![]() |
পিনাকী চৌধুরী |
চিন্তনে মননে শুধুই রবীন্দ্রনাথ
পিনাকী চৌধুরী
সম্ভবত এবছরই প্রথম সম্পূর্ণ অন্যরকম ভাবে ২৫ শে বৈশাখ , রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎযাপন করা হচ্ছে ! সৌজন্যে, অবশ্যই লক ডাউন । তবে এটা যেহেতু বিশ্বায়নের যুগ, তাই হয়তোবা অনেকেই সোশ্যাল সাইটে বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ! কারণ, নিয়মগত কারণেই জমায়েত এড়িয়ে , ইন্টারনেটের মাধ্যমে রবি ঠাকুরের কবিতা ও গানের মাধ্যমে অনেকেই তাঁর বন্দনা করবেন! তবে আজও কিন্তু রবীন্দ্রনাথ শুধুমাত্র একটি নাম নয়, বলা ভাল, একটি সুবৃহৎ প্রতিষ্ঠান! হ্যাঁ, যিনি তাঁর শৈশব থেকেই নিজের সাথে নিজের যুঝে নেওয়ার পদ্ধতি আয়ত্ত করেছিলেন একাকী জীবনযাপনের মাধ্যমে । সেই সঙ্গে অবশ্যই রপ্ত করেছিলেন কঠোর আত্মনিয়ন্ত্রণ ! বারে বারে তীব্র অপমান, কিম্বা বিষাক্ত সমালোচনা, কোনোকিছুই যেন তাঁকে টলাতে পারেনি ! বরং উল্টে বিশ্বকবি সেখান থেকে ' শিক্ষা' নিয়ে আরও সাবলীল ভাবে লিখে ফেলেছিলেন অসাধারণ কিছু উপন্যাস ও ছোট গল্প !
হ্যাঁ, আজও তাঁর ব্যতিক্রমী সহনশীলতা আমাদের হয়তোবা প্রেরণা দেয় ! উৎসাহ দেয় কিভাবে সমস্যার সাথে সহবাস করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ! পাঠক, আপনার মনে তো অনেক সময়ই অবসাদ সৃষ্টি হয় ! কিন্তু তাই বলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানসিক অবসাদ? হ্যাঁ, ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি ! আসলে সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে ক্রমে ক্রমেই জড়ো হতে থাকে একধরনের অতৃপ্তি ! পাঠকের সাবলীল উচ্ছাস, অথবা দর্শকদের প্যাশন, বহু আকাঙ্খিত পুরস্কার, অভিবাদন- এসবের কোনো কিছুই মেটাতে পারে না সেই তৃষ্ণা! তবে কি সেই অপ্রাপ্তি ? তা না জানা গেলেও একসময় নড়বড়ে হয়ে যায় সমস্ত সত্তার ভিত , ক্রমাগত গুমরোতে থাকেন সেই সৃষ্টিশীল মানুষটি ! এক অলৌকিক বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাঁর অন্তরের সেই জ্বলন্ত অঙ্গার !
এক অদ্ভুত অনুশোচনা এবং অপূর্ণতা তাঁকে যেন কুরে কুরে খায় ! ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন , ঠিক তার পরের বছরই ১৯১৪ সালের মে মাস থেকে রবীন্দ্রনাথের মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয় ! বস্তুতঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , যিনি কিনা তখন খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থায় অনেকটা যেন মধ্যগগনে দীপ্যমান সূর্যের মতোই সবাইকে আলোকিত করছেন ! হ্যাঁ, সেই রবীন্দ্রনাথ, যিনি কাব্য রচনাকে জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্রত মনে করতেন ! তখন মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে কেমন যেন কোনো এক অচেনা কারণে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব কবি ! তবে তাঁর সংবেদনশীল ও অনুভূতি সম্পন্ন একটি মন ছিল বলেই হয়তো অতি সুন্দর লেখনী উপহার দিয়ে গেছেন আমাদের ! তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জানতে হলে, বা বুঝতে হলে শুধুমাত্র ঘটা করে ২৫ শে বৈশাখ বা ২২ শে শ্রাবণ উৎযাপন করলেই হবে না ! বাস্তবে রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে কখনো সখনো নগ্ন প্রকৃতির অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে ! হারিয়ে যেতে হবে প্রকৃতির কোলে ! কখনও বা সেই চিরাচরিত অম্লমধুর প্রেম অপ্রেমের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে ! আবার কখনও আটপৌরে অনিশ্চয়তার জীবনেকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে হবে, তবেই... !
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন