![]() |
কবি কথন : কাজী সাইফুল ইসলাম |
কিন্তু গান শেখা হয় নি। কবিতা লিখতে থাকে। স্কুল পার করে কলেজে যায়। একটি কবিতা কোথাও ছাপাতে পারে নি। তাই নাম করা কবিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। একটি কবিতা ছাপার জন্য পত্রিকা অফিসে যায়। কিন্তু কবিতা ছাপা হয় না। মুখের উপর তারা বলে দেয়- কবিতা হয় নি।
বড় কবিরা বলে- বেশিবেশি কবিতা পড়ো। তাদের উপদেশ মেনে দিনরাত কবিতা পড়ে। ক্লাসের বই কেনার টাকা দিয়ে কবিতার বই কেনে। কিন্তু ভাল কবিতা লেখা হয় না। কেউ কেউ বলে- কবিতা লিখতে হলে কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু কষ্ট কি করে পাবে?
হঠাৎ কলেজের এক প্রভাত ফেরিতে দেখা হয় নবনীর সাথে। কালো গভীর চোখ, লম্বাচুল, সুন্দর মুখ। হাতে কতোগুলো শিউলি আর গ্লাডিওলাস। শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে ওরা সারি বেঁধে নেমে আসে। দুবার চোখে চোখ পড়ে রায়হানের।
নবনীর কালো চোখে তাকিয়ে যে অনুভূতি হয়, তা নিয়েই কবিতা লেখে রায়হান। কবিতাটি শহরে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ছাপা হয়। ছাপার অক্ষরে প্রথম নিজের নাম দেখতে পায়, কবি রুদ্র রায়হান। তার সাথে দেখেছিল নবনীও।
তার চোখ নিয়ে এত সুন্দর কবিতা হতে পারে! খুবই অবাক হলো নবনী। রায়হানের কাছে এসে তাকে ভালবাসার কথা জানায়। ধীরে ধীরে ওরা দুজন কাছে আসে।
প্রায় প্রতিদিনই কলেজ ফাঁকি দিয়ে ওরা গিয়ে বসতো রঙচটা একটি দেয়ালের পাশে। দেয়ারের গায়ে নানা রকম রাজনৈতিক শ্লোগান লেখা থাকত। আর লাভ চিহ্নের মধ্যে থাকত দু' অক্ষরের বিশেষ সংকেত। কোনকোন দিন নবনী না এলে খুব মন খরাপ হত রায়হানের। তখন খুব কবিতা লিখতে ইচ্ছে হত।
ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবার পর বাসা থেকে কম বের হত নবনী। তখন রাতে নবনীর জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থকত রায়হান। নবনীর কণ্ঠ শুনলেও খুব ভাল লাগত। তারপর নবনী কোন ছুতোয় জানালা খুলে দিলে এক নজর দেখেই চলে আসত।
ইন্টারমিডিয়েট শেষ। ঢাকায় ভর্তি হল কবি রুদ্র রায়হান। ঘুম নেই, খাওয়া নেই- দিনরাত কবিতা আর কবিতা। নবনীকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারে না। কবিতা নিয়ে দৈনিকগুলোতে দৌড়ঝাপ শুরু হয় নতুন শহরে। কেউ পাত্তা দেয় না। এদিকে মনটাও খুব খারাপ। ইউনিভার্সিটিতে মেয়ে বন্ধুরা কাছে আসতে চায়। কিন্তু কবি নবনীকে ভুলতে পারে না।
হঠাৎ একদিন জানতে পারে নবনীর বিয়ে হয়ে গেছে। কথাটা প্রথম বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সেদিন যেন কষ্টের রঙ দেখতে পায় কবি- কালো মেঘের মতো। আবার যেন মনে হয়- মেঘ নয়, ওগুলো ভয়ংকর বুনো শুয়োর।
মানুষের স্বভাব হচ্ছে- অমূল্য কোন কিছু হাতের নাগালে পেয়ে গেলেই সেটাকে মূল্যহীন ভাবতে শুরু করে।
বন্ধুরা বলল- পত্রিকায় যেতে হবে না। একটি বই বের করলেই তুই ফেমাস হবি। তোর কবিতা এখন বিশ্বমানের। বই প্রকাশ হলো। প্রেমের কবিতা নতুনদের মাঝে খুবই জনপ্রিয় হলো। তাতে কবির নাম হলো ঠিকই, টাকাপয়সা কিছু পেল না। প্রকাশক বলে- ধুর মিয়া, কবিতার বই কেউ কিনে পড়তে চায় না।
লোকাল বাসে শাহবাগ নেমে পায় হেঁটে মেলার দিকে হাঁটতে থাকে কবি রুদ্র রায়হান। ভিড় ঠেলেঠুলে দুচার জন এসে তার সাথে সেলফি তুলতে চায়। অনেক মেয়েরা হাতে ফুল নিয়ে হাসি মুখে বলে- রুদ্র ভাইয়া একটি সেলফি হবে- প্লি .. জ।
তখন নিজেকে দামি মনে হয়। স্টলে গিয়ে দাঁড়ালেও সেলফি তোলার ভিড় জমে। কিন্তু বই কেনে খুবই কম। চার পাঁচজন মিলে একটি বই কিনে সেলফি তোলে। কেউকেউ আবার বই না কিনেই সেলফি তুলে চলে যায়।
রাতে মেলাশেষে মনমরা হয়ে মেসে ফিরে আসে কবি। প্রকাশের দুশ কপি বই কেনার টাকা কোথায় পাবে। হঠাৎ মনে হয়- মেসের বাজার করা হয় নি। পকেটে একটি টাকাও নেই। সেদিন বুয়া বলেছিল- কবিতা কি পাকাই খাওয়া যায় না!
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন