দীর্ঘশ্বাস : পিনাকী চৌধুরী

দীর্ঘশ্বাস : পিনাকী চৌধুরী   

দীর্ঘশ্বাস : পিনাকী চৌধুরী      

নির্লজ্জ গ্রাম্য দলাদলি এবং অবশ্যই মিথ্যাচার বোধহয় এই একবিংশ শতাব্দীর চরম ব্যস্ততার যুগেও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে শহরের আনাচে কানাচে ! রিন্টুদের প্রায় তিন পুরুষের বাস ও পাড়ায় ! নিতান্তই নিম্ন মধ্যবিত্ত, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের একটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি বজায় ছিল এলাকায় ! রিন্টুর বাবা ছিলেন পেশায় স্কুল শিক্ষক , রোজ সকালে ধুতি আর বাংলা শার্ট পরে থলি হাতে বাজারে যেতেন ! তিনি সামান্য আয়ের স্কুল শিক্ষক হলেও অন্যায়ের সাথে কোনোদিন আপোষ করেননি ।

আর রিন্টু উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবার পরে কলেজে ভর্তি হয় । পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছাত্র না হলেও রিন্টু কিন্তু মিডিওকার স্টুডেন্ট !  আর উঠতি বয়সে একটু আধটু ধূমপান করতেও শিখছে ! যদিও সেটা আড়ালে আবডালে ! কিন্তু তিল কে তাল করলেন তাদের প্রতিবেশী উচ্চবিত্ত অরিত্র বাবু এবং তাঁর স্ত্রী । প্রথমে একদিন রিন্টুর বাবাকে নিজেদের বাড়িতে ডেকে এনে বললেন " আপনার ছেলেতো লায়েক হয়ে গেছে মশাই ! আজকাল সবার সামনেই তো সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে !" কথাটা যেন আলপিনের মতো ফুঁটলো মাস্টারমশাই, মানে রিন্টুর বাবার কানে ! তিনি দুঃখপ্রকাশ করে কোনোরকমে বাড়ি ফিরে রিন্টুকে প্রবল বকাঝকা করলেন ! "তোর জন্য  আমার আর কোনো মানসম্মান বলে আর কিছু থাকলো না ! "

কিন্তু এখানেই শেষ নয় ! বরং চিত্রনাট্যের শুরু ! অরিত্র বাবু আবার একদিন পাড়ার সকলকে নিয়ে একটা মিটিং ডাকলেন , এবং সর্বসমক্ষে বললেন " রিন্টু ইদানিং প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করে মাঝরাতে বাড়ি ফিরে তার বাবা মায়ের ওপর অত্যাচার করে "! মিটিং এ আগত সবাই ওই কথা শোনার পর তাজ্জব বনে গেলেন ! রিন্টুর বাবা প্রমাদ গুনলেন ! বললেন " পুরোটাই মিথ্যে ! অরিত্র বাবু সাজিয়ে গুছিয়ে এইসব মিথ্যা কথা বলছেন "! মিটিং এ সবাই এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন ! রিন্টুর বাবা বাড়ি ফিরে স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এ পাড়ায় আর তাঁদের জন্য বসবাসের উপযুক্ত নয় ! কাল বিলম্ব না করে  সপ্তাহ খানেক পরেই তিনি সেই বাড়ি ছেড়ে অন্য এক স্থানে ভাড়া যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন !

বাড়ি ছাড়বার পূর্ব মুহূর্তে মাস্টার মশাই শেষ বারের মতো নিজের পৈত্রিক বাড়িটির দিকে তাকিয়ে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ! তারপর অন্য গন্তব্যে গেলেন ! সময় থেমে থাকেনি ! তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে ! পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রিন্টু তারপর উচ্চশিক্ষিত ! বিয়েও করেছেন ! শোনা যায়, পরবর্তীকালে অরিত্র বাবু রিন্টুদের আগের বাড়িটি ক্রয় করেন ! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, কোনো এক অজানা কারণে অরিত্র বাবু সেই নতুন ক্রয় করা বাড়িতে তিন রাত্রিও যাপন করতে পারেরনি ! দ্বিতীয় রাতেই অরিত্র বাবু সেই নতুন কেনা বাড়িতে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান !
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.