![]() |
বনের পাখির ভালবাসার ঠিকানা : শামিমা এহেসানা |
সেও এক পাখি ছিল। বর্নে, শিসে যার বংশ পরিচয় খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা কারো ছিল না।
জংলী পাখি, তবু শহরের গাছের মগডালে শিস দিত। শহুরে চিলেকোঠা আর খাঁচার পাখিদের খাবার কেড়ে খেত। শক্ত ঠোঁটের পাখিকে ইর্ষা করত অনেকে, অনেকে আবার সমবেদনায় আক্রান্ত হয়ে বন্ধু বানিয়ে ফেলত। শহর তার খাবার ছিল, আর জংগল তার ছাদ। যতই সে শহরের গাছে দাগ কেটে নিজের নাম লিখতে আসুক, ফিরে সে ঘন জংগলেই যেত।
খুব সাধারণ সেই পাখির ডানায় রামধনুর রং ছিল। শিকারী, পাখি প্রেমিক, আর ভিন জাতের পাখির দল তাকে বাসা বদলের আমন্ত্রন জানাতো। কেওবা সোজা খাঁচায় পোরার ব্যবস্থা করতো। আর যারা জানতো চঞ্চল পাখিকে খাঁচায় পুরলে খাঁচার দেওয়াল ভাংতে গিয়ে পাখির মৃত্যু হবে, তারা বশ করার চেষ্টা করতো পাখিকে। সেয়ানা পাখি সেই আবার উড়ে বনে ফিরে যেত।
তারপর? তারপর একদিন পাখি ঠিক শহর আর বনের মাঝখানে একটা খাঁচা দেখে। আহা। ভারী সুন্দর খাঁচা! পাখি ভাবে। খাঁচায় বন্ধন আছে, কিন্তু দম আটকায়না। আলো বাতাস সব আছে, আর আছে রামধনু ঝুঁটির অন্য একটা পাখি।
এমন পাখি সে গোটা বনে, গোটা শহরের আকাশে কোথাও দেখেনি। পাখির ইচ্ছা করে রংগিন ঝুঁটিওয়ালার বন্ধু হতে। সে খুব হাঁক ডাঁক দেয়, খাঁচার দেওয়ালে শব্দ করে প্রানপণে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনা। নাছোড়বান্দা পালাতে শেখেনি, তাই রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েও ডাক দিয়ে যায়। অন্যজন তবুও শোনেনা।
খাঁচার মালিকের কাছে করজোড়ে আবেদন করে, খাঁচায় ঢোকার। দারোয়ান পথ আটকে বলে, যেতে দিতে পারি, যদি ভেতরের পাখি তোমায় আসার অনুমতি দেয়। কিন্তু, বনের পাখি যে খাঁচার পাখিকে ডেকে চলে, সে নাকি শুনতেই পায়না। তার কান নেয়। হ্যাঁ তবে হৃদয় আছে। বনের পাখি গোটা খাঁচার আশপাশে ঘুরে বেড়ায়, একদিন খাঁচার পাখি দেখবেই সেই আশায়।
গ্রীষ্ম কাটে বর্ষা যায়, শরত আসে গোটা দুনিয়ায়, ঝুঁটিওয়ালা দেখেওনা, শোনেওনা। তবু একগুঁয়ে বনের পাখি খাঁচার বাইরে ধর্ণা দিয়ে কাটায়। কেও জানেনা পাখির পরিণতি, পাখিও নয়। তবুও সে ধর্ণা দেয়। আত্মবিশ্বাসে টিকে থাকে। কালা পাখি ঠিক শুনবে রোদে পুড়তে পুড়তে ভাবে বনের পাখি।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন