![]() |
রীনা মন্ডল |
আজকের আধুনিক সাহিত্য নিম্নশ্রেণীর । তা বোঝাই যায় না । তার প্রথম কারন হলো , আজকের সাহিত্যেই সেই স্পর্শ নেই । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যের মধ্যে যে ঈশ্বরের স্পর্শ এনেছিলেন , সে স্পর্শ থেকে বাংলা সাহিত্য আজ বহু দূরে । দ্বিতীয় কারন হল , বর্তমানে সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনা করছেন অর্থ উপার্জনের জন্য - সাহিত্য সাধনা কিংবা সামাজিক উন্নতির উদ্দেশ্যে নয় ।
রবীন্দ্রনাথ , বঙ্কিমচন্দ্র তথা তৎকালীন যুগের সাহিত্য অর্থ উপার্জন কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নি । বরং বঙ্কিমচন্দ্র অর্থ উপার্জনের জন্য সাহিত্য রচনা করতে নিষেধ করেছিলেন । সাহিত্য মানুষকে আনন্দ দান করে আর সাহিত্যিকরা সেই আনন্দ তাদের রচনার মাধ্যমে তাদের অন্তরে এনে দ্যান । আজকের সাহিত্যিকগন অন্য আনন্দের কথা ভুলে গিয়ে বস্তুগত আনন্দকেই সর্বোৎকৃষ্ট আনন্দ হিসেবে ধরেছেন । আর এই আনন্দের উপর নির্ভর করেই তারা কিম্ভুতকিমাকার সব নাটক , উপন্যাস ইত্যাদি লিখে মানুষকে আনন্দ দানের পরিবর্তে নিজেদের পকেট ভরাবার চেষ্টা করছেন । অথচ এই আনন্দ যে সর্বাপেক্ষা নিম্নস্তরের তা তারা ভুলে গেছেন ।
স্বামীজী বলেছেন দেহ ইন্দ্রিয়জ আনন্দ সবচেয়ে নিম্নস্তরের আনন্দ । তাহার চেয়ে অনেক উচ্চস্তরের আনন্দ হলো বুদ্ধিজ আনন্দ । জ্ঞান আহরণ করে মানুষ যে আনন্দ পায় , অন্যান্য প্রাণীর কাছে সে আনন্দের দ্বার রুদ্ধ । আধ্যাত্মিক আনন্দ তারও উপরে , এটাই সর্বচ্চ আনন্দ - বিরামহীন , বিচ্ছেদহীন , প্রতিক্রিয়াহীন অফুরন্ত আনন্দ । মহাপুরুষগন যে ইন্দ্রিয়জ আনন্দকে সর্বদা বর্জন করতে বলেছেন , আমাদের বর্তমান সাহিত্য সেই আনন্দকে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করছে ।
আজকের মানুষও এই আনন্দকেই সর্বোৎকৃষ্ট আনন্দ রূপে গ্রহণ করছে । আর এই আনন্দ পাওয়ার জন্যই বিংশ শতাব্দীর মানুষ ক্রমশ: অন্যায়ের পথে এগিয়ে চলেছে । তাই ঊনবিংশ শতাব্দীর রবীন্দ্রনাথ - বঙ্কিমচন্দ্রের ঈশ্বর স্পর্শ সাহিত্যের নতুন চিন্তাধারা আজ আর নেই । নবীন যেসব লেখকের আবির্ভাব হচ্ছে তারাও যেন সেই ভাবধারায় সাহিত্যকে ক্রমাগত নিচের দিকে গড়িয়ে নিয়ে চলেছেন । জানিনা , এই অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে আসবে ? তবে এটুকু বিশ্বাস করি মানুষের শুভ বুদ্ধি একদিন জাগবেই । সভ্যতার ইতিহাস তার প্রমান ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন