এসো বিদ্যাসাগরে : ঋদেনদিক মিত্রো

এসো বিদ্যাসাগরে : ঋদেনদিক মিত্রো
এসো বিদ্যাসাগরে 

ঋদেনদিক মিত্রো  

এসো,  এখন বিদ্যাসাগর নিয়ে কিছু বলি,  
বর্ণপরিচয়- এর থেকেই আমরা তো পথ চলি,  
ছোট্ট বেলায় ইস্কুলেতে ঝুঁকে দুলে পড়া,  
সেই শব্দ হাওয়ায়-হাওয়ায় কত যে  দূর ওড়া,  
কাছে,  দূরের লোকের কানে পৌঁছে গেলে তা,  
গভীর কী এক অনুভবে ডুবে যেতোই বা !

মাস্টা' মশায়  নড়বড়ে এক চেয়ারেতে বসে  
ছাত্রদেরই  'পড়া ' শোনার আয়েসেতে র'সে---  
টেবিলেতে দু পা তুলে কী যেন ভাবতেন,  
তন্দ্রা-চোখে হঠাৎ-হঠাৎ চোখ খুলে জাগতেন,  
বেতটা নিয়ে টেবিলেতে দুই বার ঘা দিয়ে --  
বলে যেতেন যখন যেমন বিদ্যাসাগর-নিয়ে --- 
আমরা তখন  নীরব হয়ে শুনে যেতাম তাই,  
বিদ্যাসাগর মানে কত বড় যে সেটাই ! 

বিদ্যাসাগর থেকেই শুরু আমাদের শৈশব,  
মনের ভিতর জন্ম নিতো কতই  অনুভব,  
বর্ণপরিচয়--এর প্রথম পাতায় তাঁহার ছবি,  
কোন গভীরে নিয়ে যেতো -- সেই স্মৃতিতে মজি !  

বিদ্যাসাগর মানে হলো শুরু থেকেই শেষ,  
শিক্ষা শুরু,  দীক্ষা শুরু, চেতনার উন্মেষ,  
কেমন করে বই পড়ব,  কেমন করে ভাববো,  
কেমন করে ন্যায়-অন্যায় দেখে বুঝে জাগবো,  
কেমন করে জীবনটাকে নিঃস্ব থেকে বড়ো -- 
যায় বানানো,  সেই জন্যই বিদ্যাসাগর পড়ো!  

তাঁরই জীবদ্দশায় তাঁকে কাঁদিয়েছিল যারা,  
তাঁরই কাছে এসে আবার সুযোগ নিতো তারা, 
 
মৃত্যু-পরেও তাঁকে নিয়ে কতই ষড়যন্ত্র---
শুনছি নাকি চালিয়ে রাখে কারা অফুরন্ত !  

আসল কথা কী জানোতো -- কূটিল মানেই তাই, 
ভালোর সুনাম ধসিয়ে দিতে তাদের তো চেষ্টাই ! 

কী নির্মম  এই যে সমাজ,  যে দেয় যত আলো,  
তাকেই তত অসুবিধায় ফেলতে পারে ভালো !   

চাইনা শুনতে  কোনো কিছু -- কারণ এটাই যুক্তি --  
বিদ্যাসাগর-মানে হলো আঁধার-থেকে মুক্তি !

বিদ্যাসাগর এমন কিছু --- শেষ হয়না প'ড়ে,   
সারাজীবন তাঁরই ছবি রাখবে  ঘরে-ঘরে,   
তিনিই তো জ্ঞান,  তিনিই ধর্ম,  মুক্ত মনের রীতি,  
তিনিই হলেন পূর্ণ মানব,  পূর্ণ রূপেই কৃতি !
 
ঘরে কিছু নাড়তে গিয়ে --- এটা ওটা ঠেলে --- 
ধুলো-পড়া ' বর্ণপরিচয় ' টা হঠাৎ পেলে,  
দেখলে চেয়ে তাতে --  বিদ্যাসাগরের-ই  ছবি,  
মনে হলো দিনগুলি সব আসতো ফিরে যদি ! 
উঠলো ভেসে মনের ভিতর শৈশবেরই স্মৃতি,  
বড়ো হয়ে শিশু হলে -- কেমন অনুভূতি ! 

বিদ্যাসাগর মানেই তো বই,  বইকে ভালোবাসা,  
বিদ্যাসাগর মানে হলো ভালো হবার আশা,  
বিদ্যাসাগর মানে হলো মুক্ত মনের গতি,  
কুসংস্কার তাড়িয়ে দিতে আত্মত্যাগে ব্রতী!  

পুরানো সেই মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রাম,  
পিতা ঠাকুরদাস ও  মাতা ভগবতী নাম,  . 
সেপ্টেম্বর ছাব্বিশ -- সাল আঠেরো শ কুড়ি,  
জন্ম নিলো ভারতবর্ষে মুক্ত জ্ঞানের ঘুড়ি ! 

বীরসিংহের সেই শিশুটির তুলনা কি আর হয়,  
ধুতি,  চাদর,  চটি প'রে এক-এক যুদ্ধ জয়,  
সেই পুরানো কলকাতাতে শিক্ষকেরই চাকরি,  
আরো কত রকম কথা কল্পনাটা করি,   
সেই পুরানো কলকাতাটা -- ঊনবিংশ শতক,  
বিদ্যাসাগর হাঁটিতেছেন কলকাতারই  পথ,  
ভাবিতেছেন নিজের মত,  দেখা কারোর সাথে -- 
কুশল বিনিময়টা ক'রে ছোট্ট কথার মাপে -- 
পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলেন ভেবেই কত কী যে,  
সে-ই নিরাপদ,  যে থেকে যায় নিজের ভিতর নিজে ! 

সেই পথ ঘাট,  সে সব বাড়ি,  ঝোপ ঝাড় গাছ পুকুর,  
সে সব দোকান,  ইস্কুল আর সকাল এবং দুপুর,  
সে সব বিকেল,  সে সব রাত্রি,  সে সব কল্পনা,  
চলো তো যাই সে-কলকাতায় আমরা কয়জনা :--
 
সেই সব দিন কোথায় গেলো -- আসবে না আর ফিরে ---   
সে-কলকাতা কল্পনাতে  আসছে ধীরে-ধীরে--- 
মশা মাছির পরিবেশে কিছু রাস্তাঘাট,  
এখান সেখান কিছু বাড়ি,  কোথাও ফাঁকা মাঠ,  
এখান সেখান কিছু অফিস -- পাশে ঘোড়ার গাড়ি,  
যাচ্ছে কুয়ায় জল আনিতে কোনো নেটিভ নারী, 

সাহেব,  মেমের চলা ফেরা,  সেই সঙ্গে আর--  
কত দাপট ক'রে চলেন রাজা,  জমিদার,  
তাঁদের মাঝে একটি মানুষ তুচ্ছ ধুতি চাদর,  
রাজার রাজা হেঁটে চলেন,  তিনিই বিদ্যেসাগর ! 

বিদ্যাসাগর এমন কিছু,  পাওয়ার পরেও পাওয়া,  
বিদ্যাসাগর মানে হলো,  শুধুই এগিয়ে যাওয়া !   
হও হে তুমি যতই বড় -- পদ,  ডিগ্রীর মান-এ,  
বিদ্যাসাগর বসে কাঁদেন তোমারই মাঝখানে !  


Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.