![]() |
শৌভিক রায় |
শৌভিক রায়ঃ কবি, লেখক, গল্পকার ও সম্পাদক
পেশায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুলশিক্ষক শৌভিক রায় বর্তমানে উত্তরবঙ্গ থেকে নিজস্ব সাহিত্যকর্ম দ্বারা বাংলা সাহিত্যে একটি অন্যতম জায়গা করে রেখেছেন। ১২ জুলাই, ১৯৭০ সালে ততকালীন জলপাইগুড়ি জেলার ফালাকাটায় (এখন আলিপুর দুয়ার জেলার অন্তর্গত) জন্মগ্রহণ করে সেখানেই বড় হয়ে ওঠেন। যদিও কর্মসূত্রে কোচবিহার নৃপেন্দ্রনারায়ণ উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক হওয়ায় বর্তমানে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
সাহিত্যগতভাবে শৌভিক রায়ের পরিচয় অনেক। তিনি কবি। তিনি সম্পাদক (তাঁর সম্পাদিত 'মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা' বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হয়ে উঠছে দিনদিন)। তিনি গদ্যকার। তিনি গল্পকার। এমনকি ফটোগ্রাফারও। তবে সমস্ত পরিচয়ের উর্ধ্বে শৌভিক রায় নিজেকে একজন লেখক বা গল্পকার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে চান বেশি করে। যদিও সেই প্রতিষ্ঠা তিনি তাঁর পাঠকের থেকে বহু আগেই পেয়ে গেছেন। শৌভিক রায়ের পিতামাতা উভয়ই শিক্ষতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পিতা নিরোদবরণ রায় ফালাকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক হবার পাশাপাশি নিজেও একজন লেখক ছিলেন। সুতরাং শিক্ষা-সংস্কৃতিঘেরা পরিবার থেকে উঠে আসা শৌভিক রায় কৃতি ছাত্র হবার পাশাপাশি স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মাঝে বেশ কয়েকটি বছর কলম থেকে দূরে থাকার জন্যই হয়ত তাঁর প্রথম বই প্রকাশ হতে একটু সময় লেগে যায়। শৌভিক রায়ের প্রথম প্রকাশিত বই তাঁর কাব্যগ্রন্থ "ইছামতীর স্বপ্নাদেশ ও অন্যান্য" ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর সেই একই বছরে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "বৃত্তপথ"। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় গদ্যের বই "মুজনাইয়ের বালক" (২০১৫), ভ্রমণগ্রন্থ "GOআ" (২০১৫), ফটোপোয়েট্রি "ডুয়ার্সের নোটবুক" (২০১৬), গল্পগ্রন্থ "সুরমা কলিং" (২০১৭), শব্দ ছবির ডুয়ার্স (২০১৮) ইত্যাদি বইগুলি। বইগুলির মধ্যে "মুজনাইয়ের বালক" এবং "সুরমা কলিং" পাঠকমহলে খুব সাড়া ফেলে। "মুজনাইয়ের বালক" গদ্যগ্রন্থটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে শৌভিক রায়ের অপর নাম-ই হয়ে যায় 'মুজনাইয়ের বালক'। বাংলা সাহিত্যের বিপুল পাঠক তাঁকে এখন মুজনাইয়ের বালক বলেই চেনেন। এছাড়া গল্পগ্রন্থ "সুরমা কলিং"ও বহু আলোচক-সমালোচকের প্রশংসা কুড়োয়।
শৌভিক রায় উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের নামী-অনামী বিভিন্ন ছোট কাগজে নিয়মিতই লিখে থাকেন। এছাড়া তাঁকে প্রায় নিয়মিতই লিখতে দেখা যায় আনন্দবাজার পত্রিকা, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, আজকাল ইত্যাদি দৈনিক কাগজগুলিতে। এছাড়া ভ্রমণমূলক বানিজ্যিক পত্রিকা " সফর"--এ নিয়মিত ভ্রমণ কাহিনী লিখে থাকেন। আর লেখালেখি বা সাহিত্যচর্চায় সম্মান বা পুরষ্কার খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ এটা তিনি মনে না করলেও গ্রহণ করেছেন 'ক্যালকাটা ইউনাইটেড কালচারাল সোসাইটি সম্মাননা-- ২০১৬', 'ঝাড়খন্ড বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি মঞ্চ সম্মাননা-- ২০১৭', 'ফালাকাটা পূর্ণিমা সম্মেলন সম্মাননা-- ২০১৭', 'প ব সরকারের পর্যটন বিভাগ ও এন বি ডি ডি কর্তৃক সম্মাননা--২০১৮', 'বিধান শিশু উদ্যান শিক্ষা সম্মান--২০১৮', 'সঙ্গম সাংস্কৃতিক সম্মান--২০১৮', 'মাইলস্টোন সম্মান--২০১৯' এবং ইত্যাদি। অবশ্য প্রকাশিত কোনো লেখা পড়ে পাঠক যে মন্তব্য করেন সেটাকেই তিনি শ্রেষ্ঠ সম্মান বলে দাবী করেন। এই লেখালেখির সূত্র ধরেই একসময় বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক প্রয়াত লীলা মজুমদারের সঙ্গে চিঠিতে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি হয় তাঁর। এছাড়া চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আরও অনেকের সঙ্গেই।
অহংবর্জিত এই লেখক লেখালেখির পাশাপাশি গোপনে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন। তাঁর একটি বিশেষ গর্বের জায়গা হল স্ত্রী রীনা সাহা যিনি নিজেও শিক্ষিকা এবং কবি ও লেখিকা। সময় পেলেই ভালোবাসার মানুষদুটি বেরিয়ে পড়েন উত্তরের পাহাড়-জঙ্গল থেকে শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন