জীবন ঢাকি : আরতি ধর

জীবন ঢাকি : আরতি ধর
জীবন ঢাকি : আরতি ধর

পুজো এলে রতন খুব খুশি হয়,রোজ সন্ধ্যায় তার বাবা জীবন ঢাক টা বের করে টুং টাং শব্দ করে করে পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা আছে কি না, নতুন বোল বাঁধে, নতুন কাপড় দিয়ে ঝালর লাগায়, এগুলো দেখে ই রতন বুঝতে পারে পুজো এসে গেছে।

অভাবের সংসার ,নিজের জমি-জমা কিছুই নেই, বর্ষাকালে খুব কষ্ট হয় তিনটি পেটের অন্ন জোগাতে, বৃষ্টি তে দিন হাজিরা হয় না, একমাত্র উপায় মাছ ধরে বিক্রি করা। তাতে যা আসে ভালো মন্দ তো দুর, দু বেলা অন্ন জোটানোই দুস্কর।

বর্ষা বিদায় নিলেই মনে আনন্দ হয়, ওরা জাত ঢাকি, একসময় সারা বছর ধরেই ডাক পরতো ওদের। কিন্তু আজ মানুষ প্যান্ডেল, আলো সজ্জা তে অঢেল খরচ করলেও দুটো ঢাকি কে টাকা দিতে ওদের বাজে খরচ মনে হয়।

'বাবা আর ক'দিন আছে গো পুজোর, এবার ও কিন্তু আমাকে নিয়ে যাবে' আব্দার করে জীবনের আট বছরের ছেলে রতন। ওকে নিয়ে গেছিল জীবন গত বছর, কাঁসর বাজিয়েছে বাবার সাথে তাল মিলিয়ে। রোজ ভাল ভাল খাবার খেয়েছে সে। তাই এবার ও যেতে চায় ছোট্ট রতন।

'সে হবেখন ' অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয় জীবন।কষ্ট হয় মনে, পুজোয় কখনো একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারে না সে।পুজো শেষে যা কিছু উপার্জন হয় তার থেকে ছেলের জন্য একটা জামা, প্যান্ট স্ত্রী অনিমার জন্য একটা সস্তার ছাপা শাড়ি কিনে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে সে। স্ত্রী এসে হাত থেকে পুটলি টা নেয়।  'কি আছে গো এতে"? জীবন হেসে জবাব দেয় 'খুলেই দেখো না '!পুটলি খুলে শাড়ি দেখে আনন্দে চকচক করে চোখ অনিমার, কপট অভিনয় করে বলে 'শাড়ি কেন আনতে গেলে, খোকার জন্য আনলেই হয়ে যেত,? কথাটা বলেই শাড়ির আঁচল আর পাড়ের বিশ্লেষণ শুরু করে নতুন শাড়ির গন্ধ নেয় প্রান ভরে। এই দৃশ্য টা উপভোগ করে জীবন, আর এই সুমধুর স্মৃতি টা কে এক বছর ধরে অন্তরে বহন করে সে।

পুজো এসে গেছে, প্রস্তুত জীবন তার সজ্জিত ঢাক নিয়ে, পুরনো ধোয়া জামা গায়ে, হাতে কাঁসর, চোখে ভালো খাবারের লোভনীয় ভাবনা নিয়ে তৈরি রতন, আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবন কাতর প্রার্থনা জানায় দশভুজা কে "মা গো শহরের এত বড় বড় পুজো তে ঠাঁই পাই বা না পাই, কোনো ছোট পুজোতে যেন ডাক পাই মা",,,,   ,, ,,,
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.