![]() |
নারী দিবস : অর্পিতা নন্দী |
সায়ন্তিকা কম্পিউটারে লগ অফ আইকন টা ক্লিক করলো, তারপর কপালের দুগাছি অবাধ্য চুলকে শাসন করে,মোবাইল ফোনটা আনলক করে তুলে নিলো হাতে। উবের আপ টা চালু করলো, ধুস!!! এই সময় যা হয়ে, যথারীতি 'নো কার অভ্যালেবল'.. যাচ্ছেতাই একেবারে। মনে মনে বিড় বিড় করতে করতে বোতল থেকে এক ঢোক জল খেল, আজ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ঠেঙ্গাও আবার। নয় বাস, না হলে অটো, তারপর আবার রিক্সার লম্বা লাইন। অয়ন্তিকার মাথায় ভিড় করে আসছিলো কথা গুলো..
প্রতীকের সঙ্গে ব্রেক আপ টা হবার ছিল, হয়েও গেলো, কিন্তু তার সঙ্গে যে সব আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধে গুলো ছিল সেগুলোই কুরে কুরে ওঠে এখন। দৈনিক পিক আপ বা ড্রপ টা এখন প্রতীকের মতোই বিগত অতীত। তাড়াহুড়ো করে অয়ন্তিকা উঠে পড়লো কেবিন ছেড়ে.. সুগঠিত সুন্দর ম্যানিকিউর করা আঙুলের চাপে বায়োমেট্রিক মনিটরের সবুজ আলোটা জ্বলে উঠলো, বিরক্তির পারদ টা চড়ছে ধীরে ধীরে...দ্রুত পা চালালো বাস স্ট্যান্ডের দিকে।
'গুষ্টির পিন্ডি চটকাবো তোদের' বিড়বিড় করে উঠলো অয়ন্তিকা, স্ট্যান্ড এ রিক্সা নেই, লম্বা লাইন, মাইকে দূর থেকে ভেসে আসছে . 'আজকের বিশেস অতিতি সিমতি...' ... 'যত বেজন্মার দল' হালকা খিদেটা মাথা ছাড়া দিচ্ছে...তাই অয়ন্তিকার মেজাজ আপাতত সপ্তমে। তেতো মুখে ধৈর্যের পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত হতে সে এদিক ওদিক চোখ বলেছিলো, হটাৎ চোখ পড়লো বুড়ো রিক্সায়ালাটার ওপরে..
পঞ্চাশোর্ধ নিতাই রিক্সা চালাচ্ছে প্রায় চল্লিশ বছর, তিন মেয়ে নিয়ে নাজেহাল শরীরটাও ভাঙছে আসতে আসতে.. বড়োটা এই স্টান্ডেরই বাবলুকে বিয়ে করলো ঘর পালিয়ে, সে বাবলুও আজ দু বছর ধরে নাপাত্তা, এখন দুবাড়ী রান্না করে নিজের এক চিলতে ভাড়া ঘরের হেঁশেল চালিয়ে, দুটো বাচ্ছাকে পুরসভার ইস্কুলে পড়িয়ে,মাঝে মধ্যেই বুড়ো বাপ্ মায়ের খবর.. মেজোটা তো বলে পাল্লারে কাজ করে.. যে কটা টাকা রোজগার করে তার কিছু টা দিয়ে সংসারের টুক টাক খরচ চালায়ে, একটা ফ্রিজ ও কিনে ফেলেছে এরই মধ্যে..দিনের শেষে রিকশা টেনে ফিরে এক গেলাস ঠান্ডা জল.. কার না ভালো লাগে.. কিন্তু, আপদ টা হলো রাজু, ওকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ব্যাটা বলে প্রোমোটার আসলে জমি কেনা বেচার দালাল, কথা দিয়েছে বিয়ে করবে.. দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভাবে নিতাই। ছোটোটা, একদিন ইস্কুল ফেরতা আর বাড়ি ফিরলো না...
পিছন থেকে একটা তীক্ষ্ণ হর্ন , অয়ন্তিকা একটু অন্যমনস্ক হয়ে সরে এসেছিলো রাস্তার ওপরে.. সারা শরীর ঝাঁকিয়ে উঠলো, অস্ফূটে একটা কুশব্দ বেরোতে গিয়েও আটকালো দাঁতে দাঁত চেপে.. দুদিন দুরাত এক করে ক্লাব দাদা কাউন্সিলার পাড়ার নেতা শেষে থানা পুলিশ... তারপর একদিন ভোরে খবর এলো পাওয়া গেছে মেয়েটাকে.. কদম তোলার মাঠে.. ক্ষত বিক্ষত দেহ নিয়ে পড়ে আছে... মানুষের মতো জানোয়ার গুলো ফেলে রেখে গেছে আস মিটিয়ে..
গুমোট করছে, বৃষ্টি হবে হয়তো.. অয়ন্তিকা একটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করলো বুড়োটাকে ..যাবে নাকি ? নিতাই তাড়াতাড়ি রিক্সাটা সামনে এগিয়ে আনে.. কোনদিকে যাবেন গো দিদি? ডাক্তার সরকারের চেম্বার চেনো? এই ইয়ং বয়েজ ক্লাব এর পাশে.. অয়ন্তিকা উঠে বসে পা টা চেপে রাখলো সামনের স্ট্যান্ডে, ওতে ব্যালান্স ঠিক থাকে..হঠাৎ ঝুপ করে রাস্তার বাতিস্তম্ভএর লাইট নিভে যেতেই ফোন টা বেজে উঠলো। বাবা কলিং......ফোনটা কেটে কোনোরকমে ব্যাগ সামলে হোয়াটস্যাপ করলো.. বাবা এম অন মাই ওয়ে হোম... নিতাই গেয়ে উঠলো.. 'ইচ্ছা করে.. পরানডারে গামসা দিয়া বান্ধি'...
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন