![]() |
সুবীর সরকার |
কবি সুবীর সরকার নয়-এর দশকে লিখতে আসা কবিদের মধ্যে আজ অন্যতম একটি নাম। কলকাতা তথা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত একটি প্রান্তিক শহর কোচবিহারে বসে বাংলা কবিতার হাওয়া বইয়ে দিচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়না, সুবীর সরকার আজ আর প্রান্তিক নন। তিনি সমগ্র বাংলার, বাংলা কবিতার সমগ্র ভুবনের। দেশ ও বহির্দেশে শুধুমাত্র তাঁর স্বতন্ত্র কবিতার জাত চিনিয়েই তৈরী করেছেন অজস্র পাঠক। দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাংলা কবিতার একজন সংগ্রামী বাহক হয়েও আজও অক্লান্ত এই কবি জন্মগ্রহণ করেন ৩রা জানুয়ারি, ১৯৭০ সালে কোচবিহার গভঃ হাসপাতালে। তারপর সেই শহরেই তাঁর বড় হওয়া, শিক্ষালাভ করা এবং সেখানকার ভাষা-সংস্কৃতির মায়ায় জড়িয়ে নিজেকে কবি রূপে আবিষ্কার করা।
পেশায় শিক্ষক এই কবি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা মিলিয়ে অজস্র লিটল ম্যাগ ও বানিজ্যিক কাগজে লিখে ফেলেছেন এবং এখনও লিখছেন। আসলে কবি সুবীর সরকারকে তুলে ধরার জন্য আলাদা করে কোনো পত্রিকার নাম উল্লেখ করতে হয়না। পত্রিকার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রায় সকল প্রকার বাংলা সাহিত্য সম্পর্কিত ব্লগেও তাঁর লেখা দেখতে পাওয়া যায়। বাদ নেই উত্তরবঙ্গ সংবাদ, আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল, উত্তরের সারাদিন ইত্যাদি দৈনিক কাগজগুলিও। এহেন কবির এযাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়। যেমন ; যাপনচিত্র(১৯৯৬), বরফ বিষয়ক সেমিনার(২০০১), হরফলিপি(২০০৪), চর্যাপদের হরিণ(২০০১), টাইগার প্রজেক্ট(২০০৫), জ্যোতস্নাগিটার(২০০৭), কান্না বিষয়ক ২৪ রিল(২০০৮), তন্ত্র পুস্তক(২০১০), নির্বাচিত কবিতা(২০১২), সেপ্টেম্বরের পৃথিবী(২০১৪), নাচঘর(২০১৮), ভাঙা সেতুর গান(২০১৮) ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থগুলি। তবে শুধু কবি নন, পাশাপাশি একজন সফল গদ্যকারও তিনি। তাঁর প্রকাশিত ও আলোচিত গদ্যের বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-- এপিটাফ(২০১৩), গানবাড়ি ধানবাড়ি(২০১৪), মাহুত বন্ধু রে(২০১৪), উত্তরজনপদ বৃত্তান্ত(২০১৭)। এছাড়াও শোলোকগাথা, লোকপুরাণ, লালমণি পরিবহন, মাতব্বরবৃত্তান্ত, ইত্যাদি গ্রন্থগুলি।
বাংলা কবিতা তথা সাহিত্যের ভুবনে দীর্ঘ তিনদশককালীন ও এখনও গতিশীল চর্চা এবং অবদানস্বরূপ পেয়েছেন বহু সম্মান ও পুরষ্কারও। এদের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হল 'কবিতা পাক্ষিক সম্মান', 'কবিতা লাক্ষিক ৫০০ সম্মান', 'সমিধ সম্মান', 'ইতিকথা বিশেষ সাহিত্য পুরষ্কার', 'বিবৃতি পুরষ্কার', 'কবিতা করিডোর সম্মাননা', 'তোর্সা সাহিত্য সম্মান' এবং 'শীতলগড় সাহিত্য সম্মান'। তবে কবির কাছে সবচেয়ে বড় সম্মান তাঁর পাঠক, পাঠকের ভালোবাসাই তাকে পুষ্ট করে, উজ্জীবিত করে।
সুবীর সরকার শুধু কবি, গদ্যকার ও শিক্ষক নন, একজন লোকসংস্কৃতি গবেষকও। উত্তরের প্রায় সমস্ত গ্রামগঞ্জহাট তাঁর নখদর্পণে। ভালোবাসেন মানুষের সঙ্গে মিশতে, হাটে ঘাটে ঘুরতে ঘুরতে প্রান্তিক মানুষ ও জনজীবনের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে। তাঁর আর একটি বড় পরিচয় হল, তিনি উত্তর তথা বাংলা কবিতায় বিচরণকারী সমস্ত জেলার তরুণ কবিদের ভীষণ কাছের মানুষ। বহু তরুণ কবি আজ তাঁরই হাত ধরে উঠে এসে বাংলা কবিতা লিখছেন। তরুণ কবিরা তাঁর কাছে খোলা আকাশ পায়, পায় ভালোবাসা ও অসীম স্নেহ। এমন কবিতাপাগল মানুষ বাংলা কবিতায় বিরল বললেও চলে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন