লিখেছেন, পিনাকী চৌধুরী
১৯৪১ সালের ৭ আগষ্ট, বাংলা সনের ১৩৪৮ এর ২২ শে শ্রাবণ ! ঘনঘোর বর্ষা ! শ্রাবণের অবিশ্রান্ত বারিধারা! মন ভালো নেই কলকাতার ! বস্তুতঃ সারা শহরবাসী যেন অপেক্ষমান , তাঁদের প্রিয় বিশ্বকবিকে শেষ বারের মতো দেখতে ! জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তখন যেন তিল ধারণের জায়গা নেই ! ঠাকুরবাড়ির অনতিদূরে শববাহী শকট তৈরি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্তিম যাত্রার জন্য। শহরবাসী যেন চোখের জলে বিদায় জানাচ্ছেন বিশ্বকবিকে ! অন্তিম যাত্রায় চললেন বিশ্বকবি। পড়ে রইলো তাঁর বিশাল লেখনী সাম্রাজ্য ! অগণিত পাঠক ! ঠাকুর বাড়ির দালানে তখন যেন এক সর্বগ্রাসী নৈরাশ্য বিরাজ করছিল ! বিষাদের সুর বাজছে ! বাস্তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো শুধুমাত্র একটি নাম নয়, বলা ভাল প্রতিষ্ঠান।
তবে বিশ্বকবি কিন্তু তাঁর শৈশবকাল থেকেই নিজের সাথে যুঝে নেওয়ার ক্ষমতা রপ্ত করেছিলেন । অনেক কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতি তিনি সামলেছেন খুব দক্ষ ভাবে ! বিষাক্ত সমালোচনাকেও তিনি তেমন একটা পাত্তা দেননি ! বাস্তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সাহিত্যের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ! ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরও কিন্তু মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯১৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন , আর তার পরের বছরই তিনি ডিপ্রেশনের শিকার হলেন ! তখন মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ক্রমে ক্রমে ভেঙে পড়তে লাগলেন ! তাঁর ভিতরের সেই জ্বলন্ত অঙ্গার কেমন যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেল ! নড়বড়ে হয়ে যায় তাঁর সমস্ত সত্তার ভিত ! বিশ্বকবি কেমন যেন দিশেহারা হয়ে পড়লেন ! দর্শকদের করতালি বা পাঠকদের উচ্ছ্বাস আর তাঁকে আলোড়িত করতে পারলোনা ! তারও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে বিশ্বকবির শরীর ভাঙতে থাকে ! বয়স যেন তখন তাঁকে জানান দিচ্ছে ! তবুও এক অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হয়ে আধশোয়া অবস্থাতেই তিনি লিপিবদ্ধ করে চলেছেন তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ের দিনগুলির কথা , যা ফুটে উঠেছে বিশ্বকবির 'আরোগ্য' , ' জন্মদিন' কিম্বা ' রোগশয্যা' রচনায় ! যদিও এইবছর করোনা আবহে ২২ শে শ্রাবণ সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল হচ্ছে ! কিন্তু আমরা কি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্পূর্ণ রূপে জানতে পারলাম ?
বোধহয় না ! বাস্তবে রবীন্দ্রনাথকে জানতে বা বুঝতে হলে আমাদের সেই আটপৌরে অনিশ্চয়তার জীবনে উঁকি মারতে হবে ! কখনও সখনো আবার সেই চিরাচরিত অম্ল মধুর প্রেম অপ্রেমের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে ! কখনও আবার নগ্ন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে নাগরিক জীবনে থেকে হারিয়ে যেতে হবে ...... ! তবেই ! আজকাল অনেকেই আমরা ২৫ শে বৈশাখ এবং ২২ শে শ্রাবণ ঘটা করে পালন করি ! কিন্তু ওই পর্যন্তই ! বাস্তবে রবীন্দ্রনাথকে জানা বা বোঝা বোধহয় অত সহজ নয় ! সোশ্যাল সাইটে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান আপলোড করাটাই শেষ কথা নয় ! আমাদের যাপিত জীবনের সুখ দুঃখের সাথে একাত্ম হতে আমরা ক'জন পারি ? প্রশ্নটা থেকেই যায় !
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন