কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা
কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

বাউলানা


রান্নাঘর থেকে খুন্তির শব্দ ভেসে এলে-
দু'হাতে বিক্রম আর বেতালের গল্প মাখি,
গোটা নাটক সামলায় দুই সেয়ানে।

মধ্যান্তর সুযোগে তুলোর বালিশের উপর
সিন্দাবাদের আজব বুড়ো বয়সের দোহাই
দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

চিত্রকল্প জুড়ে অনেকটা খাদ থেকে যায়।

দু'পায়ের নীচে প্রান্তিক আলপথ হেসে উঠলে-
একতারায় ধরা পড়ে হরিয়ালী স্বপ্ন;
শস্যের পরিনয় কথা লেখা হয়।

সর্ষে তেলের চাহিদা জানে জ্বলন্ত কয়লা,
উনুন জ্বলে মাংসের নুন ঝাল হিসাবে-
ডাল ভাত শুধু পৈতৃক নিঃশ্বাসে।

সহসা তারে আর কন্ঠে সুর মিলে গেলে হয়।


কেউ ভেবেছে প্রক্সি প্রেমিক জুড়বে বড় কান্নাকাটি
কেউ ভেবেছে মারবে ছুঁড়ে শখে কেনা খেলনা বাটি
কেউ ভেবেছে মধ্য বুকে জন্ম নেবে মস্ত ক্ষত
শোন ওরে মনুষ্যেতর আমিটা ঠিক আমার মতো।

কেউ ভেবেছে বন্যা থামে ফালতু নামের অহংকারে
কেউ ভেবেছে মাংস দেখে
বাউলের রসনা বাড়ে
কেউ ভেবেছে থাক বিছানা
আরাম নেবে অভ্যাগত
পতিতালয় মাথায় রাখে লিকপিকে এই প্যাংলা মত।

কেউ ভেবেছে সহজ পাঠের শব্দ বুঝি যায় বুড়িয়ে
কেউ ভেবেছে গরীব বুকের হাড়গুলো বেশ যাক গুঁড়িয়ে
কেউ ভেবেছে বুক দুলিয়ে সামলে দেবে বাবু কত
পাগলা হাসে হাঃ হাঃ হাঃ স্বপ্ন তো সেই আগের মত।

কেউ ভেবেছে দুই পা জানে কাদের আঁধার কোথায় মেশে
ভাবছি আমি সামনে ছিল অনন্ত ভুল,নরক কে সে?
কালকে ছিলাম,আজকেও সেই শব্দ ঝড়ে থাকছি রত
নষ্ট সময় কষ্ট দেয় না আমিটা ঠিক আমার মতো।

                    ৩

পদবীর অত্যাচার সহ্য করি বলেই
এত মায়া পড়ে থাকে বিছানায়।
নইলে কী দোষ করেছে একচালা ধ্যান!

অসভ্য অভ্যাসে খেলাবাটি লুটছে তুমি
আমাকেও বেঁধেছ লুঙ্গি জাঙ্গিয়ায়
নইলে কী দোষ করেছে খন্ড গেরুয়া?

পরিপাটি পিঁড়ি পেতে বসা আহারে
আহা রে-ভাতের থালায় টিকটিকি পড়ুক
কোন অপরাধ করেনি মাধুকরী।

আচ্ছা- এই পথ কি হৃদয়পুর যাবে?

                    ৪

পরান পাখি
দুই পা ভরা পথের ধূলো
গায়েও মাখি
একটা দুটো অতীত ভুলও

থাকলে বাকি
আসন পাতি বুকের হাড়ে
সামলে রাখি
স্বপ্নগুলো চুপিসাড়ে

ফালতু নাকি
নিদ্রা ভুলে পথ মাড়ানো
যেমন থাকি
থাকবে কি আর হাত বাড়ানো

আঁধার আঁকি
লক্ষ আলো একতারাতে
পরান পাখি
থাকছি না এক পাড়াতে।

                   ১৭

বাঁশী ভাঙছি         ফাঁসী কালকে
হাসি হাসলে          সব দূর ছাই
তুমি বলবে            ভুলে চলবে
কান মলবে            প্রেমে সুর চাই

মাটি কাঁপলে          কোন চাপ নেই
তবু মাফ নেই           শুধু দিকটাই
কেউ শুনবে             জাল বুনবে
কাল গুনবে              ভাবো ঠিক তাই

আমি বিন্দাস            এক দীন দাস
প্রেম বীন দাস            গান বাঁধছি
লঘু কষ্ট                     চাঁদ নষ্ট
ফাটাকেষ্ট                   বলে কাঁদছি

ঘুমে উড়ছি                 ভূমে ঘুরছি
ধুমে পুড়ছি                 শ্বাসে নাচ হোক
বাসি ভাবনা              চাষী ভাবছে
বাঁশী ভাঙছি         ভেঙে গাছ হোক

                  ১৮

মাংসে বড় অরুচি হে- জন্মগত
যাই না ভুলেও কষাইখানার পাশ দিয়ে
বাঁধ দিয়েছি অঙ্গ গুনে সাধ্যমত
ভাবনাগুলো উচ্চাঙ্গের ফাঁস দিয়ে

যদিও চলে অবাধ্য দাঁতের নাচানাচি
মাঝে মধ্যেই জানান তিনি আমিষাশী
কষাইখানা দেখলে চোখে কাছাকাছি
লাফান তিনি; পথের মাঝে আমি ফাঁসি

মাংস এলে লাগবে সাথে পেঁয়াজ রসুন
সাথে সাথে আরও হাজার মশলাপাতি
লাফাবেন না- ধৈর্য ধরে একটু বসুন
বুকের উপর দাগ দিচ্ছেন- কী বজ্জাতি

মাংসের উপর থাকতে পারে খুব অরুচি
তবুও লিখি ভন্ডরা বেশ সামলে থেকো
লুকিয়ে হলেও দেখতে পারো খাদ্য সূচী
কবি কিন্তু নির্ভেজাল মানুষখেকো।

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.