মৃদুল শ্রীমানী
সুশান্ত। এই ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত নিভৃত জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি আমাদের জানা চাই। সুশান্ত কী রঙের জাঙিয়া পরতে পছন্দ করতেন, ঘুমিয়ে পড়লে, ঠেলে তোলা হলে রেগে যেতেন কি-না, বাথরুমে স্নান করতে করতে কোন্ গানের সুরটি ভাঁজতে ভালবাসতেন, সবটুকু আমাদের জানা চাই। একজন মৃত ব্যক্তি মানুষের মনের গহনতলে ফ্যান্টাসির যেসব ধারাপাত আছে, তা সব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ না করলে আর কি উপভোগ করা হল? তো আগাপাশতলা সব না জানলে আমাদের ভাত হজম হচ্ছে না।
কেননা, সেলিব্রিটি জীবনের তথ্যে আমাদের আগ্রহ খুব। সেলিব্রিটি তো আর নিছক হোমো সেপিয়েনস নয়। সে যে অন্য কিছু। তাই তার হাঁচি কাশি উদ্গার লোমফোড়া স্বপ্নদোষ আমাদের না জানলে চলবে কেন? আমরা তীর্থের কাকের মতো বসে আছি রসালো টাটকা খবরের অপেক্ষায়। হোক গে সাত বাসি মড়া। মড়া তো। কাক তো মৃতভোজী প্রাণী। কাক্কেশ্বর কুচকুচে বলে গিয়েছেন।
আমাদের দেশে বৈদেশিক ঋণ ঠিক কতটা, জনগণেশের জন্য একশোটাকা খরচা করলে, তার ঠিক কতটা তৃণমূলে পৌঁছায়, সে বাবদে রাজীব গান্ধী ঠিক কি বলেছিলেন, তা আমাদের না জানলেও চলে। নোটবন্দি করার মুহূর্তে সরকার নোটবন্দির সুফল হিসেবে যা যা বলেছিলেন, তার কতদূর কড়ায় গণ্ডায় মিলেছে, ও আমাদের জানার দরকার নেই।
সেই যে ঘোড়ার প্রজনন করতো লোকটা, যার নাকি পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা আয়কর বকেয়া ছিল, তাতে আমাদের আগ্রহ নেই। দেশ বিপন্ন বলে মোবাইলে টিকটক বন্ধ করেছিলাম। এবার দেশের পুঁজিপতি টিকটক কিনে নিলে সব দোষ গঙ্গাজলে ধুয়ে মুছে গেল। আমাদের দেশে কোথায় সাধারণ মানুষ গলাজলে দাঁড়িয়ে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিবাদ করেছিল, বিশ্বাস করুন, ও খবরে আমাদের তীব্র অরুচি। আমরা নরেন্দ্র দাভোলকর চাই না, সত্যেন্দ্র দুবে চাই না, শংকর গুহনিয়োগী চাই না।
তাদের কে মারল, কেন মারল, সেসবে আমাদের অরুচি। রাম রহিম কি করে গুফা বানাল, কি করে হানিপ্রীত সিংকে সে জেলের সেলের ভিতরে ব্যথামালিশের জন্য আবদার করতে পারে, সে নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। অপারেশন টোমাটো ফোড়ো কে কিভাবে সংগঠিত করেছিল, আমাদের জানার আগ্রহ নেই। শিনা বরার হত্যাকাণ্ডের জেরে ইন্দ্রানী মুখার্জি পিটার মুখার্জিরা কেমন আছেন, সুনন্দা পুষ্কর নামে শশী তারুরের তিন নম্বর বৌয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে আদতে কি ছিল, শশী তারুরের চার নম্বর প্রেমিকা পাকিস্তানের গায়িকাটি কেমন আছেন, সারদাখ্যাত দেবযানী জেলের ভিতর শিক্ষকতা পেশায় কতদূর সফল, মেহুল চোকসি নীরজ মোদি আর ভিজয় মালিয়া কি কৌশলে পালিয়ে যেতে পেরেছিল, এইসব জেনে আমরা কি করব?
আমরা সুশান্ত র বাসি মড়া পেয়েছি। তাই ঠুকরে ঠুকরে খাব। দ্রিঘাংচু আমাদের উপর সেই দায়িত্ব পালনের ভার দিয়ে গিয়েছেন।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন