![]() |
গোবিন্দ ধর |
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী একজন বাংলাদেশী কবি ও লেখক।বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।সিরাজী ২০১৮ সালে ২০ই ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন।
হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৮,ফরিদপুর, বাংলাদেশে। পেশা কবি, ঔপন্যাসিক, প্রকৌশলী ভাষা বাংলা জাতীয়তা বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বাংলাদেশ শিক্ষা প্রকৌশল-স্নাতক। উল্লেখযোগ্য রচনা, বলি দাও বৃক্ষ দাও দিন (কবিতা), নোনা জলে বুনো সংসার (কবিতা), নির্বাচিত কবিতা উল্লেখযোগ্য। পুরস্কার বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), একুশে পদক (২০১৬)।
কবি যখন ছড়া লেখেন কিংবা ছড়াকার যখন কবি হোন দুজনই দুজনকে গড়েন ভাঙ্গেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।হাবীবুল্লাহ সিরাজীও এমনই একজন প্রতিষ্ঠিত ছড়াশিল্পী।বুনেন ছড়ায় শিশুদের মনোজগৎ। আজকের সময়ে শিশুরা ছোট পরিবারের যাতাকলে মানসিকভাবে অসুস্থতায় ভোগে।সে জায়গায় তাঁর "এই আছি মৌমাছি" শিশুদের মনের রাজকুমার রাজকুমারীদের জাগিয়ে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে।
হাবীবুল্লাহ শিশুতোষ ছড়ায় শিশু যে ভাষায় কল্পনা করে তা-ই যেন শব্দ চয়নের মাধ্যমে তুলে এনেছেন শিশুর মনের শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে।
যেমন
ইটি ফুড়ুৎ উটি ফুড়ুৎ
জল গড়িয়ে কলসী ফুড়ুৎ
মোটা ফুড়ুৎ গোটা ফুড়ুৎ
ফুটো চালে বৃষ্টি ফুড়ুৎ।
আরো এক অন্তর নিহিত যন্ত্রনাও কি নেই?তাঁর ছড়ায় আমরা তাও পরিলক্ষিত হই।
ঝড়ে ওড়ে ঘরের চাউনি
মাথায় ফুটো ছাতা।
দু'ছড়া ধান ঝুলিয়ে দিয়ে
পাখির ফাঁদ পাতা।
এমনি আমরা তাঁকে যত পড়ি ততই বিস্মিত হই তাঁর গভীর অন্তর্বয়নে।ছড়ার মাঝে এরকমই রূপকথা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পাশাপাশি তাঁর ভাষার অন্তর্লীন স্রোত আমাদেরকে হাবীবুল্লাহ পাঠ জরুরী করে তুলে। আমরা মুগ্ধ বালকের বিস্ময় ভাব তরঙ্গে পাঠ করি তাঁকে।
"এই আছি মৌমাছি"র রূপকার হাবীবুল্লাহ কখনো তুলে আনেন শিশুর মনোজগতের নানান মজা খুশি আর খেলনা সামগ্রী পাশাপাশি তিনি এই সময়, সময়ের পাঠ পরিবেশ,নদী নালা ঝড় বৃষ্টি পাখি আকাশকে মৌমাছির মতো পরখ করেন, মধু তুলে আনেন। এনে আমাদের মনের শিশুদের পাতে কি সুন্দর করে পরিবেশ করেন যা আমাদের মনেও এক আকাশ আনন্দ আর যন্ত্রনায় বিদ্ধ করে সময়ের সংকটগুলো পুনঃপাঠে।
বাহান্নের একুশ।মাতৃভাষার প্রতি তাঁর শপথ।তাঁর কবিতার মতো গভীর এই বয়ন অথচ সহজ সরল করে শিশুদের ভাষায় একুশের গান এই একুশ ছড়াটি।একটু পাঠ করলেই ভাষার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা টের পাওয়া যায়।
একুশ মানে মাতৃভাষা
একুশ মানে ডুব সাঁতারে মায়ের কাছে আসা।
একুশ মানে সালাম বরকত
একুশ মানে শিমুল ফোঁটা রক্ত ঝরা পথ।
একুশ মানে মাটির বাড়ি
একুশ মানে শহীদ মিনার শপথ সারি সারি।
আজিজুর রহমানের ছবিতে সাজানো বইটি আমাদের মনকে আকৃষ্ট করে। শিশুর আকাশে আজ শুধু চাঁদ তারা পাখি উড়ে না।আকাশ ভেদ করে নামে রকেট।দূরকে নিকট করেছে বিভিন্ন মাধ্যম।ডটকমের যুগের শিশুরা শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন বুনে না।বাস্তবের জগতেও পরিক্রমা করে।একই সাথে রূপকথার মাঠ ও ইন্টারনেটের যুগের শিশুদের উপযোগী করেই তিনি ছড়া বুনে আমাদের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন।তাই তিনি সাধারণজন নন বিশিষ্টজন।
হয়তো তিনি কবি বলেই তাঁর যন্ত্রনা ও খুশির ভাষার নিজস্ব বযন ফুটে উঠেছে ছড়ার শরীর গঠনেও।আর এখানেই পাঠকও তাঁর ছড়া পাঠ করতে করতে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সফল একজন ছড়াকার হিসেবে আমার ও পাঠকের কাছে যৌথভাবে আদৃত হবেন।এ দাবী আমিও করি।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন