![]() |
এই তো জীবন : আরতি ধর |
অনেক দিন থেকেই চোখের সমস্যায় ভুগছিল রীনা, কখনো চুলকায়, কখনো বা লাল হয়ে থাকে। ফিরেছে সুশান্ত, জামাকাপড় খুলতে খুলতে আওয়াজ দেয় 'রীনা চা, আমি বেরোবো আবার ' 'ইস কতদিন থেকেই চোখের জ্বালায় ভুগছি গো' বলতে বলতে চায়ের প্লেট হাতে দেয় রীনা। 'দেখো চোখের সমস্যা তো আমি কি করবো! ডাক্তার দেখাও, বেকার ঘ্যানঘ্যান কোরো না তো ' বিরক্ত হয়ে জবাব দেয় সুশান্ত।
অভিমান হয়, বন্ধ হয়ে আসে গলা, কোনো কথা না বলে চলে যায় পাশের ঘরে রীনা।
মেয়েদের সব অভিমানের সাক্ষী বোধহয় বালিশ!উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গোঁজে রীনা, ঝাপসা হয় চোখ।
"একটু কাজল পরবি তো চোখে " বলেছিল দেবাশিস, রীনা ও তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেছিল 'কোন কাজে '? আমার জন্য, বলেছিল দেবাশিস। সেই ছোট্ট বেলা থেকে সে দেখে এসেছে দেবাশিস কে, প্রত্যেক টা দিন একবার আসা চাই রীনা দের বাড়ি, সাইকেলের আওয়াজ টাও যেন পরিচিত ছিল রীনার। এসেই অভ্যাস বশত কখনো চুল ধরে টান, নয়তো গালে একটা চিমটি কেটেই বলত 'দে চা'। 'তোমার লজ্জা নাই ,এসেই চা চাও'? বলত রীনা, শুনে হেসে ফেলত দেবাশিস বলত তোর লজ্জা নেই? আরে আমি আবার কি করলাম! এই যে আমি না বললে তুই কখনো দিয়েছিস চা?
রীনার মা প্রচন্ড ভাল বাসত দেবাশিস কে, একদিন না এলেই বলত তুই কিছু বলিস নাই তো ওকে? আমি আবার কি বলব? দেখো হয়তো কোথাও ঝাণ্ডা হাতে 'মানছি না, মানবো না 'করছে নয়তো মরা পোড়াচ্ছে শ্মশানে।বড্ড নোংরা মানুষ ছিল, শীতকালে মরা পুড়িয়ে স্নান তো দুর, জামা কাপড় ও পাল্টাতো না, এসে রীনা কে বলত দে চা, সোজা শ্মশান থেকে এখানে,,,
মাআআআআ ,নাঃ মা কে জানানো হয় নি কোনো দিন, তার আগেই এক হাতে গলা আর অন্য হাতে মুখ চেপে ধরত রীনার ,,,
সময় বদলে যায়, রীনার জন্য পাত্র পছন্দ হয় বাবার, একটা বেকার বাউন্ডুলে ছেলে যত ভালো ই হোক না কেন তার কাছে নিজের মেয়ে দেওয়া যায় না চিরদিনের জন্য, বাবারা মেয়েদের স্বচ্ছন্দের কথা ভাবেন খুব, শান্তির কথা ভাবেন কি?
আজ স্বচ্ছন্দে আছে রীনা, বাড়ি, গাড়ি, সংসার, সন্তান সবকিছুই, তবে অভাব টা কিসের? ব্যথা টা কোথায়?
'মা কত ঘুমাও, রান্না ঘরে যাবে না, চিত্রহার যে শুরু হয়ে গেল '?আওয়াজ দেয় রীনার একমাত্র মেয়ে সম্পূর্ণা ।চোখ মুছে খোলা চুল খোপা করতে করতে রীনা বলে "যাই মা"
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন