মৃদুল শ্রীমানী
গতকাল ত্রিশ মে ছিল মহান দার্শনিক চিন্তাবিদ লেখক ভলতেয়ার এর প্রয়াণ দিবস। ১৬৯৪ সালে, ২১ নভেম্বর তারিখে ফ্রান্সের পারী শহরে তিনি জন্মেছিলেন। তিরাশি বছর বয়সে, ১৭৭৮ সালের ত্রিশে মে তারিখে, ওই পারী শহরেই ভলতেয়ার প্রয়াত হন।
ছোটবেলায় নাম ছিল জোজো। ছোট্ট জোজোর বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে তাঁর আইনজীবী হোন। জোজো তা চান নি। তিনি ভেবেছিলেন যে লেখক হবেন। স্কুল ছাড়ার সময়ই জোজোর ওই সিদ্ধান্ত। বাবা পাঠালেন এক নোটারি আইনজীবীর কাছে শিক্ষা নবিশি করতে। জোজো ওপর ওপর দেখায় যে সে কাজ শিখছে, আসলে লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখে। প্রথম থেকেই জোজোর কবিতা লেখার হাতটি ছিল ভাল।
বেগতিক দেখে বছর ঊনিশের জোজোকে বাবা রাষ্ট্রদূতের সচিবের কাজ জুটিয়ে দিয়ে নেদারল্যান্ডসে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে গোলমাল পাকালেন ছেলে। কি গোলমাল? না, প্রেমে পড়লেন এক রিফিউজি মেয়ের। তাও কেমন রিফিউজি? প্রোটেস্টান্ট রিফিউজি। ভদ্রলোকের ছেলে হয়ে রিফিউজি মেয়ের সাথে প্রেম? ঢি ঢি পড়ে গেল। তাড়া খেয়ে ফিরে এলেন তিনি। ১৭১৮ সালে নিজের নাম রাখলেন ভলতেয়ার। তখন বছর চব্বিশের যুবক। সরকারের নানাবিধ অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ করতে সিদ্ধহস্ত এক নওজোয়ান।
রোমান ক্যাথলিক চার্চের দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেন, খ্রীষ্টধর্মেরও বিরোধিতা করেন, আর বাকস্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। বলেন ধর্মপালন যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বলেন চার্চের সাথে রাষ্ট্রকে গুলিয়ে দেওয়া চলবে না। চার্চ আর রাষ্ট্র দুটো জিনিস। তাদের আলাদাই রাখতে হবে।
ভলতেয়ার নামে বিশ্ববন্দিত হলেও, ওঁর প্রকৃত নাম ছিল ফ্রাঙ্কয়েস-মারী আরুয়েৎ। রাজনৈতিক দার্শনিক হিসেবে সর্বোচ্চ খ্যাতি পেলেও তাঁর সুগভীর সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বের নিদর্শন ধরা আছে কাঁদিদ, মেমনন, ভিসন দে বাবুক প্রভৃতি গ্রন্থে। শিক্ষাতত্ত্ব নিয়ে তাঁর অসামান্য চিন্তা লিপিবদ্ধ আছে লেটার দে আকাদেমি বইতে।
ভলতেয়ার রাজনীতির দর্শন ছাড়াও ইতিহাসের দার্শনিক বিচার বিশ্লেষণ করেছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভাবনা বিকাশের জন্য তিনি সুপরিচিত।
বিজ্ঞান বিভাগে গভীর আগ্রহ ছিল তাঁর। এক অনুরাগিণী জুটিয়ে নিয়ে চুটিয়ে পড়াশুনা করতেন। আর করতেন বিজ্ঞান নিয়ে হাতে কলমে চর্চা, পরীক্ষা নিরীক্ষা। খুব ভালবাসতেন আইজ্যাক নিউটনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে। একটা বই লিখে ফেললেন, এলিমেন্টস অফ দি ফিলজফি অফ নিউটন।
সঙ্গিনীকে নিয়ে যেন আগুন নিয়ে খেলতেন জোজো। আগুন জিনিসটা ঠিক কি তা বুঝতে চাইতেন। আর বুকের ভিতর, মেধা ও মননে জ্বালতেন আগুন।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে রসিকতা করে ভলতেয়ার বলেন God is a comedian playing to an audience too afraid to laugh. ব্যক্তি মানুষের মননের স্তর বোঝা যাবে কি ভাবে তা আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন Judge a man by his questions rather than by his answers. মতপ্রকাশ ও মতপার্থক্যজনিত দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ সমাজে কী সংকট তৈরি করে বোঝাতে তিনি বলেন Opinion has caused more trouble on earth than plague or earthquakes. তবে আমার কাছে তাঁর সেরা কথাটি হল Common sense is not so common. আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি কমন সেন্স বা সহজ বুদ্ধির অভিষেক ঘটে, তাহলে পৃথিবী বদলাবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন