শ্রী শ্রী মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য : ঋদেনদিক মিত্রো

ঋদেনদিক মিত্রো 

শ্রী শ্রী মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য 
 
ঋদেনদিক মিত্রো 

[ কবিতায় প্রবেশের আগে বলি,  মহাপ্রভুর সময়কাল (18 ফেব্রুয়ারী 1486, ফাল্গুনী পূর্ণিমা দোলযাত্রা উৎসব ,  নবদ্বীপ,  নদীয়া,  ভারত - 14 জুন 1533,  মতান্তরে 15 34 শ্রীক্ষেত্র জগন্নাথপুরী,  উৎকল বর্তমানে উড়িষ্যা,  ভারত   ) ও শ্রীখোল মন্দিরা নৃত্য সহ নাম গানের যে-দোলা,  সেই রূপকে মেলে ধরার জন্য সেই ধরণের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে ! সেই স্বাদ টা পাঠককে বুঝতে হবে! এবং বিশেষ-বিশেষ ক্ষেত্রে "অ " যোগে উচ্চারণ করতে হয়  এই জাতীয় ভক্তি মার্গের কবিতা ! যেমন :- " স্বেত = স্বেত+ অ = স্বেতঅ "   ইত্যাদি !
এই জাতীয় পদ্ধতিগুলি না বুঝলে এই জাতীয় কবিতার রস উপলব্ধি করা যায় না!অনেকে এটা জানেন,  অনেকে নানা কারণে নাও জানতে পারেন,  তাই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হলো  যাতে সকলেই এই রস উপলব্ধি করতে পারি ! ]

           🧚🏻‍♂️🌾🍓🍐
কোথা সে-জাগরণ---বঙ্গে সে-জীবন,  
     তুমি হে মহাপ্রভু সুশীতলম,
শ্রীখোল, মন্দিরা--- তাহাতে মজিয়া, 
     তোমরা করিতে নাম কীর্তন! 

জন্ম  নবদ্বীপে--ফাল্গুনী পূর্ণিমাতে  
      আঠেরো ফেব্রুয়া' চৌদ্দ ছিয়াশি, 
দোলের  উৎসব-- ছিল যে  কলরব 
     জগন্নাথ মিশ্র -শচী বাটী !

পুরী-সাগর জলে -- মিশেছ    নীলাচলে, 
       রহস্যময় ছিল সে  প্রস্থান, 
খ্রিস্ট চোদ্দ জুন-- নিয়েছ শেষ ঘুম,
       পনেরো তেত্রিশে পুরীর  ধাম!

পূর্ব নামী তো --বিশ্বম্ভর মিশ্র, 
       নিমাই পন্ডিত,   গৌরাঙ্গ চন্দ্র,
নতুন প্রাণ শুরু -- পাইয়া জ্ঞান  গুরু, 
       স্বামী ঈশ্বরপুরী  দিলা মন্ত্র!

সন্যাসের গুরু -- আরেক রূপ  শুরু, 
       তিনি তো স্বামী কেশব ভারতী,
তাহার পর  ভাসো- মানব  কাছে আসো,
      মানুষে চিনাইলে মানব সুমতি!

স্ত্রী ও সন্তানে -- রাখিয়া গৃহ ধামে, 
       নীরবে বাহিরিলে দূরান্ত, 
জগৎ বিশ্বরে -- জড়ায়ে যারা ধরে, 
       তাহাদিগের সুখ অক্লান্ত!

তবুও মানবিক -- মনটা চাহে ঠিক, 
       কোমল নরম রমণী হাত, 
মধুর জোৎস্নায় --কী সুখ জানালায়, 
        রূপকথা মাখা প্রাণিত রাত !

সকলি ভুলে গেলে  -- গোপনে তবু খ্যালে , 
         বোধের গভীরে দেহজ প্রেম, 
জীবের রিপু তাই --- কামের সুখে ধাই, 
         কত না অনুভূতি সে লেনদেন !

সবকে দিয়ে ঠেলে -- তুমি কী সুখ পেলে, 
        তুমি জানিতে সে গভীরতা, 
এ মহা বিশ্বের -- বিরাট আঁধারের 
         লক্ষ তারা সম কী সুখলতা!

এসব সুখ বয়ে--- সঙ্গীদিগ-লয়ে,
       দিগন্তরে তবে ধাইতে সব, 
মধ্যযুগে সেই --- মুক্ত হাওয়াতেই 
       ছিলো সে দিন গুলি মোহিনী স্তব !

নদীয়া সেই মাটি--- সেথায় আজও হাঁটি, 
      পাইনা সে দিবস, বিকাল,  রাত, 
 সেই যে হাওয়া ছিলো-বহিয়া যাওয়া ছিলো,
       সঙ্গীসাথী লয়ে কী বাজিমাত!

গ্রামের মানুষেরা-- বিস্ময়েতে  ঘেরা, 
       দেখিতো দূর হতে নামের দোল,
কতনা লোকসনে -- মজিছে আনমনে, 
        জগাই মাধাই মিলে অমৃত বোল! 

পবন বহিত  -- শীতল হইতো 
         বহিয়া যাইতো বেলা সময়, 
কোনো গৃহস্ত---ভাবিয়া ত্রস্ত, 
         ডাকিয়া সেবা দিয়া ধন্য হয় !

সে-সব গাছপালা, -- সেসব নদীনালা, 
          সেসব খালবিল পুকুর বন, 
তাহারা আজও আছে-- আনাচে কানাচে, 
         তোমরা নাই শুধু সে মনোরম !  

কত শ বছরের -- গূঢ় অনুভবের 
          চিত্রগুলি হয় নীরব সুখ, 
সেই সে বাঙ্গালা---মুক্তি জানালা, 
           বিশ্ব জুড়ে আজ ঈর্ষরূপ!

কৃষ্ণ আর রামে---মিলায়ে দুই নামে, 
           রচিয়া ছিলে তুমি কী আলো স্নান, 
বিশ্ব বাতাসে --- আকাশে-আকাশে, 
            ছড়ায়ে যায় স্বত তা অবিরাম!

শিশু বা মূর্খ ---- ইতর রুক্ষ, 
            সকল নর নারী মজে তাহায়, 
কী নাম দিলে প্রভু--অজ্ঞ গৃহ বধূ, 
           কর্ণে পশিলে মজিয়া যায় ! 

পশু ও পাখি,  কীট --- তাদেরও সম্বিৎ, 
           কৃষ্ণ-রাম নামে স্থিতধী হয়, 
হে মহাপ্রভু তুমি---ছিলে হে কোন গুণী, 
           সকল জীবমন করিলে  জয় !

নানান যুগে কালে---কী রহস্য জালে, 
           তোমরা নানা নামে আবির্ভাব,  
জীবের ব্যাধি, জ্বরা---স্বার্থমোহে মরা, 
           তাহাই রুখিতে হও সজাগ!

তাহার পর কবে ----আপন উৎসবে, 
            কোথায় যেন যাও মিলাইয়া, 
অমৃতে রহে যারা---মরেনা কভু তারা, 
             জ্ঞান ও চেতনা  বিলাইয়া! 

স্বেত বস্ত্রে ---- প্রেমের অস্ত্রে 
           এতো কী ক্ষমতা তোমাদিগের!
শ্রীখোল,  মন্দিরা --- অরূপ মদিরা, 
           কী খেলা ছিলো সব শ্রী অঙ্গের! 

নিঃস্ব ফাঁকা মাঠে -- পথিকেরা যে হাঁটে,
           আজ কি এরা পায় সে দিনি স্বাদ! 
পায় কি সেই রোল --- ছন্দ চঞ্চল, 
          কৃষ্ণ-রাম নাম মত্ত ভাব ! 

তোমারই নামে আসি -- অমৃতে যায় ভাসি,
          তোমারই মাটিতে বিদেশীগন, 
সকল ভোগ ফেলে-- দিলো যে প্রাণ ঢেলে, 
         চমৎকার সেই বিচ্ছুরণ!

মানব সত্বায় --- সব তো চলে যায়, 
          মোহনী যৌবন জ্বরায় শেষ, 
তাহার মাঝে প্রাণ--- করিলে নাম গান, 
          কী এক না-কওয়া শান্তি রেশ !

তাহাই  সনাতন---যাহাই মনোরম, 
        তাহাই ধর্ম যাহা আলো, 
ইহার বাহিরে---কিছুতো নাহিরে, 
        সরল জীবনে প্রাণ ঢালো ! 

সহজ কথা, কাম--- তাহাই সম্মান, 
      নহে তো ক্ষমতার লোভ লড়াই, 
মানব প্রাণ তো ---অতীব তুচ্ছ, 
     কাহার প্রতি কেন তোর বড়াই !

লোভের দৃশ্য ---তাহা অস্পৃশ্য, 
     লোভীই ঘৃণ্য,  ধর্মহীন, 
ধর্ম একটাই --- মানব সত্তাই 
     জ্ঞানে ও সততায় হও  সৌখিন!

একথা নানা রূপে ---আসিলো নানা সুখে,
       নানান মহানের বাণীতে যা,  
তাহাই নানা নামে --- ধর্ম রূপ দানে, 
      নানান ধর্মের হয় সংজ্ঞা! 

আসলে যাহা ভালো---সনাতনের আলো, 
     এটাই সত্য চিরন্তন,  
 সব মনুষ্য --- কেহ না তুচ্ছ, 
     সেই তো ধার্মিক,  মহৎজন !

তাহাই নাম গান --অসীমে ভাসে প্রাণ, 
         স্পর্শ পাই নাই অনিঃশেষ, 
নহে এ সংসার---পৃথিবী চারিধার, 
        অনন্ত-ই হলো সবার দেশ! 

ইহাই সনাতন--- ধন্য এ জনম, 
       যদি বা বোঝো সেই অনুভূতি, 
তোমার চেয়েও আর ---হবে না কেহ আর, 
      এই জগৎ মাঝে কেহ সুখি !

যে কহে হরিনাম --তাহার জাতি মান 
         উচ্চ হয়ে যায় একেলা একেলা, 
ব্রহ্ম ব্রাহ্মণ-এ --- বসে সে একাসনে, 
        তাহারে আর নিচে যাহেনা ঠেলা !

ব্রাহ্মনের  মানে ---কজনে ঠিক জানে, 
        শুদ্ধ দেহ মন আছে যাহার, 
জগৎ কল্যানে -- যাহার মন টানে, 
         তুচ্ছ কীটে ও প্রেম তাহার ! 

ভুল সে করিলেও -- তাহার মন দেহ, 
         হইবে চঞ্চল গভীরে খেদ, 
ভুলকে সরাতে -- তড়িৎ ত্বরাতে 
        ব্যাস্ত হইবেই তাহার জেদ ! 

এসব অনুভব -- তাহাই জ্ঞান স্তব, 
        জগৎ বিজয়ের মূর্ছনা, 
যে জন সজ্জন -- সেই তো ব্রাহ্মণ, 
        গুণ ছাড়া কেহ উচ্চ না !

ইহাই ছিল কথা -- তোমার গভীরতা, 
       নামের আলাপনে জানাইতে, 
যবন হরিদাস --পাইলো কী বিলাস, 
      হরির নামে তারে আনাইতে!

সহজ লাভ ক্ষতি---তাহাতে নাহি জ্যোতি, 
          কেবল ভ্রম সবই,  সর্বনাশ, 
মানব-বোধ কহে ---যে জন নামে রহে, 
         ঘুমের পরেও সে পায় আকাশ! 

যা দেখ জাগতিক---যতটা তাহা ঠিক, 
         তাহার পরে আছে আরো সুদূর, 
তাহাই পাইতে --নামেতে যাইতে, 
          শুদ্ধমন পরে নাম-ঘুঙুর!  

তুচ্ছ কলিকটা -- বানায়ে কবিতা, 
      মহাপ্রভু তোমার  জায়ারে দিতেছি, 
যে-নারী সহিল -- যাতনা বহিল, 
       পুরুষ বিহনে দুঃখ সেকি ! 

তাহারও ত্যাগে তুমি-- রচিলে নিজ ভূমি, 
        বিশ্ব প্রান্তরে মূল্য মান, 
তাই তো তোমারে -- লয়ে যা লিখি বারে, 
         তোমার জায়ারে দিই সম্মান ! 

প্রথম যে জায়া  -- অকালে ছাড়ে মায়া, 
       সর্পাঘাতে আসে তাহার ঘুম, 
তাহারও প্রেম স্থিত -- তোমারে ভরে দিতো, 
      জৈব অনুভবে সুখ কুসুম!

দ্বিতীয় জায়া  যে -- তোমার মায়াতে 
     কাটাতো রাত্রি কত প্রহর,
তখন কোনো স্থানে -- কৃষ্ণ রাম নামে,  
     মাতায়ে চলিছ মাঠ প্রান্তর !  

সে সব দিন রাত -- দেয়না আজ সাথ, 
       সেসব মানুষেরা আজকে কই, 
সে সব হাওয়া গাছ -- সে সব পাখি নাচ, 
        কল্পনায় দেখে মুগ্ধ হই !


----------------------------------------
* আমি কোনো পদকর্তা নই,  সেই মহান শুদ্ধতা বহিবার যোগ্যতা দেখাইতে নাই বা পারি,  কিন্তু,  আধুনিক সময়ের ভাষা-গুণের সহিত মধ্যে যুগের কিঞ্চিৎ ভাষা আদল মিশ্রনে চেষ্টা করিয়াছি মহাপ্রভু লইয়া কবিতা রচনা করিতে,  পূর্বে ও করিয়াছি এই চেষ্টা, তবে তাহা ছিলোনা এমন ভাষা,  কিন্তু,  সেগুলি ও ছিলো একরকম,  আর ইহার রূপ পাইলো অন্য রকম,  মনটা বিশেষ তৃপ্তিতে ভরিয়া উঠিল,  পাঠক পাঠিকা গন তৃপ্তি লাভ করিলে শ্রম সার্থক :-- কবি

(মতান্তরে মহাপ্রভুর প্রস্থান কেহ বলেন পনেরো শ তেত্রিশ,  কেহ বলেন চৌত্রিশ,  তাই কবিতার ভিতর কেহ 'তেত্রিশ ' এর স্থানে  ' চৌত্রিশ'  বসাইতে পারেন,  মাত্রা নষ্ট হইবে না !  )
----------------------------------------
( 1:58 ভোর রাত্রি,  ও সকাল ও সন্ধ্যে  ও রাত্রি 25 মে 2020)
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.