![]() |
সুব্রতর ভাল থাকা : মৃদুল শ্রীমানী |
সুব্রত পিছনের বেঞ্চে বসতো । দেখতে বেশ খানিকটা বড়ো । ক্লাসে ক্লাসে বেশ থেমে থেমে পাকা পোক্ত হয়ে তবে ওঠে ও । ক্লাসে পিছনের সারিতে বসে কি যে ও করে, স্যার সব সময় লক্ষ্য করেন না। বা লক্ষ্য করতে চান না। ও টিফিন খায় না লক্ষ্য করেছিলাম। আমরা বাড়ি থেকে টিফিন আনতাম । আমার বাবার আলমারিতে একটা কাট গ্লাসের ভাস এ খুচরো পয়সা থাকতো। বাবা বলেছিলেন, দরকার বুঝলে এখান থেকে পয়সা নেবে। আমার রোজ দরকার পড়তো। মিশনারি স্কুলের গেটের বাইরে মনোরঞ্জনের আলুরদম ও ঘুঘনির দারুণ টেস্ট । বাড়ির খাবারের পরেও ওই দ্রব্য না হলে নয়।
সেই সুব্রত হঠাৎ নেই শোনা গেল । শান্ত সুস্থির ছেলেগুলি সহসা ক্ষেপে উঠে স্কুলের কারো পারমিশন না নিয়ে দলবেঁধে গেট টপকে চললাম সুব্রতর বাড়ি । রাস্তার ধারে বিশাল বাড়ি ওদের। গ্রীলের বড়ো গেট। বাড়ির ভেতর রাজ রাজেশ্বরীর মন্দির । বাড়ির সামনের ঘরে জ্যোতিষী মহারাজের বিশাল জাঁকালো চেম্বার।
ওর বাড়ির অভিভাবক স্থানীয় একজন বললেন – গতকাল সন্ধ্যায় আত্মীয়রা এসেছিলেন। ওদের শোবার জায়গা দিতে সুব্রতকে বলা হয়েছিল তার নিজের ঘর ছেড়ে চিলে কোঠায় শুতে । তাইতে দুঃখ পেয়ে সে গলায় দড়ি দিয়েছে।
বাস্তু সমস্যা সমাধানে চ্যালেঞ্জ নেওয়া মহাজ্যোতিষী টি পুত্রশোকে প্রায় নিথর হয়ে পড়েছেন । ততক্ষণে বডি হয়ে যাওয়া সুব্রত গাড়িতে উঠে মর্গে পাড়ি দিল । শীর্ণ হাত তুলে তার বাবা বললো – যেখানেই থেকো ভাল থেকো।
নিজের বাড়িতেই যে ভালো থাকতে পেলো না, সে যে আর কোথায় কি করে ভাল থাকবে আমি বুঝতে পারলাম না।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন