শৌভিক দে সরকার, কবি ও অনুবাদক |
শৌভিক দে সরকার নয়-এর দশকের একজন অন্যতম কবি। পাশাপাশি একজন সফল অনুবাদকও। ১৯৭৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার (বর্তমানে আলিপুর দুয়ার জেলা) আলিপুর দুয়ার শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । পরবর্তীতে সেখানেই শিক্ষালাভ ও বড় হয়ে ওঠা। বর্তমানে এই জন্মশহরেই একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় তিনি চূড়ান্ত ডুবে থাকা একজন কবি এবং অনুবাদক। এ যাবত অজস্র ভালো ভালো কাজ করে বাংলা ও অনুবাদ সাহিত্যে প্রশংসা যেমন কুড়িয়েছেন তেমনি আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষ জায়গাও তৈরী করতে পেরেছেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'শীত ও বয়ঃসন্ধির হাসপাতাল' প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। এরপর একে একে প্রকাশ হয় 'একটি মৃদু লাল রেখা'(২০০৫), 'যাত্রাবাড়ী'(২০১১), 'দখলসূত্র'(২০১৩), 'অনুগত বাফার'(২০১৫), 'পুনর্বাসনের চিল'(২০১৬) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি। এছাড়া ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নির্বাচিত ইংরেজি অনুবাদের সংকলন 'The Evening Gnome'.
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হবার সুবাদে বাংলা ভাষার পাশাপাশি দেশীয় ও বহির্দেশীয় বিভিন্ন ভাষাসাহিত্যের প্রতি তিনি ভীষণভাবে অনুরাগী হয়ে ওঠেন। ফলস্বরূপ, অনুবাদ করেন 'রোবের্তো বোলানিওর কবিতা'(২০১২), সদত হাসান মন্টোর 'স্যাম চাচাকে লেখা চিঠি'(২০১৪), ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার নাটক, 'বেরনার্দা আলবার বাড়ি'(২০১৬), 'খুলিও কোর্তাসারের কবিতা'(২০১৭), 'রুদ্রমূর্তি চেরানের নির্বাচিত কবিতা'(২০১৭), 'নমদেও ধাসালের কবিতা'(২০১৮), 'রোবের্তো বোলানিওর নির্বাচিত গল্প'(২০১৯) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কাজগুলি। কবি শৌভিক দে সরকার পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রথমসারির কাগজ, লিটলম্যাগ ও ওয়েবজিনে লিখে থাকেন। এমনকি প্রথম বাংলা ওয়েবজিন 'বাক্'-এর অনুবাদ বিভাগটি দীর্ঘদিন সম্পাদনাও করেছেন।
আলিপুর দুয়ারের মতো প্রান্তিক শহরে থেকেও যেভাবে তিনি নিজেকে প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের, আঞ্চলিক থেকে বৃহত্তর ভাষা সাহিত্যের সফল যোদ্ধারূপে গড়ে তুলতে পেরেছেন তা সত্যিই ঈর্ষনীয়। শ্রম, নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায় যে সফলতার মূল চাবিকাঠি তার উদাহরণস্বরূপ কবি ও অনুবাদক শৌভিক দে সরকারের নাম উল্লেখ করাই যায়। যার স্বীকৃতি হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে ২০০৫ সালে 'কবিতা পাক্ষিক পুরষ্কার', ২০১৭ সালে 'মল্লার পুরষ্কার', ২০১৮ সালে 'রাঢ় বনতলি সম্মান' এবং ২০১৯ সালে 'ভাষানগর--মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরষ্কার' ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার ও সম্মাননাগুলি। এছাড়া পুরষ্কার ও সম্মাননার পাশাপাশি তিনি অংশগ্রহণ করেছেন সাহিত্য অকাদেমির 'ইয়ং রাইটার্স মিট'(২০১৩), শিলচরে অনুষ্ঠিত প্রথম 'অনুবাদ-ট্রান্সলেশন ফেস্টিভ্যাল'(২০১৬), 'ভুবনেশ্বর পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল'(২০১৬), 'সীমাঞ্চল ইন্টারন্যাশনাল লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল, কিষাণগঞ্জ'(২০১৭), ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত একাদশতম 'সঙ্গম হাউস ইন্টারন্যাশনাল রাইটার্স রেসিডেন্সি'(২০১৯) সহ ভারত ও বাংলাদেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য উতসবে। এমনকি ২০১৮ সালে স্পেনের বার্সেলোনার 'জিওয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাইটার্স রেসিডেন্সি'--তেও অংশগ্রহণের জন্য শর্ট লিস্টেড হয়েছিলেন তিনি।
লেখালিখির শুরু থেকেই বাংলা ও অন্যান্য ভাষার বিভিন্ন নামী লেখকের সংস্পর্শে এসেছেন কবি শৌভিক দে সরকার । কিন্তু তিনি মনে করেন, তাঁর নিজের সময়ের বিভিন্ন ভাষার লেখকবন্ধুদের সঙ্গ ও সহযাপনই তাঁর লেখালিখির অন্যতম রসদ। তিনি বিশ্বাস করেন সাহিত্যের কোনো কেন্দ্র, প্রান্ত, সীমা বা সরহদ হয়না; থাকতে পারেনা। সাহিত্য তাঁর কাছে উন্মুক্ত রোডস্টোরি, বর্ণময় যাপন।
এহেন সৎ ও নির্ভীক কবির বিনোদন বা শখ বলতে শুধু হিন্দি সিনেমার গান, ঘুরে বেড়ানো এবং একটু ভদকা।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন