কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা
কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

বাউলানা_৪১

ঘুম ঘুম ভাব         কোটি কোটি চোখ
টিমটিমে শ্বাস       চেয়ে দেখছি
বার বার দেখে       হাঁসফাঁস মন
ক্ষুধা ক্ষুধা বুক       খালি ডেকচি

চনমনে দিন           রুখাসুখা গান
হায় হায় কাজ       কেন চলবে
টানটান সুর           আনসান কথা
দূর দূর ভুল            কান মলবে

আইটাই পেট          সুখ সুখ কাল
শনশন হাওয়া         ত্বক হাতড়ায়
খেলা খেলা হাত      প্রেম প্রেম নয়
খালি খালি বুক        শুধু কাতরায়

                 ৪২

বাতাবরণ মেনে পা রাখে ঈশ্বরের সন্তান।

এখন আপেল বাগানে দারোয়ান থাকে না।

ভাঙাচোরা নোয়ার নৌকা পড়ে আছে ঘাটে।

রাতে দাঁত মাজে শয়তান পালিত মহাপ্রাণ।

ইত্যাদির পরে কিছু থাকলে তার নাম বিপ্লব।

এখানে ওখানে চর জাগে, লাঠিয়াল কই!

সৌরশক্তির আলোয় আলোকিত রাঁধুনী,

রাঁধুনী নামে কিছু মশলাপাতি ভীড়ে হারায়।

বাতাবরণ মেনে নিলে কেয়ামত ভয় পায়।

নয় পংক্তি যোগ করে নাম দিলাম 'জীবন'

৪৩
লেখার ভীড়ে সম্পর্কগুলো হারিয়ে যায়
অকাজের জন্য নয় এই শব্দখেলা।

শব্দের আড়ালে গুপ্তচরবৃত্তি করে বন্ধু
আর কতদিন টিকে থাকা যাবে!

এত অভিযোগ নিয়ে পথচলা অক্ষর
অভাবের কারণ দেখাতে ব্যস্ত হয়।

সব আলোকিত দিনের শেষে আবার
অন্ধকার রাতের গভীরতর হাতছানি।

এসো হে প্রিয়- এসো হে উদাস প্রশাখা
বুকে বুকে গান হোক সবুজ বাগানে।

নামে নামে রাখা থাক সুখী ফুলের ডালা
আমিও সকলের ভীড়ে মিশে আছি।

৪৪
মরে যেতে কোন আপত্তি নেই
যেকোন দিন মরে যেতে পারি।
শুধু এই মরে যাবার জন্য
একটা নির্দিষ্ট কারণ দেখাও

যে কারণে খিদে না পেলে খাই না
ঘুম না পেলে দূর হ বিছানা
শরীর না চাইলে কীসের যৌনতা
মৃত্যু কি তার চেয়েও বড় কিছু?

সকলেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটে
মিছিলের পিছে জুতে দিই নিজেকে
শুধু কারণের কাছে নতজানু হই
কারণের ভিতর যুক্তি থাকে যদি...

একটা যৌক্তিক কারণ পেলে
মরে যেতে কোন আপত্তি নেই।

                  ৪৫

খেলবো না যাও- খেলবো না যাও,ধুর
'ভালোবাসি' এটাই কি কসুর?
হতে পারো দুগ্গা তুমি, আমি নই অসুর

মেলবো না আর ইচ্ছে পাখা- ভুলে
এখন সন্ধি চিহ্ন বেঁধেছি মাস্তুলে
রাতের স্বপ্নগুলো ঘুমাচ্ছে ঘাস ফুলে

খেলবো না যাও- খেলার সাথে আড়ি
জেনে রাখো এখন শাকাহারী
বুকের ভিতর সরল আঁকা বাড়ী

বেলবো না আর হাত বেলুনে রুটি
ঘুম ভেঙেছে- শরীর ঝেরে উঠি
যাবেই যখন- দেরী কীসের? ছুটি।

খেলবো না যাও- খেলবো না যাও- ধুর
নির্মোহ থাক শান্ত হৃদয়পুর।

                 ৪৬

বর্ষার বৃষ্টিতে দেখা হয়েছিল- তাই
সম্পূর্ণ চিনতে পারোনি আমাকে।
একবার শীতকালে এসে দেখো
সব পাতা ঝরে গেলে
গোটা কান্ড শিকড়ের রীতি মেনে
কীভাবে মাটির গভীরে যায়
কীভাবে সংগ্রহ করে জল।

যতটুকু চেনার বাকী আছে আজো
আগামীকালের দিব্যি খেয়ে
পা রাখো হিমের রহস্যে
কুয়াশা ছুটবে রুপকথা ভুলে
ভেজা বাতাসে কার নামে রাখবে
গরম কাপড়ের গোপন কাহিনী?
একবার শীতকালে এসে দেখো...

৪৭
অক্ষরজন্ম মেনে ফসলের ধ্যানে বসি
পুজা গ্রহণ করো হে শস্য দেবী
গোলা উপচে বিপ্লব নেমে আসুক
ভাগ চাষীর গরীব উঠানে।

ফুটো থালায় পরমান্ন গল্পে
বার বার ভোট লড়াই উতরে যায়
মজন্তালি সরকারের দল।
বিজয় মিছিলের পর শুরু হয়
আসল মিউজিক্যাল চেয়ার।

অনভ্যাস প্রসূত অন্ধকার বাসা বাঁধে
বুকের ঠিক মাঝ বরাবর সীমারেখা
ধরে নেচে বেড়ায় আরশোলা প্রান।
লাঙলের কাহিনী মরে যায়
অপ্রত্যাশিত লেজের আগুনে।

৪৮
বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচানোর জন্য ঈশ্বর
দৌড়ে চলেছে আকাশ থেকে আকাশে।

অনেক নীচে কাদার উপরে বিন্দু বিন্দু ক্ষোভ
জমে গড়ে উঠেছে ঈশ্বর বিরোধী প্রতিষ্ঠান

প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসে কোটি সন্তান সন্ততি
পথের ধূলো বালি মেখে চেয়ে আছে।

ভক্তির পায়ের নীচে স্তুপ হয় শব্দ
সদ্য লিখিত উপন্যাস থেকে চরিত্র ঝরে

পরিকল্পিত ধাঁধার উত্তরে চুপ আছি
অধিক সাঁতারে গুরুত্ব তুলে নেয় জল

অতি আলো আঁধারের মহিমা বোঝায়
সমান দায়ী হোক ঈশ্বর এবং শয়তান।

৪৯
শব্দে বয়ে যেতে দিই নিজেকে-

স্বেচ্ছাচারিতা বড় ভালোবেসে আপন করেছে
ওই প্রেম- কোথায় গেলি পাঁজির পাঝাড়া
ঝেঁটিয়ে নোংড়া বের করার মতো
আমিও কেন বের হচ্ছি না- বিস্ময়

আহা পরকীয়া,সেজে গুজে সেই কবে থেকে
বসে আছি নিরুপায় গ্রীন রুমে
অন্যদের মুখের রঙ খসে যাচ্ছে
অনেকের হাতের মুখোশ চিনে ফেলেছি।

ভালোবেসে স্বর্গ পেতে চায় ক'জন
একজনও প্রেমিক এপিটাফ লিখলে না হয়
আমিও শব্দে লাথি কষাতাম জোরসে
অমরত্ব তাচ্ছিল্য করলেও পাথরে লেখা থাকে।

সুতরাং স্বাগত স্বর্গ- শব্দে বয়ে যাই...
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.