মৃদুল শ্রীমানী
মানুষের প্রয়োজনে যন্ত্র এসেছে। অন্য কোনো প্রাণীই যন্ত্র বানাতে পারেনি। খুব সামান্য ধরনের সরঞ্জাম বানাতে পেরেছিল প্রাগৈতিহাসিক মানুষ। দা, কুড়াল, কোদাল, এইসব। ওর কার্যপ্রণালীর ভিতর নজর চালিয়ে মানুষ বুঝতে পারল নৌকার দাঁড় লিভারের নিয়মে কাজ করে। কোদালের হাতল কতটা লম্বা হলে ভালো, সেটাও ঠেকে ঠেকে বুঝল। চাকার আবিষ্কারও মানুষকে সীমানা বাড়াতে সাহায্য করেছে। ওই রাস্তায় বলবিদ্যার সূচনা। পিরামিডের পাথরগুলো গড়িয়ে নিয়ে যেতে নততলের ব্যবহার ছিল, আর গাছের গোল গুঁড়ি কাজে লাগত। যন্ত্র এল অনেক পরে।
প্রখর শীতের দিনে বাইরে বেরোতে না পেরে হাত পা চালু রাখবে বলে সুইজারল্যান্ডের মানুষ কাঠ দিয়ে ঘড়ি বানাত। ক্রমে ঘড়ি তৈরিতে সে দেশ বিশ্বসেরা। কাচ ঘসে লেন্স বানিয়েছিল, আর একটা চোঙের দুদিকে সেই লেন্স বসিয়ে দূরের জিনিসকে কাছে দেখায়। হান্স লিপারসের কারিগরিকে গাণিতিক সূত্রে ফেলে গ্যালিলিও তৈরি করেন বৈজ্ঞানিক টেলিস্কোপ। আর তাঁর দেখার সূত্রে বদলে যায় অনেক কিছু। অণুবীক্ষণ নিয়েও মাথা ঘামিয়েছেন তিনি। লিউয়েনহক আর রবার্ট হুক ওই অণুবীক্ষণ দিয়েই কোশ (কোষ নয়) আবিষ্কার করেন। এর সূত্র ধরে মডার্ন মেডিসিন।
বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে দেখে প্রশ্ন উঠেছিল, এই বিদ্যুৎ দিয়ে হবেটা কি? বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, একটা শিশুকে দিয়ে হবেটা কি? শিশুদের মধ্যে অপার সম্ভাবনার কথাই বলতে চেয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন। যন্ত্র না এলে গণিত, জ্যামিতি, অ্যাস্ট্রোনমি আর মেডিসিনের এই মাপের উন্নতি হত না। এবার চাই যন্ত্রের উপর সামাজিক মালিকানা। যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। সে ভুল করেছিল নেড ল্যাড। সে যন্ত্র ভেঙে গরিব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে ভেবেছিল। ওটা চরম বোকামি। যেমন কিনা হংকং ব্যাঙ্কে কম্পিউটার ঢুকতে দেব না বলা। আজ যন্ত্রকে সাথে নিয়ে মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন