন।
লিটল ম্যাগাজিন করতে দুধেল গাভীও বিক্রি করতে হয়েছে তাঁর।পদ্মশ্রী ও সুমিতার গয়না বিক্রি করেও তিনি স্রোতকে এগিয়ে নিয়ে যান।এতে সর্বদা হাতের বালা,কানের দোল,গলার হার খুলে দিতো তাঁর পরিবার। কাজকে সব সময় তাঁর পরিবার সহযোগিতা করেছেন।কখনও মলিন করেননি মুখ।
সন্তানের লেখাপড়ার খরচেও টান পড়েছে বারবার।
নিজের সঠিক চিকিৎসা না করিয়েও তিনি বই প্রকাশ করেছেন।লোনের টাকায় ঘর না করে তিনি বই প্রকাশ করেছেন।
এতে তিনি হয়তো এলিট সমাজের টেটাস মেন্টেন করতে পারেননি কিন্ত সাহিত্য জগতে তাঁর অবদানের জায়গা করে নিয়েছেন।
চাল কিনতে বাজার না করে তিনি তাঁর প্রিয় বইটি কিনে ঘরে এসেছেন।এতে অনেক দিন চালের অভাবে ভাতের হাঁড়ি চাপেনি চুলোয়।তথাপি তাঁর পরিবার থেকে কখনওই কটু কথা শুনতে হয়নি।
দিনমজুর থেকে প্রকাশক
------------------------------------
বাবাকে সহযোগিতা করতে গিয়ে দিনমজুর খেটেছেন তিনি।
তাঁর ছোটবেলা হাজিরা কাম করেও বাবাকে সহযোগিতা করতেন তিনি।তৎকালিন সময়ে মাটি কাটা,কংক্রিট করা,রাস্তার কাজ,মেরামত, সলিং থেকে শুরু করে সব কাজই করতেন।অনেক দিন ভাত জুটতো না।তখন ১০টাকা রোজে সারাদিন খাটোনি কাটতে হয় তাঁকে।
দুদিন তিন দিন ভাত না খেয়ে কাজ করেও টাকা রোজগার করে চাল কিনে আনতেন।তাঁর বাবাকে সাহায্য করতেন।
কৃষিকাজ
--------------
কৃষিকাজেও গোবিন্দ ধর নিরলস পরিশ্রম করতে পারেন।চাষ করে ধান সবজী করেন।সিজনের সব সবজী তাদের পরিবারে হতো।বাড়িতে লেগে থাকতো নানান ফলের গাছ।কুল,আতা,আম,জাম,গয়াম,কামরাঙা, পেঁপে,ডালিম বাড়ির শোভা ছিলো।নানান ধান চাষ হতো।বিন্নি থেকে গন্ধ চাল সবই চাষ হতো।
রাতাছড়ায় মানুষের ভালোবাসা
--------------------------------------------
রাতাছড়া গ্রামের ছোট বড় সকলের নিকট তিনি ছিলেন আদর্শ।আশপাশের চার গ্রামের সকল লোকজন তাঁকে স্নেহ করতেন।তিনি ছিলেন মানুষের প্রিয়জন।
তবুও তাঁর জীবনের চড়াই উৎরাই তাঁকে বারবার গভীর খাদে নিয়ে গিয়ে আবসর টেনে তুলেছে সাফল্যের সিঁড়িতে।
আজকের তিনি শুধু কবি নন।তিনি কবি।তিনি শিক্ষক। তিনি বই পত্র সংগ্রাহক। তিনি সম্পাদক।তিনি সংগঠক।সর্বপরি একজন হৃদয়বান দরদী মানুষ।
সংবাদ পত্র হকার
------------------------
রাতাছড়ায় তিনি কিছুদিন রাজ্য বহি:রাজ্যের সংবাদ পত্র বিক্রিও করেন।এতে কিছু আয় হয়।তারপর নিয়মিত পত্রিকা রাতাছড়ায় পৌঁছানো ছিলো খুবই কষ্টসাধ্য তাই বছর পাঁচেক এই পেশা চালিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হন তিনি।
ছাপাছাপি
-------------
লিটল ম্যাগাজিন করতে গিয়ে লিনোগ্রাফি,লেটার প্রেসের পর পরই স্কীন প্রিন্টিং আসায় দ্রুত লেটার প্রেস বন্ধ হতে শুরু করে।তখন রাতাছড়ায় তিনিই প্রথম প্রিন্টিং শুরু করেন।তাঁর প্রেস গ্রাফিপ্রিন্ট।তা থেকে অনেকগুলো কাগজ প্রকাশিত হয়।স্রোত,স্রোতস্বিনী ও কুসুম ছাপা হয় কয়েকটি সংখ্যা। তারপরেই অপসেট আসে।তখন তাও বন্ধ করেন তিনি।
সম্পাদনা
--------------
স্রোত, স্রোতস্বিনী দিয়ে সম্পাদনায় হাতে কড়ি।তারপর কবিতার কাগজ কবিতাঘর।শিশুসাহিত্যের কাগজ কুসুম সম্পাদনা করেন।তারপর বইবাড়ি,অন্যপাঠ,উৎসব সমাচারসহ অসংখ্য কাগজের তিনি সম্পাদনা করেন।স্রোত পরিবার থেকে এখন বছরে আট থেকে ১০টি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়।
সংগ্রাহক গোবিন্দ ধর
------------------------------
এক বইয়ের পাঠক সম্পর্কে সাবধান ---হুমায়ুন আজাদ
লিটল ম্যাগাজিনকে কাল্ট বলবো, নাকি প্যশন? সেই গণতন্ত্র যে কারোর কথা মানেনা, আপোষহীন, স্বতন্ত্রভাবাদর্শে কমার্শিয়াল চিন্তার বিপরীতে এক মুক্ত মঞ্চ। লিটল ম্যাগাজিনের লেখাগুলো আমাদের আদর্শ শেখায় না,বরং জীবনকে তুলে ধরে, যা যাপনের অর্থ বুঝায়। লিটল কেন বলি? কারণ এখানে যেসব সম্পাদকেরা কাজ করেন যাঁরা খুঁজে আনেন সেসব লেখক, যাঁদের কেউ চেনে না, সেইসব বিষয় যা নিয়ে কাজ হয়নি। বিজ্ঞাপনের সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে সরে নিজের পকেট খালি করে পত্রিকা চালান লিটল ম্যাগাজিন কর্মীরা। সাহিত্য চর্চার সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনজীবনকে ঘনিষ্ঠ ভাবে জানার সুযোগ করে দেয় লিটল ম্যাগাজিন। লিটল ম্যাগাজিন এর হাত ধরেই সাহিত্যে আধুনিকতার আবির্ভাব ঘটেছে। সাহিত্যে যত ধরণের আন্দোলন হয়েছে, যে আন্দোলন কে বলা যায় সাহিত্যের প্রাণশক্তি, তা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের মাধ্যমে।
১৯৯৫ সাল থেকে সেই সাহিত্য আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে আছেন আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা রাজ্যের, যিনি আমাদের কাছে কবি, কথাশ্রমিক,প্রকাশক হিসেবে পরিচিত গোবিন্দ ধর। কিন্তু আজ আমরা এই শব্দ চাষির অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করবো--- " উত্তর-পূর্ব লিটলম্যাগ সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের" সংগ্রহক গোবিন্দ ধর হিসেবে। উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন বইয়ের সাথে অকৃত্রিম ভালোবাসা। সম্ভবত বাবার বই প্রীতি ও পাঠ অভ্যাস গবেষক গোবিন্দ ধরকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর পিছপা দিতে হয় নি। ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের তিনি পুরাধা সৈনিক। যার অক্লান্ত পরিশ্রম ও কর্মপ্রতিভার দ্বারা এক মহতী উদ্যোগের দ্বারা প্রকাশ পায় ১০ জুন ২০১৮ তারিখে ঊনিশটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের নিয়ে যা " ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড "। গোবিন্দ ধর শুধু কবি,প্রাবন্ধিক নন তার মধ্যে রয়েছে সাহিত্য গবেষণার দারুণ স্পৃহা। যার ফলস্বরূপ লিটল ম্যাগ আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে সাহিত্যে সুপ্ত থাকা অনুরাগ সাহিত্য বেলাভূমিতে বহিঃপ্রকাশ করেছেন নিজ হাতে। ত্রিপুরা থেকে শুরু করে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা সুদূর বাংলাদেশেও চালিয়ে যাচ্ছেন এই মিলন।
শব্দ শ্রমিক গোবিন্দ ধরের স্রোতস্বিনী সাংস্কৃতিক সংস্থা গঠনের দিনই অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে এই লিটল ম্যাগ সংগ্রহশালাও গঠিত হয়। তখন এই সংগ্রহশালায় ছিল উনার বাবার জমানো বই। বই-পত্র যা ছিল সব পুরোনো। কয়েকটা সন্দেশ, সোভিয়েত দেশের বই তা দিয়ে লাল ফিতা কেটে যাত্রা শুরু হয় 'উত্তর পূর্ব লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র। সাহিত্যে শৈল্পিক রুচির খুবই প্রয়োজন। যা যথাযথ বিদ্যমান গোবিন্দ ধরের কাছে। উনার বাড়ি রাতাছড়া হলেও সারা ত্রিপুরা বইমেলা থেকে প্রকাশিত প্রায় সব বই কিনে আনতেন। ভালো মন্দ বিচার করে নয়, ত্রিপুরার প্রকাশিত বই এটাই তাঁর লোভ মোহ আর টান টান উত্তেজনা।পাঠক হিসেবে ও যে কতটা প্রগাঢ় ভালোবাসা বই এর প্রতি তা জানতে পারি যখন মেলাতে বসেই পড়তেন নেশার টানে। সংগ্রহ শালার জন্য কি কিনেন নি। পাঁচ টাকা দশটাকা থেকে শুরু করে অন্ধকারে প্রণামের ইচ্ছে হয় সবই কিনলেন বই মেলা থেকে। সন্তোষ রায়ের নদী মাতৃক, স্বরূপের ভিটামিন শুভেন চৌধুরীর বই আদি। ধর্মনগরের সন্তোষ দা'র নয়া পাড়ার ভাড়া বাড়ির প্রযত্ন আড্ডা থেকে আরও বই কিনে আনেন। ২০০৩ সালে সংগ্রহশালা কিছু দিনের জন্য কৈলাসহরের বৌলাপাশায় স্থানান্তরিত হয়। অল্প কিছু দিনের মাঝেই কুমারঘাট বর্তমান হালাইমুড়ায় নিয়ে আসেন। এখন এই বিপুল পরিমাণ বইয়ের সংসার "উদ্দিপ্ত গ্রন্থাগার থেকে সংগ্রহশালা তারপর নাম দিলেন "উত্তর-পূর্ব লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র"।
ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের এক দীর্ঘ ইতিহাস। তা জানতে পারি গোবিন্দ ধর সম্পাদিত 'ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন' বইটি পড়ে। গোবিন্দ দা'র এক সাক্ষাৎকারে জানতে পারি রবি, শ্রীভূমি পত্রিকা থেকে শুরু করে ৬০-৭০ দশকের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা তথা বর্তমান পর্যন্ত সংগ্রহ করে আসছেন। আরও জানা যায় রবি পত্রিকা কে কেন্দ্র করে ত্রিপুরা সাহিত্য চর্চায় মোড় এসেছিল। বর্তমানে কুমারঘাট লিটল ম্যাগাজিন এর কেন্দ্র। কারণ এখান থেকেই প্রকাশিত হয় স্রোত, কবিতাঘর,দোলনা, সৃষ্টিলোক,মনূতট,সমকাল,বইবাড়ি, জয়িতা স্রোত.f, স্রোত.com,এখন সময়,তুলিকা,বাংলাভাষা, ঊনকোটি, অন্যভূমি,অন্যপাঠ,পারমিতা, কাব্যমুখ,উৎসব সমাচার, শ্যামালিমা,প্রয়াসী,। তাঁর অক্লান্ত সাহিত্য শ্রমই তাঁকে পরিচিতির আলোকে সারা বাংলা সাহিত্যের পাঠক গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে।
ত্রিপুরার কুমারঘাটের শব্দ শ্রমিক গোবিন্দ ধর বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর এই উদ্যমশীল মনোভাব আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সোপান। এই শব্দ চাষীর বাংলা ভাষার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এই প্রজন্মের অক্সিজেন। তাঁর এই গবেষণাকে লাল সেলাম।
উল্লেখ পঞ্জি
-----------------
জন্ম:৩০শে জুলাই:১৯৭১
জন্মস্থান :অফিশটিলা,ধর্মনগর
লেখাপড়া
-------------
স্কুলে ভর্ত্তি:৩০জানুয়ারী:১৯৭৮
স্কুল:রাতাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়-১৯৭৮_১৯৯০
উচ্চতর স্কুল :কাঞ্চনবাড়ি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১৯৯০-১৯৯২
পেশা
-------
চাকুরী :১৫ই জুলাই:১৯৯১
উচ্চতর স্কুল :ফটিকরায় উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১৯৯৪
প্রথম চাকুরীর স্কুল:উত্তর রাতাছড়া নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়-১৫-০৭-১৯৯১-২০-০১-২০০৬
দ্বিতীয় স্কুল:রাজেন্দ্রনগর নিম্ম বুনিয়াদী বিদ্যালয়,২১-০১-২০০৬।স্কুল তাঁর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত।
নেশা
-------
১৯৯০ সাল থেকে নাটক যাত্রায় হাতেখড়ি।
প্রথম লেখা প্রকাশ:১৯৯১।নিয়মিত লেখালেখি শুরু।
১৯৯১ সালে মহামায়া নাট্য সংস্থা গঠন।সংস্থার সম্পাদক।১৯৯৪ সাল অব্দি নাট্য চর্চা।
১৯৯৪ রাতাছড়া থেকে কুমারঘাট বইমেলায় নিজের টেবিল নিয়ে বসা।
রাতাছড়ায় সাংস্কৃতিক চর্চার শুরুঃ১৯৯৫ সালে স্রোতস্বিনী সাংস্কৃতিক সংস্থা গঠন।সম্পাদক হিসেবে রাতাছড়ায় প্রথম সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলা।ঐ সময় প্রথম রাতাছড়ায় তিন দিন যাবত সাংস্কৃতিক উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন উৎসব ও প্রদর্শনী।
সংগ্রহশালা গঠন:১৯৯৫ সালে উদ্দীপ্ত সংগ্রহশালা গঠন।পর নাম বদল ঘটিয়ে উত্তর পূর্বের লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে উন্নয়ন।
রাতাছড়ায় প্রথম:টিকিট কেটে যাত্রা স্রোতস্বিনী সাংস্কৃতিক সংস্থা থেকে প্রথম হয় -১৯৯৬সালে।
রাতাছড়ায় প্রথম বই উৎসব:২০০০ সালে।স্রোত থেকে।
২০০০ সালে পারিবারিক শিশু সাহিত্য পত্রিকা:কুসুম এর আত্ম প্রকাশ করা।
রাতাছড়ায় প্রিন্টিং প্রেস:২০০০সালে রাতাছড়ায় প্রথম স্ক্রীন প্রিন্টিং চালু।গ্রাফিপ্রিন্টের মাধ্যমে স্রোত,স্রোতস্বিনী মূদ্রণ করা হতো।
রাতাছড়ায় প্রথম লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ:১৯৯৫।স্রোত,স্রোতস্বিনী। সম্পাদনা করা থেকে লেখা সংগ্রহ। লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি সহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড।
২০০২-০৩:স্রোত ও সংরক্ষণ কেন্দ্র কৈলাসহর স্থানান্তর।
তার পরেই কুমারঘাট পুন:স্থানান্তর। হালাইমুড়ায় :২০০৩ থেকে।
প্রথম কবিতা সংকলন:২০০৬
২০০৭:কবিতাঘর মাসিক কবিতা পত্রের আত্মপ্রকাশ কুমারঘাট থেকে।নিয়মিত প্রকাশ হতে থাকে প্রতিমাসে।
২০১০ সালে কুমারঘাট ১৫ বছর উদ্যাপন স্রোত সাহিত্য পত্রের।
২০১২:স্রোত আয়োজিত কুমারঘাট উৎসব।পর পর চারবার-২০১২-২০১৫।
উৎসব সমাচার আত্মপ্রকাশ।
২০১৮ কুমারঘাটে ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন উৎসব।
বইবাড়ি, অন্যপাঠ আত্মপ্রকাশ।
তাঁর কয়েকটি কাজ তুলে ধরলাম।
স্রোত পরিবার:কবিতাঘর,কুসুম,বাংলাভাষা,উদ্দীপ্ত সংগ্রহশালা,স্রোতস্বিনী,গ্রাফিপ্রিন্ট,বইবাড়ি,অন্যপাঠ,উত্তর পূর্ব ভারত লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ কেন্দ্র, ত্রিপুরার পু্থি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ও গবেষণাগার
আয়োজিত-অনুষ্ঠান সূচী
(১)সাংস্কৃতিক মেলা ও লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী:১৯৯৫-২০০৯
(২)কবিতাঘর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান :২০০৭
(৩)বই প্রকাশ ও দক্ষিণারঞ্জন ধর স্মৃতি স্রোত সম্মাননা:২০১৩
(৪)বই প্রকাশ ও ভারত বাংলাদেশ আবৃত্তি উৎসব:২০১৩
(৫)বই প্রকাশ পাঠক লেখক মুখোমুখি
(৬)স্রোত পনেরতম বর্ষ উদযাপন
(৭)লিটল ম্যাগাজিন মেলা ও প্রদর্শনী:২০১০
(৮)কুমারঘাট উৎসব:২০১২(তারপর পর পর আরো তিনবার)
(৯)দক্ষিণারঞ্জন ধর স্মৃতি স্রোত ছোটগল্প প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার:২০১৪
(১০)বই প্রকাশ ও আবৃত্তি উৎসব:২০১৫
(১১)আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন উৎসব:২০১৬
(১২)উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় কথাসাহিত্য উৎসব:২০১৭
(১৩)পারিবারিক কবিতা উৎসব:২০১৭
(১৪)বই প্রকাশ উৎসব:২০১৮
(১৫)ত্রিপুরার পুঁথিপাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রাসঙ্গিকতা:২০১৮
(১৬)২৪শে অক্টোবর :২৯১৮ ত্রিপুরার প্রথম ছড়া উৎসব।
(১৭)৩০শে নভেম্বর সময়ের সংকট ও সাহিত্য উৎসব।
(১৮)ত্রিপুরায় প্রথম অনুগল্প উৎসব:২০১৮
(১৯)স্রোত রজতজয়ন্তী প্রকাশনা উৎসব :২০১৯
আলোচনা,- সমালোচনা
----------------------------------
রাতাছড়ার দিনগুলোতেও যাত্রা ও সাংস্কৃতিক জগতে অন্যমাত্রা আনেন তিনি।এতে কোন কোন যাত্রা শিল্পীও রুষ্ট হন।ঢিল পাটকেলও ছাড়েন।তারপর আবার ক্ষনাও চান।কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থাও আনেন স্রোতস্বিনী সাংস্কৃতিক সংস্থার কাজকর্মের দিনগুলোতে।কিন্ত শেষ মূহুর্তে তাঁর স্বচ্ছতা ও জেদের নিকট তিনি জিতে যান।
বারবার রক্তাক্ত হতে হয়েছে। কোন কোন লেখকের বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে কিংবা প্রকাশের পর লেখকের মত পরিবর্তনের জন্য।তাও তরুণদের বই প্রকাশ করে দিয়ে।অথচ তিনি চান সারা বাংলাসাহিত্যে তরুণদের দাপাদাপি বাড়ুক।তাঁর লক্ষ্যে তিনি সফলও।
রক্তাক্ত হতে হয়েছে প্রবীনদের হিংসের নিকট।তাঁকে জড়িয়ে নানা স্ক্যান্ডেল। কখন তৃতীয় বিয়ে কিংবা কখন কারো রুশানলে পড়তে হয়েছে গভীর গোপন বলা যাবে না এমন ঘটনাতেও তাঁকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
ত্রিপুরার একজন আঁতেল কবি যিনি নিজেকে রাজ্যের হিট তালিকায় স্বঘোষিত দাবী করেন এক নম্বর কবি বলে তাঁর একটি বইয়ে গোবিন্দ ধরকে নিয়ে রসিয়ে মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে চারটি গদ্য লিখে একটি বই প্রকাশ করেও তাঁকে রক্তাক্ত করার চেষ্টা করা হয়।কিন্ত গোবিন্দ ধর লক্ষ্যে অবিচল।
২০১২ বারো সালে একদল অশৈল্পিক স্বঘোষিত কবি ও শিল্পীরা তাঁকে নিয়ে হিউমার তুলেন তিনি তৃতীয় বিবাহে আবদ্ধ বলে।তাঁর কর্মস্থলেও তাঁর বিরুদ্ধে ছদ্মনামে কেউ একজন এই অভিযোগ দায়ের করেন।তথাপি তাঁকে দমানো যায়নি।মিথ্যা প্রচার করা হয় তাঁর চরিত্র নিয়ে।সে সময় তাঁর পরিবার এগিয়ে এসে এই স্ক্যান্ডেলকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেন।
রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরেও কেউ কেউ তাঁর উপর নানা কুৎসা গালগল্প ছাড়েন।কিন্তু শেষ অব্দি তাঁর দৃঢ় সংকল্প স্বচ্ছতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর নিরলশ যুদ্ধে তিনি সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর।এতেই বারবার তাঁকে বিদ্ধ করতে চেয়েছেন বিরুদ্ধ মতাদর্শিরা।কিন্তু তিনি দমবার নয়।
তিনি অবিচল।লক্ষ স্থির করা একজন অর্জুন।
গোবিন্দ ধরকে তাঁর পরিবার সব সময় উৎসাহ দিয়ে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন।করেন।এতে তিনি অনেকটা সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছেন।
লিটল ম্যাগাজিন করতে দুধেল গাভীও বিক্রি করতপ হয়েছে তাঁর।পদ্মশ্রী ও সুমিতার গয়না বিক্রি করেও তিনি স্রোতকে এগিয়ে নিয়ে যান।এতে সর্বদা হাতের বালা,কানের দোল,গলার হার খুলে দিশে তাঁর কাজকে সব সময় তাঁর পরিবার সহযোগিতা করেছেন।কখনও মলিন করেননি মুখ।
সন্তানের লেখাপড়ার খরচেও রান পড়েছে বারবার।
নিজের সঠিক চিকিৎসা না করিয়েও তিনি বই প্রকাশ করেছেন।লোনের টাকায় ঘর না করে তিনি বই প্রকাশ করেছেন।
এতে তিনি হয়তো এলিট সমাজের টেটাস মেন্টেন করতে পারেননি কিন্ত সাহিত্য জগতে তাঁর অবদানের জায়গা করে নিয়েছেন।
চাল কিনতে বাজার না করে তিনি তাঁর প্রিয় বইটি কিনে ঘরে এসেছেন।এতে অনেক দিন চালের অভাবে ভাতের হাঁড়ি চাপেনি চুলোয়।তথাপি তাঁর পরিবার থেকে কখনওই কটু কথা শুনতে হয়নি।
হাজিরাকামলা
--------------------
তাঁর ছোটবেলা হাজিরা কাম করেও বাবাকে সহযোগিতা করতেন তিনি।তৎকালিন সময়ে মাটি কাটা,কংক্রিট করা,রাস্তার কাজ,মেরামত, সলিং থেকে শুরু করে সব কাজই করতেন।অনেক দিন ভাত জুটতো না।
দুদিন তিন ভাত না খেয়েও কাজ করেও টাকা রোজগার করে চাল কিনে আনতেন।তাঁর বাবাকে সাহায্য করতেন।
রাতাছড়া গ্রামের ছোট বড় সকলের নিকট তিনি ছিলেন আদর্শ।আশপাশের চার গ্রামের সকল লোকজন তাঁকে স্নেহ করতেন।
দুমুখো সাপ আর দুমুখো মানুষ দুটোই বিষাক্ত।এমন মানুষের ছোবল তিনি বার বার খেতে হয়েছে।
ভালোবাসা
---------------
মানুষের প্রগাঢ় ভালোবাসাও তিনি লাভ করেছেন।বারীণ ঘোষাল,সন্দীপ দত্ত,তপোধীর ভট্টাচার্য, উষারঞ্জন ভট্টাচার্য, রণবীর পুরকায়স্থ,মিথিলেশ ভট্টাচার্য,অমলেন্দু ভট্টাচার্য থেকে
বিকাশ সরকার,নির্মলেন্দু গুণ,পবিত্র সরকার,সেলিনা হোসেনের মতো গুণিজনের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন