মিচকে পোড়া : পিনাকী চৌধুরী

মিচকে পোড়া : পিনাকী চৌধুরী

মিচকে পোড়া : পিনাকী চৌধুরী
 
 
ঠিক যেমন মধ্যবিত্ত বাঙালির ছাপোষা বাড়ি হয়, তেমনই একটি বাড়ির নাম হল ' শান্তিবিলাস'! তবে পাড়ার লোকে কয় ' ভ্রান্তি বিলাস'! আর সেই বাড়ির গৃহকর্তা হলেন সাহস রায়, তবে মিচকে লোকে ডাকে ঢ্যাঁড়স রায় , কারণ, তিনি পিসিমার ভয়ে সিঁটকে থাকেন, আর সবকিছু গুলিয়ে ফেলেন ! মধ্য পঞ্চাশের এই সাহস রায় বিয়ে করেননি, আশেপাশের লোকজন টিকাটিপ্পনি কাটলে, সাহস রায় সহাস্যে বলে ওঠেন দিনকাল বদলেছে, ছেলেরা এখন পঞ্চাশের পরে একটু নড়েচড়ে বসে, আমিও তার ব্যাতিক্রম নই !"  সাহস রায়ের বাবা , মা গত হয়েছেন অনেক দিন আগেই  ! পরিবারের দু'টি প্রাণী, একজন সাহস রায়, আর অপরজন হলেন তাঁর থুড়থুড়ে বুড়ি পিসিমা ! এমনি পড়াশোনা জানেন, কিন্তু বাস্তব  বুদ্ধিটা বেশ কম এই সাহস রায়ের ! কোথায় কি বলতে হয় , তাও ঠিকমতো জানেন না তিনি ! আর যাই হোক না কেন, এই পিসিমাকে কিন্তু খুবই মান্য করেন সাহস রায় । কিন্তু অন্যদিকে আবার পিসিমার ভয়ে সিঁটকে থাকেন ! 
 
একদিন বাজার থেকে সাহস ফিরে এসে বাজারের থলিটা একেবারে ঠাকুর ঘরের সামনে রেখে দিলেন, তাই দেখে তো পিসিমা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন " আর মলো যা ! তুই মাছ খাস বলে কি তোর চোদ্দ গুষ্ঠি মাছ খাবে নাকি রে ? আর আমি বেদোবা মানুষ, তার ওপর আজ একাদশী ! ছিঃছিঃ ! ঠাকুর ঘরের সামনে আঁশের থলিটা ...!" সাহস ভয় পেয়ে ঢোঁক গিলে কোনোরকমে বাজারের থলিটা সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে বললেন " ভুল হয়ে গেছে পিসিমা ! এক্ষুনি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি !" এদিকে পাড়া প্রতিবেশীরা ইচ্ছে করেই এই ঢ্যাড়স , থুড়ি সাহস রায়ের পিছনে লাগে ! একদিন সেই পাড়ার রকে বসে তমাল বললো " হ্যাগো ঢ্যাঁড়স দা, আর কবে বিয়ে করবে তুমি ? বয়সতো পঞ্চাশ পেরিয়ে তরতর করে এগিয়ে চলেছে ! আর এখন যদিও বা তুমি বিয়ে করো, তাহলে মনে হয় শাশুড়ি আর জামাই মোটামুটি সেম এজের হবে !" কথাটা খুব কানে লাগলো সাহস রায়ের ! বাড়িতে এসে পিসিমাকে সাহস বললেন " পাড়ার মিচকে পোড়া ছেলে ছোকরার দল আমাকে চাটছে গো পিসিমা ! সত্যিই আমি এইবার বিয়ে করতে চাই"! 
 
কথাটা শুনেই পিসিমা বললেন " একি তোর মুখের ভাষা রে , সাহস ? চাটছে ? বিয়ে যেন ছেলের হাতের মোয়া ,! উঠলো বাই তো কটক যাই ! ঠিক আছে , তা  তুই যখন মনস্থির করছিস , তাহলে একজন ঘটকের সন্ধান কর ! " অবশেষে একজন ঘটকের মাধ্যমে প্রায় প্রতি রবিবার ঢ্যাঁড়স ওরফে সাহস রায় মেয়ে দেখতে যায় আর মেয়ের বাড়িতে ভালোমন্দ খেয়ে চলে আসেন, কিন্তু কিছুতেই আর মেয়ে পছন্দ হয়না সাহসের ! এরকম ভাবে প্রায় বছরখানেক চললো, এদিকে পিসিমাও সাহসকে বলে দিয়েছেন " এরকম ভাবে আর ছেলেখেলা কোরোনা ! বিয়েটা ফ্যালনা নয় ! আর মেয়ের বাড়িতে কি ভাববে ? তাছাড়া আমার পুরো সম্পত্তিটাতো আমার অবর্তমানে তুমিই পাবে ! সাধারণ ঘরের একটা মেয়ে পছন্দ করে এইবার নিয়ে এসো !" সাহস গোমড়া মুখে কোনোরকমে তোতলাতে তোতলাতে বললো " ঠিক আছে পিসিমা , তাই হবে ! তবে এইবার আর ঘটকের দরকার নেই ! 
 
আমি আমার এক বন্ধুর সাথে মেয়ে দেখতে যাবো !" আসলে সাহসের বন্ধু তেমন একটা নেই ! পাড়ার সেই রকে বসা তমাল তাঁর থেকে যদিও অনেকটাই ছোট, কিন্তু বন্ধুর মতো ! তা সেই তমালের মাধ্যমেই আবার এক মেয়ের বাড়িতে হাজির হলেন সাহস রায় ! প্রথমে বুঝতে পারেন নি, কিন্তু ঘরে মেয়ের বাবাকে প্রথম দর্শনেই কিছুটা চিনতে পেরেই সাহস রায় তমালের কানে কানে বললেন " তমাল, ভাই আমার , মনে হচ্ছে একই বাড়িতে দু'বার ঢুকে পড়েছি ! এর আগেও একবার এই বাড়িতে মেয়ে দেখতে এসেছিলাম ! তাড়াতাড়ি চলে চল ! একটাও বাইরে পড়বে না !" দু'জনে কোনোক্রমে বেরিয়ে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন ! এদিকে পিসিমা সবশুনে বললেন " সাধে কি লোকে তোকে ঢ্যাঁড়স রায় বলে ডাকে ! অকর্মার ঢেঁকি ! আর বিয়ে করে কাজ নেই তোমার !  কথাগুলো শুনে যেন মূর্চ্ছা গেলেন সাহস রায় , এক সর্বগ্রাসী নৈরাশ্য যেন ঘিরে ধরলো তাঁকে!
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.