কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা
কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

বাউলানা_৫০

পাঁজরের হাড় নজর কিছু কম মানে?
বাক্যরাও সাক্ষ রাখে সম্মানে
ভাটের কথায় হাত রেখেছি বার খেয়ে
                          বুঝলি মেয়ে?

ভালোই জানি- আলোর নাচন কোনদিকে
গরাদ বড় আশকারা দেয় বন্দীকে
জেগেই ছিলাম- তাও হয়েছে বুক চুরি
                     বুঝলি ছুঁড়ি?

তবুও লুকাই চরিত্রময় গানটাকে
ডিসেম্বরে বলবো এবার সান্টাকে
ক'দিন যেন দয়া করে দেয় ছুটি
                         বুঝলি মুটি?

হাজার খানেক বাজারজাত কল্পনায়
দোল খাচ্ছে মানচিত্র। গল্প না
বাউলানা মেনে তো বুক হাতড়াই
                             বুঝলে রাই?

                ৫১

হাড় থেকে মাংস খসে গেলে
শূন্যতা গ্রহণ করে খাঁচা
খাঁচার ভিতর চেনা পাখী বিশ্বাস হারায়।

পায়ের ভূমিকা গৌণ হয়ে যায়
হাড়ে পচনের গান লেখা হলে।
হাঁ মুখ মাটি বড় আনন্দে বাঁচে

এই মতে সংসারী মানুষেরা হাসে
মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত
শামিয়ানার আড়ালে থাকে চোখ।

নজরে নজর মিলছে না বহুযুগ
কার এত বুকের পাটা আছে
বিশ্বাসঘাতক সময়কে অস্বীকার করে!

৫২
কাজল মুছে গেলে খালি চোখ বোঝে
প্রান্তিক বেহায়াপনা কাকে বলে
কত আর ব্যক্তিগত আলমারি সামলে
দীর্ঘশ্বাস লুকাবে বন্ধ ঘর।

তালাচাবির আরব্য রজনী ঘুরে ফিরে
জায়গা বাঁধে পরিকল্পিত উদ্যানে
সাজানো গোছানো পোশাকের ভিতর
উইপোকা কুরে কুরে খায় হাড়মাস।

নির্জলা সূর্যোদয় ঘিরে বয়কট হয় না
অসুখের পরে যেদিন ডালভাত হাসে
তাকেই একখন্ড স্বর্গ বলা যায়।
কাজল মোছা খালি চোখ বোঝে...

                ৫৩

যেমন লাগুক গেঞ্জি এবং জিন্সে
মেয়ে দেখি আধুনিকতা কিনছে
স্বপ্ন দেখে রাস্তা হাঁটে আকছার
সামনে পিছে মাগী কিম্বা মিনসে

দিনের কথা রাত মেনেই কাটছে
সেই খবরে পুরুষালী ফাটছে
হাত আর চোখ সমান সমান দায় নেয়
গোটা শরীর অমানুষিক খাটছে

ঝিঙ্কু মনি বিন্দাস হাঁটে রাস্তা
পাগলু বুকের নজর বড় খাস্তা
যদা যদা হি ধর্মস্য লিখছি
বেবস,তুঝে হ্যায় খুদা কি বাস্তা

মেয়েটা দারুন মানচিত্র চিনছে
রাতকে যদি দিন ভাবি তো দিন সেই
স্বপ্ন দেখে রাস্তা হাঁটে আকছার
যেমন লাগুক গেঞ্জি এবং জিন্সে

                   ৫৪

স্রোতের মুখে শরীর ছেড়ে দিচ্ছি
পাক খেয়ে ঢুকে যাচ্ছি জলের গভীরে
ভাসতে ভাসতে পাথরে ধাক্কা খেয়ে
নশ্বর দেহ উপুড় হয়।
দিকবদল করলে স্রোতে দেহ চিৎ হয়
ভাসছি- ভাসছি- ভাসছি
স্রোত উঠছে- স্রোত নামছে- উঠছে

যেখানে গিয়ে দাঁড়ানোর মাটি পাবো
জলের ভিতর থেকে মাথা তুলে
চেঁচিয়ে বলবো- 'এখনও বেঁচে আছি'

৫৫
আয়না অবিকল আমাকেই দেখায়
আয়না যা দেখে হুবহু তাই দেখায়

আয়না দেখা পুরুষেরা ভীরু হয় না
আয়না দেখা মহিলারা ন্যাকা হয় না

আয়না হাড়ে কাঁপুনি জাগাতে পারে
আয়না রক্তে পরিচয় খুঁজতে দক্ষ

প্রতিবিম্ব জলের মতো সরলতা রাখে
প্রতিবিম্ব জলের মতো জটিল গল্প

কত ডিগ্রি কোণ থেকে আয়না দেখবে
কত মোচড়ে আয়নার সামনে দাঁড়াবে

৫৬
বাড়ীর ভিতর থাকছি খাচ্ছি চল্লিশ বছর
ঘরকুনো শব্দটাকে সঠিক ব্যবহার করছি
চল্লিশ বছর ঘর ছাড়া আমি।

এই প্রলাপের সম্মান দিক কেউ
দৃঢ়তায় এগিয়ে আসুক আলো মেনে
ঘরে ফিরে যাবার কথা ভাববো

যদিও কারো কিছুই যায় আসে না
আমার অভিমানে মেঘ করে থাকে
গাছের একটি পাতাও ঝরে না

বিছানায় ঘুমের প্রস্তাব রাখলে
আমাকেও একদিন হরিনাম সহ যেতে হবে
এই সন্ধি মেনে নিতে আপত্তি আছে।

কে কী ভাবলো তাতে আমার কী?
এই প্রলাপ তো শুধু নিজেরই জন্য।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.