মংলু মালী। কোন গাছের কি নাম, কখন ফুল আসবে, কোন সার ব্যবহার ঠিক হবে তা মংলুর থেকে ভালো কেউ জানে না। ফুল সে যেমন ভালোবাসে তেমন যত্ন করে খুব। গাছের কাটিং করত যখন মায়া হত বড় ওর। বৌ ফুলু পঙ্গু। তিন সন্তান মারা যাওয়ার পর মংলুর কাছে আসে চিনি। খুশিতে মংলু সেদিন লাল হয়েছিল। ছোট্ট চোখ দুটো যখন ওর দিকে তাকিয়ে নরম আঙুল দিয়ে ওকে স্পর্শ করে চোখের কোণে সেই শেষ বার জল এসে ছিল।
মংলুকে এই পাহাড়ের লোকেরা কখনও হাসি ছাড়া দেখে নি। খুব কম শহুরে এই পাহাড়ে মুক্তির স্বাদ নিতে আসত। মংলু ছিল তাদের সকলের আপন। ফুলু কাজ করত চা বাগানে। চিনি কে মংলু কখনও নিজের থেকে দূরে রাখে না। একদিন জেদ করেই তিন বছরের চিনি যায় মায়ের সঙ্গে। ফিরতে দেরি দেখে মংলু রওনা দেয় চিনির কাছে। হঠাৎ করে কানে আসে চিৎকার। পাহাড়ের অন্ধকারে মংলু চিনেছিল পশু গুলোকে। যারা রক্তাক্ত করেছিল মংলুর জীবন।
মহামারীতে বন্ধ হয়েছে পাহাড়ে আনাগোনা। খিদে যে রোগের থেকেও সাংঘাতিক। রোজগার বন্ধ। মংলু তাই পাড়ি দিয়েছে শহরে। জীবনের আশায়। ফুলু ভেসেছে নদীতে। নদী যে ফুঁসছিল। তবে টানতে পারে নি পাথর মংলুকে। নিয়ে যেতে পেরেছে ফুলু কে, হয়ত বা ছেড়ে দিতে পেরেছে মংলু। সহজ সরল মংলু এসেছিল কাজ খুঁজতে। শান্ত ফাঁকা জন অরণ্য শূণ্য কনক্রিটের জঙ্গল দেখে অবাক মংলু।কিছু কিছু লোকজন চলে অবশ্য মুখ বেঁধে।
দু'দিন খালি পেটে থেকে আজ মুখ ঢুকিয়েছিল মাঠের ধারে ডাস্টবিনে। আবার সেই পুরোনো চিৎকার। দৌড়ায়। পশু গুলো পালিয়েছে। মাথাটা থ্যাথলানো মেয়েটার। পাশের ছেলেটা কাতরাচ্ছে। এই পশুকে মংলু চেনে। অন্ধকারে দেখেছিল। আবার রক্ত। গলার নলী দিয়ে বেরিয়ে এল গরম রক্ত। কান্নায় হুঁস ফিরল মংলুর।
বড় ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে মংলু। ফিরতে হবে পাহাড়ে। বুকের কাছে শুধু জড়িয়ে রেখেছে ঝোপের থেকে কুড়িয়ে পাওয়া জীবন টাকে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন