ঢেউলি রে মোর মাই,সুন্দরী মোর মাই : সুবীর সরকার

সুবীর সরকার
ঢেউলি রে মোর মাই,সুন্দরী মোর মা
 
১।
 
'ঢেউলি রে মোর মাই
সুন্দরী মোর মাই
দোনো জনে যুক্তি করি চল পলেয়া যাই'

গঙ্গাধরের পাড়ে পাড়ে চরে চরে সেই কত কত যুগ ধরে গোয়ালপাড়ার মেয়েরা এই গান তাদের কণ্ঠে তুলে নিয়ে কি এক হাহাকারের সুরে সুরে তাদের শরীরে নাচ জাগাতে জাগাতে জীবনের আবহমান এক আর্তি ছড়িয়ে দেয়।দূরের মাঠপ্রান্তরে তখন বিকেলশেষের  মায়া।মায়ায় মায়ায় বুঝি আস্ত এক জীবনের ঘোর।গানের দেশে নাচের দেশে হেমন্তের হিমের দেশে গানভরা এক জীবনের গল্প প্রখরতার উত্তাপ ছড়াতে থাকলে আবার ঘুরে ঘুরে গান নেমে আসে মরণ ও জন্মের এই দুনিয়াদারির ভিতর-
'নাল টিয়া নাল টিয়া রে তোর ভাসা নলের আগালে/বিনা বাতাসে ভাসা ঢোলে রে'

২।
 
এইসব চলতে থাকে।ভরা হাটের ভেতর থেকে এক পেশীবহুল দীর্ঘ শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসে নাজিমুদ্দিন ওস্তাদ।সে তার জীবনের গল্পের দিকে একপর্বে আমাদেরকে প্রবল টেনে আনবে।আমরা নুতন করে শুনে নেব চর দখলের লড়াই আর হাতিক্যাম্পের গল্প।বিষ্ময় নিয়ে শুনতে থাকবো কিভাবে গান আর বাজনা আর নাচ দিয়ে বুনো হাতিদের পোষ মানানো হত কুমারসাহেবের জঙ্গলবাড়ির সেই ক্যাম্পে।
নাজিমুদ্দিন তখন গাবুর বয়সের চেংড়া।আব্বার সাথে রূপসীর জমিদারের লেঠেলবাহিনীর হুকাতামাকের দায়িত্ব তার উপর।পাশাপাশি মুন্সি চাচার কাছে লাঠি চালনার তালিম নিচ্ছে।আর ফাঁক পেলেই গঙ্গাধরের কাছারে কাছারে জল ভরতে আসা সুন্দরী কইন্যাদের সাথে রঙ্গরস করা আর খোসা নাচের মত গেয়েও ওঠা-
'আন্ধ্যারে ধান্দারে নাচবা নাকি দুলাভাই
দুলা তুই হ্যাজাকের বায়না দে'
এইসব দেখে জরিনা আবেদা হাসিনা ফুলেশ্বরীদের কি খলখল হেসে ওঠা।তারাও কখনো গানে গানে প্রতি উত্তর দিত-
'ফাতেরা রে ফাতেরা
বগরিবাড়ির ফাতেরা
এত্তি ক্যানে আসিলু
চেংরির পাছে নাগিলু'
কি অন্যেরকম জীবন ছিল তখন।আলো ছিল।স্বপ্নের ভেতর খেলে বেড়াতো হলখল মরিচের খেত।আর সেই নদীপাড়ের জীবন থেকেই তো সে তার জীবনে টেনে এনেছিল জরিনাকে।
হায়রে জীবন!সে বারবার তাকে ডুবিয়েই মারলো এই ধানপাটকামলাকিষান আর ভরা সব হাট পাচালির ভিতর!
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.