পাশবিক শক্তির নাম হুজুর-সন্যাসী-পাদ্রী -উপাসক : রুদ্রসাগর

রুদ্রসাগর


 পাশবিক শক্তির নাম হুজুর-সন্যাসী-পাদ্রী -উপাসক 


পৃথিবীর সমস্ত মানুষ কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী।  কেউ অদৃশ্য শক্তিকে বিশ্বাস করে, কেউ দৃশ্যমান শক্তিকে। ধর্মের প্রচার ও প্রসার করে যারা জীবন-জীবিকা তৈরী করে নিয়েছে, তারা সাধারণত কোনো উৎপাদন বা উদপাদিত ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত থাকেন না। কৃষক, শ্রমিক, মজদুর, ব্যবসায়ীরা কখনো ধর্ম গুরু হয় না। নিকোম্মা, অলসমস্তিষ্কের জোচ্চোর মানুষই ধর্মের দালাল হন। এরা  মূলত অন্যের উপার্জিত অর্থে জীবিকা নির্বাহ করে মস্তিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন।

 এদের একমাত্র কাজ হলো, অশিক্ষিত, সরল প্রকৃতির মানুষগুলোকে ইহকালের পরকালের ভয় ও পার্থক্য বয়ান করে, স্বর্গের হুরপরীদের সৌন্দর্য্য, শরীরের উত্তেজিত অংশ বর্ণনা করে লোভাইতো করে অর্থ উপার্জন করা। একদিকে এরা ইহকালকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন, ভোগবিলাসিতা থেকে বিরত থাকার কথা বলেন, আবার নিজেরা  ইহকালে সুখে থাকার জন্য, সরল মানুষগুলোর কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করে আনেন। নিজেরা ভোগবিলাসিতার জীবন-যাপন করেন।

 সরল সাধারণ মানুষের কাছে ইহকাল ইবাদতের, আর হুজুরের কাছে বিশাল অট্টালিকা, দামি গাড়ি, গোপনে মাদ্রাসার ছাত্রীকে নিয়ে সোহাগ করাই ইবাদত।

কোনো ব্যবসা, বাণিজ্য বা উৎপাদন ছাড়াই ধার্মিকেরা দ্রুত গতিতে ধনী হয়ে ওঠে।  কারণ, ধর্ম বিশ্বাসীরা অতীব সরল  বা মূর্খসমতুল্য হয়, ঈশ্বর অপেক্ষা ভন্ড, দালাল বা ঈশ্বরের প্রতিনিধিদের বেশি বিশ্বাস করেন।  ঈশ্বর বাস্তবে নেই, এ কথা একটু নিরপেক্ষতার সঙ্গে যুক্তিকে মেনে পড়াশোনা করলেই বোঝা যায়।  ধর্মীয় দালালরাও মূলত এই কথাটির সত্যতা জানে। তাই তো নির্ধিদায় কন্যা সমতুল্য মেয়েদের অবলীলায় ধর্ষণ করে।  জানে ঈশ্বর নেই, তাই পাপ ও শাস্তির ভয়ও করে না।

মিথ্যে ঈশ্বরের নামে  নানা দলে বিভক্ত হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য জাতি, একই সমাজে বিভক্ত নিয়মরীতি, সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি আবিষ্কার করেন। প্রতিনিয়ত একে অন্যের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত থাকেন।   এই বিভাজনের মাধ্যমে ভগবানের দালালগুলো লুটতে থাকে সাধারণ সরল মনের ভালো মানুষগুলোকে। এই ভালো মানুষগুলো মূলত ধর্মীয় দালালদের কাছে ব্যাবসার পণ্য।  এক কথায় এই পণ্য বা মানুষ মূলত যতটা মূর্খ, ততটাই উৎকৃষ্টমানের ব্যবসায়ী পণ্য মনে করে ধার্মিক দালালগুলো।

 প্রতিটি দেশে লক্ষ্য করে দেখুন, যত অপরাধ প্রবণ লোক রয়েছে, এরা সকলেই কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী।  খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, লুটপাট, গুম, অত্যাচার, লুন্ঠন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের নাম চলতে থাকে। 

অন্যদিকে যারা মানবতার কথা বলে, সত্য ও ন্যায়ের কথা বলে, যারা কারো ক্ষতি করে না... তাদেরকে এই দালালেরা নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করে।  আজ পর্যন্ত কোনো নাস্তিককেই অশিক্ষিত, মূর্খ পাবেন না।  কেননা, তারা যুক্তিপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ঈশ্বরের সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটন করেছে।

  আজ পর্যন্ত কোনো নাস্তিককে খুনি খুঁজে পাবেন না।  নাস্তিক মানে মানবতার পূজারী। তারা বাক স্বাধীনতার কথা বলে, তারা ধর্ম-নিরপেক্ষ সমাজ গঠনের জন্য সংবেদনার কথা বলে।  বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হলে নাস্তিকেরা প্রতিবাদ করে।  ভারতে মুসলিমের ওপর অত্যাচার হলে নাস্তিকেরা প্রতিবাদ করে। নাস্তিকেরা নিজস্ব পেশা বা উৎপাদিত জীবিকা নিয়ে সংসার করে।  ধার্মিকদের মতো অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে কালো টাকার পাহাড় গড়ে না। 

ভারতবর্ষের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা কি দেখতে পাই ? ধর্মের লাঠালাঠিকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটি দেশকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে হলো।  আজ রবীন্দ্রনাথ ভারতের হলো, নজরুল হলো বাংলাদেশের।

 আজ হিন্দু বলে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হলো সংখ্যালঘুরা, আর শুধু মুসলিম বলে রোহিঙ্গাদের মতো একটি খুনি জঙ্গি প্রধান জাতিকে বাংলাদেশ সাদরে গ্রহণ করলো।  বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা এলে ভারত সরকার তাদের সাদরে গ্রহণ করছে, আর মুসলিম এলে বিতাড়িত করছে। জেলে ভরে শাস্তি দিচ্ছে।  শুধু ধর্মই এর কারণ।  সমাজ সভ্যতার প্রায় প্রথম থেকেই ধর্মের প্রয়োগ বা ব্যবসা ছিল।  আজও  আছে।  কিন্তু মানুষ বদলায়নি। 

ধর্মের প্রয়োগ বাড়ছে ভারতে।  অত্যাচারিত হচ্ছে মুসলিমরা। ইতিহাস কি বলে দেখে নিন,  ধর্মকে কেন্দ্র করে, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ।  ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।  ১৯৬৫ সালের দাঙ্গা।  ১৯৭১ সালে মুসলিম কর্তৃক ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠন।  ১৯৯২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।  ১৯৯৪ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা।  সব কিছু ধর্মীয় উস্কানি থেকে তৈরী হয়।

 ধর্মই হচ্ছে, সমাজ বিভক্তির মূল কারণ।  ধর্মই হচ্ছে মানুষে মানুষে হানাহানির কারণ।  অনেকের মুখে শুনতে পাই, ধর্ম নাকি শান্তির।  হাসি পায়  শুনে। আপনাদের জানা থাকলে জানাবেন, পৃথিবীতে এমন কোন ধর্মের জাতি আছে, যারা হানাহানিতে লিপ্ত নয় ? ধার্মিক হলে মনের চোখ অন্ধ হয়ে যায়।  খোলা থাকে পাশবিক চোখ।  যা শুধু নৃশংসতার স্বপ্ন দ্যাখে।  

মহাভারতের যুদ্ধ কোন শান্তির বারতা বহন করে এনেছ কৃষ্ণ,  আমার জানা নেই।  জেরুজালেমকে মুসলমানদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় খ্রিষ্টানদের মুসলমান শাসন থেকে মুক্ত করার যুদ্ধকে শান্তির সঙ্গে তুলনা করা যায় ? মাদ্রাসার শিক্ষকদ্বারা ছাত্রী ধর্ষণের ধর্মকে শান্তির ধর্ম বলা যায় ? ভারতীয় হিন্দু ধর্মের দালাল  বাবা রাম রহিমের মতো একটা নরপশুকে শান্তির পথপ্রদর্শক বলা যায় ?

 যারা বাবরি মসজিদের মতো একটি সুন্দর নির্মাণকে ধূলিস্যাৎ করে দিলো, তাদেরকে শান্তির দ্যূত বলা যায় ? দিনের পর দিন যারা ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার করে আসছে তাদের আমি ধার্মিক বলতে পারবো না।  ধর্ম মূলত নষ্টের গোড়া।  ধর্মই হানাহানির রূপকার।  ধার্মিক হলো হন্তারকের আত্মা।  খুনির পাশবিক শক্তির নাম হুজুর ও সন্যাসী।  পাদ্রী ও উপাসক।  
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.