![]() | |
দুর্গা প্রতিমা গড়তে বেশ্যালয়ের মাটি : পিনাকী চৌধুরী |
দুর্গা প্রতিমা গড়তে বেশ্যালয়ের মাটি
পিনাকী চৌধুরী
এখনও পুজো আসতে বেশ কিছুটা সময় বাকী। কিন্তু কুমোরটুলিতে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা ! হ্যাঁ, আর কিছুদিন পরেই কাশফুলের সাদর আমন্ত্রণে হয়তোবা আপামর বাঙালি উৎসবমুখর হবেন ! শারদপ্রাতে ঘাসের নরম গালিচার ওপর শিশিরবিন্দু এবং ভোরের নরম আলো জানান দেবে দেবী দুর্গার বোধনের দিন আসন্ন । বস্তুতঃ পুজো আসা মানেই যেন আপনার আমার মনটা আকাশকে ছুঁতে চায় ! হ্যাঁ, প্রকৃতিও যেন নিজেকে উজাড় করে দেয় এই শরৎ ঋতুতে ! আভিজাত্যে , বিন্যাসে এবং বৈচিত্র্যে আজও এই শরৎ ঋতু তুলনারহিত ! ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, দুর্গা প্রতিমা গড়তে বেশ্যালয়ের মাটি প্রয়োজন । কিন্তু কারণটা কি ? বহু পুরুষ মানুষ তাঁর সারা জীবনের পুণ্য পতিতালয়ে গিয়ে ত্যাগ করেন , জনশ্রুতি, কামুক পুরুষেদের পুণ্যের বোঝায় সমৃদ্ধ হয় পতিতালয় । বহু পুরুষের অবৈধ যৌনাচারে পতিতাদের ঘরের মাটি পুণ্যে ভরে যায় ।অপরদিকে পতিতাদের পাপের বোঝা হালকা করেন এইসব পুরুষেরা !সেইসব পুরুষরা পতিতাদের ঘরের পাপ নিজের ঘরে বহন করে আনেন !
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, আর পতিতারাও কিন্তু সমাজেরই অংশ , তাঁরা কোনোমতেই অশুচি নন ! সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বেশ্যারা নিতান্তই অসহায় হয়েই হয়তোবা এই জীবিকায় নেমে , নিজের দেহ বেচে কিছু অর্থ উপার্জন করেন ! হ্যাঁ, পুরুষমানুষ বেশ্যালয় থেকে পাপ বহন করে আনেন । আর দেবী দুর্গা হলেন সমগ্র নারী জাতির প্রতীক । সেই নারীকে দেবীরূপে আহ্বান জানান আপামর বাঙালি।তাই পতিতাকেও এখানে সমগ্র নারী জাতির এক অখন্ড অঙ্গ হিসেবে কল্পনা করা হয় । প্রথমে খড়ের কাঠামো, তারপর একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেনি দেবী দুর্গা । তবে এখানে উল্লেখ্য যে, দুর্গা প্রতিমা গড়তে কয়েকটি জিনিস আবশ্যক ।সেগুলি হল, গোবর, গাভীর মূত্র, গঙ্গা জল, ধানের শীষ এবং অবশ্যই বেশ্যালয়ের মাটি ।
হিন্দু পুরাণ মতে এই বেশ্যাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকেও বেশি , কারণ - ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের আশায় কঠোর তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করবার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র মেনকাকে সেখানে প্রেরণ করেন । আর মেনকার নৃত্যের ফলে বিশ্বামিত্রের ধ্যানভঙ্গ হয় ! আর তাই আজও অষ্টকন্যার মাটি সংগ্রহের পর নবম কন্যা হিসাবে পতিতালয়ের মাটি দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । কিন্তু এই নবকন্যার নামগুলি কি কি ? উত্তরে বলি, কাপালিক, নর্তকী, নাপিতানি, ধোপানি , শূদ্রাণী, ব্রাহ্মণী, মালিনী গোয়ালিনী এবং পতিতা ! পরিশেষে বলি, দুর্গা পুজার মূল উদ্দেশ্য হল সমগ্র নারী জাতিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন, আর তাই পতিতাদেরও এখানে সম্মান প্রদর্শন করার রীতিটি আজও প্রচলিত । হ্যাঁ, আমরা যতই বিষ নজরে পতিতাদের দিকে তাকাইনা কেন , সমাজে সেই বেশ্যারাও কিন্তু ব্রাত্য নয় !
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন