হেলাল হাফিজ : রুদ্রসাগর কুন্ডু

হেলাল হাফিজ

কবি হেলাল হাফিজ। ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশের নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা, খোরশেদ আলী তালুকদার।  মাতা, কোকিলা বেগম। হেলাল হাফিজ ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার হাই স্কুলের নাম ছিল ‘‘নেত্রকোনা দত্ত হাই স্কুল’’। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে তিনি সেই সময়ের জনপ্রিয় সংবাদপত্র জাতীয় দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন এবং তিনি এখানে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন এবং শেষ সময় বা সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তর এ কাজ করেন।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার ব‌ই, "যে জলে আগুন জ্বলে"। ব‌ইটি প্রকাশিত হ'লে হৈচৈ পড়ে যায় সাহিত্য মহলে। এর পর প্রায় ২৬ বছর পর দ্বিতীয় ব‌ই "কবিতা একাত্তর" প্রকাশিত হয়, ২০১২ সালে। কবিতা লেখার জন্য বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সম্মান ও সম্বর্ধনা পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), এরপর যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে। আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৮৭ সালে। এছাড়াও নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

২০১৩ সালে সরকারি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

দীর্ঘ সময়ের লেখালেখিতে কবি মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। সে কারণে কবি মহলে বা সাহিত্য মহলে তিনি স্বল্পপ্রজ সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর বিশেষ জনপ্রিয় একজন কবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "যে জলে আগুন জ্বলে" আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। আজও তা সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশের সাহিত্য মহলে এবং তরুণ কবি ও পাঠক মহলে ২০১২ সালে প্রায় ২৬ বছর পর তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "কবিতা একাত্তর" প্রকাশিত হলে, "যে জলে আগুন জ্বলে"-এর মতই সারা জাগানো চরম সাহিত্য উন্মাদনার উন্মেষ ঘটে।

 বাংলাদেশের কবিকুলের মধ্যে হেলাল হাফিজের জনপ্রিয়তা ঈর্ষা করার মত। তিনি তরুণ কবিদের ভীষণভাবে উৎসাহিত করেন। কবি হেলাল হাফিজের কবিতা বাংলাদেশের যেকোনো আবৃতি শিল্পীর জন্য, আবৃত্তি করার একটি কমন স্ক্রিপ্ট হিসেবে পরিচিত।

প্রেমে প্রত্যাখ্যানে, যুদ্ধে, বিদ্রোহে, ভালোবাসায়, অভিমানে, বন্ধুত্বে সমাজের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কষ্ট যন্ত্রণার পুঙ্খানুপুঙ্খ কাব্যিক বর্ণনায় হেলাল হাফিজ বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে একজন উল্লেখযোগ্য অনন্য কবি।

বর্তমান সময়ে কবি হেলাল হাফিজ ভীষণ অসুস্থ। তিনি এখন ঢাকার বড় একটি হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তার শারীরিক সুস্থতা দিন দিন বিপদজনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতার পাঠকেরা সেভাবে হয়তো হেলাল হাফিজের চর্চা করার সুযোগ বা সংগতি তৈরি করতে পারেননি, তথাপি এপার বাংলাতেও প্রচুর ভক্ত অনুরাগী পাঠক পাঠিকা রয়েছে। 

কবি হেলাল হাফিজের "যে জলে আগুন জ্বলে" এবং "কবিতা একাত্তর" এই দুটি কাব্যগ্রন্থ সত্যিকার অর্থেই বাংলা সাহিত্যে অনন্য অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। এত সুন্দর কাব্যিক দোতলা ব্যঞ্জনাময় শব্দ চয়ন, অন্তর্নিহিত ভাবে-ভাষায়-বিষয়ে চমৎকার এবং অপূর্ব বিন্যাসে অমর হয়ে থাকবে।

 হেলাল হাফিজ প্রচার বিমুখ একজন লাজুক প্রকৃতির কবি। শেষ সময় কবি সমাজ, সাহিত্য পাঠের আসর এগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। একটা সময় লক্ষ করলে দেখা যায়, শেষ দশকে তিনি বেশিরভাগ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকতেন এখানেই তার অনুভব এর খুটিনাটি পাওয়া যেত এবং অসংখ্য পাঠক বন্ধু তার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। আমিও অসংখ্যবার কবির সঙ্গে বার্তালাপ করেছি। তার মতো নিরহংকারী কবি বাংলাদেশে বিরল।

আমার জীবনে শুরুর দিকে যে বইগুলো পাঠের মাধ্যমে সাহিত্যের প্রতি কবিতার প্রতি অনুরাগ জন্মেছিল তার মধ্যে মঈনুল আহসান সাবেরের "দূরের আকাশ" হেলাল হাফিজের "যে জলে আগুন জ্বলে" এবং রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিভিন্ন কবিতা অন্যতম।

হেলাল হাফিজের শক্তিশালী কাব্যিক চর্চার যারা প্রত্যক্ষ সাক্ষী রয়েছেন, তারা প্রকাশ্যে না বললেও অন্তত নিজের কাছে হলেও স্বীকার করেন, এত অল্প লিখে এতটা আত্মপ্রচার বিমুখ হয়েও তিনি বাংলাদেশের কবিতার জগতে এক ও অদ্বিতীয় কবি সম্রাট এর মত স্বাধীন জীবন যাপন করেছেন।

কবির প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা সম্মান ও ভালোবাসা রেখে প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা করি তিনি সুস্থ হয়ে উঠুক ভালো থাকুক। আরও দীর্ঘতর জীবনের অধিকারী হয়ে, লেখক আমাদের বাংলাসাহিত্যে অমূল্য অমর সম্পদ  সৃস্টিতে সমৃদ্ধি আনুক।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের তত্বাবধানে ঢাকার কোনও হাসপাতালের অধীনে চিকিৎসারত অবস্থায় আছেন।

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.