ডিম !!! : শান্তময় গোস্বামী

শান্তময় গোস্বামী

ডিম !!!

শান্তময় গোস্বামী

আমার এক সুপ্রতিবেশীর বাবার বর্ধমানে হাঁসের ডিমের ব্যবসা আছে। তিনি বাপের বাড়ি গেলে মাঝে মধ্যে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। আমাকেও খাওয়ান। সেদিন সেই কথা তুলতেই দেখি আমাকে মেসেঞ্জারে একটা আস্ত হাঁস পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আমারও একটা ছোটবেলা ছিল। সেখানে আমার প্রিয় খাদ্যবস্তুদের মধ্যে একটা প্রধান ছিল ডিম। তখন লোকে ডিম বলতে হাঁসের ডিমই বুঝতো। ছোট্ট ছোট্ট টল সাইজের মুরগীর ডিম যেগুলো এখন পাওয়া যায়, কোন অজ্ঞাত কারণে শুধু আমাদের নয়, অনেকের বাড়িতেই তখন তার প্রবেশাধিকার ছিল না। তখন মায়েরা কোন অজ্ঞাত কারণে, আমাদের ভাইবোনদের আধখানা করেই ডিম দিত। আমরা ঠাট্টা করে বলতাম ‘তবলার তরকারি’। যদি কোনদিন ভাগ্যক্রমে শিকে ছিঁড়ে গোটা ডিম পাতে পড়তো, তখন আগে খোসাটা খেয়ে কুসুমটা রেখে দিতাম শেষে তারিয়ে তারিয়ে খাবো বলে। একটু বড় হয়ে ল্যাজ গজাতে আমলাদহি বাজারে নন্দ কাকুর  সানসেট ইয়েলো রঙের ঝোলে ডোবানো ঝাল ঝাল সে ডিমের স্বাদ আজও জিভে লেগে। কেউ হঠাৎ করে কারুর বাড়িতে এলে কমন মেনু ছিল প্রচুর দুধ চিনি মেশানো লিকার চা আর গাদা গুচ্ছের পিঁয়াজ কাঁচালঙ্কা মেলানো মামলেট। শব্দটার উৎস যে ফরাসি মার্মালেড নয়, তা বড় হয়ে জেনেছি। বাসন্তী ইনসটিটীউটের পাশে কফি হাউসের চিকেন অমলেটে তখনো আমার দীক্ষা হয় নি। বিদেশের চিজ বা বেকন অমলেট তো অনেক দূরের জল। 

তখন সবাই মামলেটই বলতো। আমলাদহি বাজারে, সন্ধ্যে হলেই একটু কেমন আলো আঁধারি গোপনীয়তার সঙ্গে তখন যে ডিমভাজাওলারা বসতো, তাদের চারপাশের সুবাস চুম্বকের মতো টেনে আনতো, কঠোর নিরামিষাশী বাড়ির ছেলেপুলেদের। প্রেমিক স্বামীরাও বেডরুমের গোপন মোহময়তাকে আর একটু গাঢ় করার জন্যে ঝোলা শার্টের পকেটে করে পাতায় মুড়ে নিয়ে যেত সেই স্বর্গীয় সুখাদ্য। পোচ ব্যাপারটা আমাদের ছেলেবেলায় তত চালু ছিল না কিন্তু। তবে আর একটা জিনিস ছিল, ডিমের ডেভিল। আধখানা ডিমের কুসুম বার করে তাতে পুর ভরে, সে এক অবিশ্বাস্য স্বাদ। আমলাদহি বাজারে নন্দ কাকুই একমাত্র জানতেন এই স্বাদের আল্টিমেট কি।  

একসময় আসানসোলে কোয়েল চাষ হত। প্রচুর কোয়েলের ডিম তখন খেয়েছি নিয়মিত। এখন স্পেন্সার থেকে আমরা ডিম কিনি। কতরকম ডিম। অরগানিক ডিম, ডাবল কুসুম ডিম। আবার খুব ছোট সাইজের ব্রয়লারের ডিম সারা রাত ফেলে দেওয়া চায়ের পাতায় ভিজিয়ে রাখলেই পরদিন দেশী মুরগীর ডিম বলে বাইরে বিক্রি হয়। আমার এখনো শুধু হাঁসের ডিমই ভালো লাগে। বৌয়ের হাতের তেল সপসপে ডিমের পিঁয়াজী। সঙ্গে পরোটা। আঃ, তুলনাহী্ন কম্বো…।

এরপর ডিম নিয়ে একটি ব্যক্তিগত সত্যি গল্প বলেই শেষ করবো আজ। রাখালদা (পদবী ইচ্ছে করেই বাদ দিচ্ছি) তখন আমাদের ১৮ নম্বর শপের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এম সি এম। আমি ওনার খানিক নীচে। তো কারখানা ফেরত আমি আর রাখালদা গাড়ি নিয়ে একদিন আমলাদহি বাজারে দত্ত বাবুর ডিমের দোকানে (মাছের বাজারে)। ‘ছটা ডিম দাও তো’ । রাখালদা উবাচ। দোকানের ছেলেটা দিয়েছে। ‘কি ছোট ছোট ডিম দিচ্ছিস দত্ত, আজকাল আর বড় ডিম আনিস না নাকি?’ দত্ত বাবুর তৎক্ষণাৎ স্মার্ট ওভার বাউণ্ডারী, ‘রাখাল, আজকাল ওই ডিম পাড়তে মুরগীর পোঁদ ফেটে যাচ্ছে, তুই  আরও বড় চাইছিস ?’
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.