কবিতায় বাংলার থিয়েটার : ঋদেনদিক মিত্রো


কবিতায় বাংলার থিয়েটার  


ঋদেনদিক মিত্রো

      [ কথ্য ছন্দের বিশেষ ঘূর্ণনে লেখা ]

অতীত-হাওয়ায় আছি
              আমরা তো সকলেই,  
বর্তমান কিছু নয়,  
              অতীতের সাথে সংসার,
                বাংলার থিয়েটার !

বাংলার থিয়েটার,   
থিয়েটার মানে কত অতীতের বিস্তার,  
ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে সাহেব ও মেম --
গায়ে গা ঘেসিয়া রঙ্গালয়ে আসিতেন,  
দেশীয় জমিদার,  অবস্থাপন্ন,  
কেউ ঘোড়াগাড়িতে,  কেউ গরু-গাড়িতে  
        আসিতেন থিয়েটার দেখিবার জন্য,  
              সে সময় কোথা আর !
                        বাংলার থিয়েটার !     

পেশাদার থিয়েটার হলো কলিকাতাতে,  
গিয়াছে সে এক যুগ,  
   পুরানো  কলিকাতার বিকেল ও
                   বিদ্যুৎহীন রাতে,  
রঙ্গালয়ের মাঝে সুনসান বেদিতে --
অভিনয় হইতো যে অপূর্ব গতিতে,  
দর্শক দিত কত হাততালি, বাহবা,   
পুরানো কলিকাতায় ঝোপ ঝাড় জলা ডোবা,  
তার মাঝে কোথাও বা পাকা বাড়ি ও পুকুর,.
কোথাও বা ইট-পাতা, গাছের তলে কুকুর,  
সাহেব ও মেমেরা --- কত কী যে ভাবতো,
তাদের সাজ ও কথা -- কী যে ভালো লাগতো,  
এদেশি মানুষেরা সেই দিকে তাকিয়ে  ---
ভাবতো যে কতকি কল্পনা জাগিয়ে ----
তার মাঝে থিয়েটার, তুলনা তো নেই গো,
কল্পনা করো সেই সব,
        আজ ইংরেজি দু হাজার কুড়ি,
             নতুন শতাব্দী একবিংশ !

প্রথম পেশাদারী
   বাংলা নাটকের থিয়েটার-ইতিহাস  ---
কী ভাবে যে এসেছিলো --- করবে কি বিশ্বাস?  
তার আগে ব্রিটিশের চৌরঙ্গী থিয়েটার,  
ইংরেজি নাটক হতো,  সাহেবের অধিকার !
 
বাংলা ভাষায় প্রথম যে-থিয়েটার হয়েছে ---
সেটার কৃতিত্বে শুধু লেবেডফ রয়েছে,
পেরেসিম স্তিভানোভিচ লেবেডফ
             বাড়ি তার রাশিয়ায় ---  
বেহালা বাজায় এক পন্ডিত যুবক,
             এলো সে কলিকাতায়,  
পর্যটক হয়েই সে সতেরশ পঁচাশিতে
                            এসেছিলো এদেশে,  
বাংলাভাষাকে হঠাৎ কেন যে  ভালোবেসে  
গোলকনাথ দাসের কাছে বাংলাটা পড়ে সে,  
চুপিচুপি কোনো এক স্বপ্নেটা গড়ে সে,
দশ টি বছর থেকে বাংলাটা শিখলো,  
বাংলাটা শিখবার আশাটা তো মিটলো,   
এবার স্বপ্নটার  বাস্তব রূপ চায় ---    
টাকাকড়ি ঋণ ক'রে তার কাজে নেমে যায়,  
বেশ কিছু দিন চলে কত ঘাম ঝরানো,  
একে তাকে ডেকে এনে রিহার্সাল করানো,  
তারপর সব কিছু দেখে আরো এগোলো,
যুবক তো স্থির হয়ে বাড়ি থেকে বেরুলো,

পঁচিশ নম্বর, ডোমোটোলা,
                পরে যা এজরা স্ট্রিট,  
সেখানেই  মাচা বেঁধে মঞ্চটা হলো ঠিক,   
ইংরেজি প্রহসন " দা ডিসগাইস " এর বাংলা,
" কাল্পনিক সঙ বদল "  নাম দিয়ে এই পালা --
হয়েছিল ওই দিন,  অনুবাদ ---  লেবেডফ,  
 টিকিট কেটেই তো ঢুকেছিলো কত লোক,  
এটারই তো নাম ছিল বেঙ্গলি থিয়েটার,  
কল্পনার  চোখেই দেখে যাই ছবি তার !
 
সাতাশে নভেম্বর প্রথম শো শুরু হয়,  
সাল সতেরশ পঁচানব্বই --- সে সময় !
রাতারাতি লেভডফ জনমুখে খ্যাতি পায়,  
কিছু বাজে ইংরেজ জ্বলে যায় হিংসায়,   
আগুন লাগিয়ে দিলো থিয়েটার মঞ্চে,  
ঋণগ্রস্ত  লেবেডফ দিশাহারা হলো যে,
সতেরশ সাতানব্বই,  মানে দুবছর পরে  --
হতাশাভরা যুবককে দেউলিয়া ঘোষিত করে --  
ব্রিটিশরা তাড়িয়ে দিলো তাকে রাশিয়ায়,   
কিন্তু তার ইতিহাস থেকে গেলো বাংলায় !

ও সময় বাংলায় ছিলনা তো সংবাদ পত্র,
ছিল না কোথাও যে  মুদ্রণ যন্ত্র,  
কাঠ বা ধাতুর ব্লকে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়,
থিয়েটারের নাম,  স্থান,  টিকিট মূল্য ও সময়,   
জলা জঙ্গল ভরা কাদা মাটি পথ ঘাট,  
কোথাও মাটির ঘর, পাশাপাশি খোলা মাঠ,.

নাম তবু কলকাতা,  এটাই যথেষ্ট,  
হোক জলা জঙ্গল -- তবু কী রোমাঞ্চ !
কোলকাতা শব্দটায় কী যে আকর্ষণ,   
যুক্তি তর্ক দিয়ে
        বোঝানো যায় না তার কারণ !

মশা,  মাছি,  সেই সাথে এথা সেথা খাল বিল,  
চারিদিকে পাখ পাখি,  দিগন্তে মিশে নীল,  
কোথাও অনেক দূরে চুন-সুরকির পাকা,  
তার পাশে হয়তোবা ঘোড়ার গাড়িটা রাখা,  
পাশ দিয়ে চলছে তো গোরুর গাড়িতে কে,  
কেয়চ-কেয়চ আওয়াজ, বেশ শোনা যাচ্ছে,   
সেই কলিকাতা নিয়ে এসো করি কল্পনা,  
লেবেডফ যুবকটার কী গভীর ভাবনা,   
কতকি অতীত নিয়ে সময়ের বিস্তার,  
                          বাংলার থিয়েটার !

লেবেডফের হাতেই  তো বাংলা ভাষার প্রথম
পেশাদারি থিয়েটার হইয়াছিল তখন,  
তার লেখা বাংলাভাষা সম্ভাব্য কারণেই
  ছিলনা তো তত উন্নত,
সে-যুগের সাধারনের কথ্য ভাষা
  হয়েছিল তার অনুবাদ নাটকে ব্যবহৃত !

প্রথম বাংলা নাটক আঠেরো শ আটান্ন সন,   
মাইকেল মধূসুধন দত্ত লেখেন "শৰ্মিষ্ঠা " তখন,
যাঁর লেখা ইংরেজি কবিতার  গুচ্ছ ---
ব্রিটিশকে করেছিল চমকিত,  মান এতো উচ্চ,
বাংলা কবিতাকেই  আধুনিক রূপটা দিতে --
ডেভিড হেয়ার সহ অনেকের অনুরোধে
      বাংলাটা ভালো করে শিখে ---
বাংলা লেখা শুরু করে  চমকে দেন তখন,  
মনে পড়ে কি সেই সনেটের প্রথম পংক্তি? --
      " হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন ! "

যাঁরা বলেন ইংরেজি না পেরে  
     মাইকেল চলে আসেন বাংলা ভাষায়,  
হয় তাঁরা ইংরেজিকে ভয় পান খুব,  
     অথবা আবেগ তাঁদের হাওয়ায় ভাসায় !

যাইহোক, লেবেডফের পর
  বাংলা নাটক পরে শুরু হলো যত ---
জমিদার বাবুদের টাকায় হতো সব,   
      কখনোই টিকিট কেটে নয়তো !

পুনরায় টিকিট কেটে
     বাংলা নাটক দেখার যে চলন,  
সেটা শুরু হলো ,  
      যখন-ই মঞ্চস্থ হয় " নীলদর্পন " !

যাইহোক " শর্মিষ্ঠা " নাটক দিল নতুন সময় --
মঞ্চস্থ করলো সেটা আরেক রঙ্গালয়,
আঠেরো শ ঊনষাটে প্রথম মঞ্চস্থ হয়ে যায়,
পাইকপাড়ার রাজা,
    সিংহদের বেলগাছিয়ার নাট্যশালায় !  
 
এদিকে প্রায় কাছাকাছি একই সময়েই ---
পন্ডিত রাম নারায়ণ তর্করত্নের হাতেই --
যে নাটক লেখা হলো -- " কুলীন কুলসর্বস্য ",  
তবে তা জমিদারদের অঙ্গনে মঞ্চস্থ হতো,  
ওটার প্রথম মঞ্চায়ন আঠেরো শ আটান্ন সালে,
অনেকটা সাধারণ জনগনের চোখের আড়ালে,  
বাংলার নাট্যসংস্কৃতি চলতে থাকে এ ভাবে,
সাধারণ মানুষেরও এ নিয়ে
             ক্রমশ উৎসাহ জাগে !  

বাগবাজারে যখন আঠেরো শ আটষট্টিতে ---
হলো আমেচার থিয়েটার, উৎসাহ দিকে দিকে !
অর্ধেন্দু শেখর,  নগেন্দ্রলাল,  রাধা মাধব কর,
ও গিরিশ চন্দ্র  প্রমুখ কিছু যুবক
                    মিলে অতঃপর  ---
থিয়েটারের পরিস্থিতি নিয়ে উঠলো মেতে,  
মঞ্চস্থ করলো " সধবার একাদশী "
                         প্রথম পদক্ষেপে,
লেখা দীনবন্ধু মিত্র  -- ও তাঁর-ই লেখা পরবর্তী--
আঠেরো শ বাহাত্তরে এগারো-ই মে " লীলাবতী
দুরন্ত সাফল্যের পর
           ওই  যুবকেরা মনস্থ করে ---  

ধনীর দয়ার টাকায় আর
           একেবারে থিয়েটার নয়,
টিকিট কেটেই চলবে
            সম্মানের সাথে নাট্যালয় !

যদিও বা দীনবন্ধু মিত্র আঠেরো শ ষাটে
তাঁর প্রথম নাটক " নীল দর্পন "
            বেরুলো তাঁর নতুন হাতে !  
জনপ্রিয়তায় কিন্তু এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ লেখা তাঁর,
হোলো আদালত, জেল-জরিমানা, ও তোলপাড়,
এটা মঞ্চস্থ হয় প্রকাশের অনেক বৎসর পর, .
যে হেতু প্রকাশের পর থেকে
                 উঠেছিল বিতর্কের ঝড় !  

লেবেডফের পর এটাই হলো সেই উত্তরণ --
বাংলায় প্রসেনিয়াম থিয়েটারের পুনঃজীবন,  
মঞ্চস্থ হলো ---
   আঠেরো শ বাহাত্তরে  সাত -ই ডিসেম্বর,   
মঞ্চস্থ হলো নীলদর্পন,
           মঞ্চ -- ন্যাশনাল থিয়েটর !

এরপর একটা সময় এলেন নটীবিনোদিনী,  
এলেন কত অভিনেতা অভিনেত্রী কজনকে চিনি !  
আঠেরো শ তেষট্টিতে জন্ম এই নারী বিদুষী,  
কজন বা জানি,  
         ইনি তো একই সঙ্গে ছিলেন কবি !
মাত্র তেইশ বছর বয়সে থিয়েটার থেকে বিদায়,  
লিখলেন আত্মজীবনী প্রাণস্পর্শী ভাষায়,  
কত নায়ক,  নায়িকা,  আর পার্শ-অভিনেতা,  
তাঁদের নিয়ে মুখে-মুখে রটে যেত কত কথা,
তাঁদের কেউ হলেন ইতিহাস নাম-খ্যাতি-সম্পদে,
কেউ বা হারিয়ে গেলেন জীবনের নানা দুর্যোগে,
এদিকে একটা-একটা করে
                 রঙ্গালয়ের সংখ্যা বাড়ে,  
থিয়েটার মানে
 আভিজাত্য হয়ে গেল সমাজ সংসারে !

কলিকাতায়  বাড়তে থাকে
           ক্রমশঃ জমক আর মেধা,
কলিকাতা মানেই যেন
           থিয়েটারের প্রজ্ঞার শোভা !  

কেবলি কলিকাতা নয়,   
  পরপর অন্য সব শহর ও শহরতলি,  
      ও গ্রাম-গঞ্জের ভিতরে,
         বা মুক্ত হাওয়ায় নদীর ধারে,
জমিদার বা অবস্থাপন্ন পরিবার দিগের
     মাঝে হতো রেষারেষি  
       কে কত ভালো থিয়েটার করাতে পারে !  
সেই সাথে থিয়েটার শেষে ---
   মাঝরাতে হল্লা করে খাওয়া দাওয়া,  
     আরও  কতকি আলোচনা,  
থিয়েটার মানেই যেন অন্য জগৎ,  
     কাউকে বুঝিয়ে এটা বোঝানো যায়না !

তৈরী হতো নানা ক্লাব,
              তারা  থিয়েটারের মাধ্যমে --
সমাজে বাড়াতো মর্যাদা ---
              নানা উৎসব অনুষ্ঠানে !  

ইস্কুল,  কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে --  
থিয়েটারের চলন শুরু হলো
         আভিজাত্যের বিশেষ প্রত্যয়ে !

সতেরশ আটাত্তর সালে
         হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়
সর্বপ্রথম প্রথম মুদ্রণ যন্ত্র
        এসেছিলো এই বাংলায় !  
কিন্তু অতি সাধারণ ছিল
    সেটি প্রযুক্তিগত মানে,
পরপর ধীরে-ধীরে
   উন্নত হতে থাকে
              সময়ের ব্যাবধানে !  

এবং তা অনেক বছর পর
  এলো ঢাকা আর কলকাতাতে,
তাই তো প্রথম সময়ে
 থিয়েটারের চাউর হয়নি পত্রপত্রিকাতে !

এদিকে যখন
     কলিকাতায় চলে এলো মুদ্রণ যন্ত্র,
ছাপা  হতে থাকে  তখন
     পত্রপত্রিকা সহ কত গ্রন্থ !

সেই সময়ের সব
     সাদা কালো মুদ্রণ পত্রিকায়--
থিয়েটার নিয়ে লেখা হতো
                     কতকি যে ভাবনায় !

নাট্যকর্মীদের ছবি ও
         জীবনের নানা তথ্য সহ,  
পুরানো কলকাতায় ঘরে-ঘরে
          ছিল তাই রোমাঞ্চবহ !

সেইসব পুরানো পত্রপত্রিকা
            ও গ্রন্থ এখন হাতে পেলে --
কোথায় যে চলে যাই
            সেইসব পৃষ্ঠায় চোখ মেলে !  

ক্রমে-ক্রমে এলো বিদ্যুৎ আর
         আধুনিক রূপান্তর,  
কিন্তু থিয়েটার থাকলো
         থিয়েটারের মতন প্রখর!

যারা প্রশ্ন করে ,  
    থিয়েটার থেকে আসে কত টাকা !  
তারা তো জানে না হায় --
    তারা যেখান থেকেই যা আয় করে --
     তার পিছু তো আছে থিয়েটারের চাকা !  
       হয়তো বা একটু আঁকা বাঁকা !

একবিংশ শতকের শুরুর
       কিছু আগে থেকে --  
রঙ্গালয়গুলি পরপর
     বন্ধ হতে থাকে নানা দুর্যোগেতে !

বিষণ্ণ হতে থাকলো কলকাতা --
            চিন্তনের  গভীরতায়,  
থিয়েটারের অতীত উড়তে থাকলো
           স্মৃতির এক গভীর হাওয়ায় !

থিয়েটার মানে প্রতি মুহূর্তে
      নতুন কিছু শেখবার সুখ,  
থিয়েটার মানে
  স্থূল ভাবনায় বাঁচা হলো মনের অসুখ !

মহাবিশ্বে যেখানেই হোক
      উন্নত প্রাণের কোনো সভ্যতা,  
সকল স্থানেই থাকবে
 থিয়েটারের অনুরূপ কোনো শিল্প সত্বা!  

বিজ্ঞানের পরীক্ষাগার,
     সেটাও তো একটি মস্ত থিয়েটার,  
বহু বিচিত্র চিন্তা চেতনার এক
                       বিস্তারিত আধার !  

চেতনার নৈকট্যই দিতে পারে  
                নৈকট্যের মোহনীয় বৈধতা,  
এর বাইরে ভুল সব আইন ---
                 আর ধর্মের কথা !

     এই সত্য শিখিয়েছে থিয়েটার !

ডিগ্রী নয়,  অর্থ নয়,  কিংবা নয় ---
    বাহ্যিক রূপ কিংবা সম্পদের তুলনা,  
জীবনকে সুস্থ রাখে ও স্বাধীনতা দেয়
           দুজনের সম রুচি ও চেতনা !

      এই সত্য শিখিয়েছে থিয়েটার !

সংসার, সমাজ ও পৃথিবীর
   যা কিছুই  দুর্যোগ --
                   এসেছে বারবার,  
সেখানে কোনো-না-কোনো ভাবে
      অমান্য করা হয়েছে থিয়েটার !

বৃহৎ চেতনা ছাড়া
   প্রেম আর দেহসুখ কুৎসিত ও অপরিণত,  
এই সত্য শিখিয়েছে থিয়েটার,  
               আমাদের প্রতিনিয়ত !

প্রতিটি প্রাণ-সত্তায়
    অজান্তে চলে থিয়েটারের নিয়ম,  
এর নামই চিন্তনের প্রকারণের
                উত্তরণ ও বিবর্তন !  
হে মানুষ,  যাবে তুমি কতদূর ---  
                 গ্রহ ও গ্রহান্তরে,
আকাশযান থেকে ভীনগ্রহে বসবাস,
     সবই চলেছে যেন
               থিয়েটারের তেপান্তরে!

কলকাতার বাইরেও তো
        থিয়েটার হতো নানা স্থানে,  
নানা রঙ্গালয়ে,  আর ধনীদের
        কাচারী বা উদ্যানে !   

থিয়েটার-ই তো জন্ম দিয়েছে
       রেডিও,  টিভি, ও  সিনেমা,  
থিয়েটার-ই তো আমাদের শিখিয়েছে
        জগৎকে আলোছায়ায় চেনা!  

থিয়েটার-ই তো জন্ম দিয়েছে
   গ্রন্থ কেনার প্রবণতা,  
থিয়েটার-ই তো শিখিয়েছে
  বইকে ভালোবাসা ও চিন্তাশীল কথা !  

থিয়েটার -ই তো শিখিয়েছে
       শিক্ষা মানে ডিগ্রী নয়,  
শিখিয়েছে জীবনের মানে শুধু
       পড়াশোনা আর জয় !

থিয়েটার-ই তো আমাদের শিখিয়েছে
             উৎকৃষ্ট হাঁটা চলা,  
থিয়েটার-ই তো আমাদের শিখিয়েছে
             সঠিক ভাবে কথা বলা!   

থিয়েটার-ই তো আমাদের শিখিয়েছে
              সুতীক্ষ্ম  বিচারবৃদ্ধি,  
শিখেয়েছে প্রতিবাদ,  আর
              দিয়েছে অন্তরে শুদ্ধি !   

থিয়েটার মানে --- গৃহভৃত্যকেও দিও
          পরিবারের মতোন-ই সম্মান,
থিয়েটার মানে,
     আমি শ্রেষ্ঠ হবো আচরণে,  
          পৃথিবীকে সুস্থ করার জন্য
                     শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান !
            
থিয়েটার-ই তো আমাদের শিখিয়েছে
              সঠিক আচরণ,  
আমাদের যা কিছুই  ভুল --
              থিয়েটারকে দিইনি জীবন !

থিয়েটার মানে  মানুষের
      সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি ও  সম্মান,
থিয়েটার মানে পৃথিবীর সকল শিল্প,
     বিদ্যা,  অংক ও বিজ্ঞান !  

আবার থিয়েটার থেকেই
     শুরু হোক আমাদের পুনর্জন্ম,  
না হলে আমরা যে ক্রমশঃ
      হয়ে উঠছি কেবলি বন্য !

সাতাশে মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস,
             বিশ্বের নবজাগরণ,
উনিশ শ একষট্টি সাল থেকে
             পালিত হয় নিয়ম মতন !

থিয়েটার মানে বিশ্বধর্ম ও
        নিজেকে তৈরী করতে শেখা,   
থিয়েটার মানে ধৈর্য্য,  আত্মসম্মান
       ও বিশ্বকে স্বাধীন চোখে দেখা !  

থিয়েটারের প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায়
             বিকেল ও রাত কলকাতা,  
চলো,  হাওয়ার পোশাক পরে নিই
             সেই সুখ, গোপন ও চাপা !

কিংবা চলো শহরতলি বা গ্রামের
   কোনো পরিত্যক্ত রঙ্গালয়ে,
        ভেঙে পড়া দেওয়াল থেকে বেরোয়  
                কত দীর্ঘশ্বাস,
ওখানে গিয়ে কানপেতে শোনা যাবে
   নাট্যকর্মী ও  দর্শকদের অনেক - অনেক কিছু  
               ও অনেক ইতিহাস !    

অনুভবে কজনেবা বাঁচে,  
      বা বাঁচতে জানে ---,  
               এ বিরাট পৃথিবীতে,  
 যারা জানে,  তারাই তো শুধু  পারে
       ঠিক মত  দিতে আর নিতে !  


                                
---------------------------------------------------------------
( 9 --- 18 সেপ্টেম্বর 2020, Ridendick Mitro )
 
বিঃদ্রঃ :- বিভিন্ন সময়ে পড়া  নানা পত্রপত্রিকার জ্ঞান ও গুগল থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সামঞ্জস্য মিলিয়ে কবিতাটি লেখা ! তবুও যদি কোথাও তথ্যে কোনো ভুল পাওয়া যায় তাহলে তা কোনো ভাবে জানতে পারলে সেই তথ্য replace করে কবিতার রস ঠিক রেখে নির্দিষ্ট অংশটি এডিট করে দেওয়া হবে ! তাই তথ্যে কোথাও কোনো অংশে ভুল থাকলে সেটা কবিতার ত্রুটি বলে গণ্য হবে না,  তথ্যের ত্রুটি বলে গণ্য হবে, এবং সেটা সংশোধিত হবে ! আর বানান ভুল কোথাও থাকলে,  সেটা বিতর্কিত ব্যাপার,  কারণ,  বানানের রূপ নিয়ে নানা মতামত আছে ! তবুও যদি বানানে কোথাও অজান্তে কিছু ত্রুটি থাকে কখনো দেখা যায়,  সেটাও কবি দ্বারা সংশোধন করা হবে পুস্তকে লেখাটি মুদ্রিত হবার সময়!

পাঠক পাঠিকাদের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিতে জানাই যে, দশ দিন ধরে নানা সময়ে প্রায় ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বার মত কাটাকুটি জোড়াজুড়ি করে কবিতাটিকে এই ভারসাম্যে নিয়ে এসেছি! এই দশ দিনের মধ্যে অন্য অনেক লেখা লিখলেও, এই কবিতাটি তৈরী করতে এইরকম পরিশ্রম নিয়েছে ! বহু তথ্য ও অনুভূতির সমন্বয় এনে, ও ছন্দের চলনে ও অন্তমিলের নানা ঢেউয়ে বিষয়টির স্বাদকে সুখকর করতে গিয়ে এই পরিশ্রম ছাড়া অন্য  উপায় ছিলোনা ! যদিও কেমন হলো,  সেটা পাঠক পাঠিকার বিচারের ওপর নির্ভরশীল! : কবি  




Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.