 |
মৃদুল শ্রীমানী |
একটা রক্ত মাংসের মানুষের বৈধব্য আর যৌনতার প্রশ্ন
সেই যে বিনোদিনীর কথা ভাবছিলাম, আশা নামে বালিকাবধূর হয়ে মহেন্দ্রকে চিঠি লিখতে লিখতে তার উপোসি নারী সত্ত্বা আর নিজেকে সংগোপনে রাখতে পারে নি। আশার হয়ে লিখতে লিখতে সে নিজের নারীমনের সম্ভার তুলে ধরে একজন শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত পুরুষের কাছে। নিজের পরিচয়ে তো বিনোদিনী এটা পেতো না। আশা তাকে লিখতে দিল চিঠি, আশা চাইলো দাম্পত্যের প্রেম মাখা শব্দসম্ভার, ঠাস বুনোট প্রণয় কথামালা। কিন্তু বিনোদিনীর কালি কলমের পিছনে তৃষ্ণার্ত মনটি নিজেকে আর বাক্সবন্দী করে রাখতে পারল না। আশার সাথে যখন তার হৃদ্যতা হয় নি, তখন স্বামীহারা বিনোদিনী ছিল এক রকম।
সে সংসার কাজে পটু, সে হিসেবি, সে পরিচালনায় দক্ষ। এগুলোই ছিল বিধবা বিনোদিনীর সামাজিক পরিচয়। কিন্তু সে যে আসলে একটা রক্তমাংসের মানুষ, অকাল বৈধব্য এর পর তারও যে যৌনতার খিদে থাকা খুব সম্ভব, সেটা বিনোদিনী যেন নিজেও আবিষ্কার করলো। আর আবিষ্কার করার পর বিনোদিনী মরিয়া। কেন সে পাবে না উপযুক্ত পুরুষসঙ্গ ? কেন, কোন অপরাধে সে পাবে না দাম্পত্যের স্বাদ? যদি সামাজিক পথে নাও হয়, তাহলেও সে আদায় করে নেবে সে স্বাদ। এমনই তীব্র খিদে প্রকাশ হতে থাকে সে মেয়ের নিজের কাছে। আশা তখন তার কাছে কেউ নয়। আশার দাম্পত্যের কি হবে, ভাবার দায় বিনোদিনী ভাবতে চায় না। একমুখী চেষ্টায় অন্ধভাবে ছুঁতে চায় একটি পুরুষ হৃদয়।
বিদ্যাসাগর মশায় যে ভেবেছিলেন, বিধবা হওয়া মাত্র একটি মেয়ে দেবী হয়ে ওঠে না, জীব বৈজ্ঞানিক প্রশ্নে, নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্য বিচারে সে গভীর সত্যের সাহিত্য রূপ আঁকলেন রবীন্দ্রনাথ, বিনোদিনীর ছবিতে।
This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন