মৃদুল শ্রীমানী
সুদীপা আমায় ফোনে ঝাঁঝিয়ে উঠল। বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা মানে? অনেকদিন আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও রক্তপরীক্ষা করতে হবে? তাতে কিছু গোলমাল বেরোলে বিয়েটা যদি ভেঙে যায়, আপনি সে দায়িত্ব নেবেন?
বললাম, কি মুশকিল, প্রেমের সম্পর্ক ম্যাচিওর করে বিয়ে হলে, আর প্রেমটা সাজানো গোছানো নাটক না হলে, রক্ত পরীক্ষায় যাই বের হোক না কেন, বিয়ে ভাঙার প্রশ্ন নেই। কিন্তু সাধারণতঃ বিয়ের পর ছেলেমেয়েরা একসাথে থেকে তবেই সন্তানের জন্ম দেয়। পাতি বাঙালির ঘরে বিয়ের আগে সন্তান হতে দেখিনি। তো বাচ্চার যাতে বড় কোনো অসুখ বিসুখ না হয়, থ্যালাসেমিয়া বা ওই ধরনের, বা যৌনরোগ, তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন আর কি।
সুদীপা আমার উত্তরে সন্তুষ্ট নয়। রাগ বেরিয়ে আসছে নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে।
বললাম, সুদীপা, আমাদের বাংলায় থ্যালাসেমিয়া রোগের হারটা একটু বেশি। খোঁজ খবর নিও হেমাটোলজিস্টের কাছে। বাপ মায়ের থ্যালাসেমিয়া থাকলে বাচ্চাদের সে রোগ আসতেই পারে। তাই সাবধানতা।
সুদীপা বলল, এত দিন ধরে এত লোকের ছেলে হচ্ছে, আমার বেলাই গোলমাল হবে? বললেই মানছি আর কি?
বললাম, সন্তান গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে জন্মালে গড় বাঙালি কিন্তু মাকেই দোষ দেয়। বাচ্চা কি করে হয়, কেন হয়, তা যেন জেনেও জানে না বাঙালির সমাজ। বাচ্চা গুরুতর অসুস্থ হলে মায়ের কষ্টের একশেষ।
সুদীপা বলল, আমাদের জ্যোতিষী বলেছেন, আমরা রাজযোটক। আমি মাঙ্গলিক। ওও তাই। গণেও মিলছে। এখন রক্তপরীক্ষা করে ভজকট পাকাবো না।
বললাম, সেকেলে গুরুপুরুতেরা বলত, পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে কসরৎ করে পুত্র শব্দের অর্থ যাই দেখানো যাক না কেন, সমাজ কিন্তু পণ্ডিতী মানে না। পুত্র সন্তানের মানে ভালো ভাবেই জানে সমাজ। বিয়ের পর বাচ্চা না হলে, বা কোনো কারণে বাচ্চা নিতে অনিচ্ছুক থাকলে, দম্পতির পুরুষটিকে ছাড় দিয়ে মেয়েটিকে নিন্দেমন্দ করতে কম দেখিনি। পুত্র সন্তানের মা যেন ক্লাস ওয়ান সিটিজেন। শুধু মাত্র কন্যাসন্তান পেটে ধরেছেন, সেই মা যেন ব্রাত্য। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলছে যে সমাজ, তাকে বদলাতে চাওয়া নেহাতই বোকামি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন