ওখানে ওরা থাকে
সিদ্ধার্থ সিংহ
(সংবাদ প্রকাশ : এডস রোগীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন বন্ধুরাই :
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ ডিসেম্বর ২০০২)
রেল লাইন কিংবা গঙ্গার ধার থেকে আর ঝুপড়ি উচ্ছেদ করবেন না।
ওখানে ওরা থাকে
ওরা মানে ভরত, গৌরব, নিমাইরা।
যখন গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতে, তস্য গলিতে
মুহুর্মুহু রক্তদান শিবির বসছে
বলছে--- আমরা রক্ত দিয়ে বক্রেশ্বর গড়ব
তখন কলকাতার ডাক্তাররাও মেতেছিলেন যজ্ঞে।
একসঙ্গে সহস্রাধিক ডাক্তার রক্ত দেবেন!
ঐতিহাসিক কাণ্ড।
সমস্ত মিডিয়া হাজির,
ক্যামেরা কাঁধে অপেক্ষা করছে ডজনখানেক ফোটোগ্রাফার।
পর দিন প্রথম পাতার খবর---
সে দিন রক্ত দিতে এসেছিলেন সাকুল্যে মাত্র তিন জন ডাক্তার,
যার মধ্যে একজন পরে বন্ধুদের কাছে স্বীকার করেছিলেন---
আমি আসলে চেম্বার থেকে ফেরার পথে
রগড় দেখতে গিয়েছিলাম।
রেল লাইন কিংবা গঙ্গার ধারের ঝুপড়িগুলো আর বুলডোজার দিয়ে ভাঙবেন না।
ওখানে ওরা থাকে
ওরা মানে ভরত, গৌরব নিমাইরা।
কসবার অত বড় ক্লাব মন্ত্রীতে-মন্ত্রীতে ছয়লাপ করে দিয়ে
আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত যে সমাজসেবীর হাত দিয়ে
কুষ্ঠরোগীদের বস্ত্র বিতরণ করল
মঞ্চ থেকে নেমেই তিনি প্রথম খোঁজ করলেন---
এক নম্বর সেনিটাইজারের।
রেল লাইন কিংবা গঙ্গার ধার থেকে ওদের সরাবার কথা একবারও ভাববেন না
ওদের মানে ভরত, গৌরব, নিমাইদের।
বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের কে যেন কী করে জেনে গিয়েছিল
সমীরবাবুর এইচ আই ভি রিপোর্ট
তার পর কানে কানে, ফোনে ফোনে, সেলফোনে
ফ্ল্যাটের এ জানালা থেকে ও ফ্ল্যাটের ঝুল-বারান্দায়,
পনেরো মিনিটও লাগেনি
তার চেয়েও কম সময় লেগেছিল সমীরবাবুকে পাড়া ছাড়া করতে
কারণ, তার এইচ আই ভি--- পজিটিভ।
আর প্রদীপের মারাত্মক এডস হয়েছে জানার পরে
টালিগঞ্জ রেল লাইনের ঝুপড়ির ভরত
বউকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে নিজের ঘরটা ছেড়ে দিয়েছে তাদের থাকার জন্য।
ওরা খাবে কী! তাই প্রতিদিন এক্সট্রা আরও দু'ঘণ্টা সাইকেল-রিকশা চালাচ্ছে নিমাই।
গৌরব ছোটাছুটি করছে কী করে প্রদীপ আর ওর বউকে
আরও কিছু দিন বাঁচিয়ে রাখা যায়,
তত দিনে ওদের বাচ্চা দুটো যাতে একা-একা একটু হাঁটতে শেখে।
রেল লাইন কিংবা গঙ্গার ধার থেকে ঝুপড়িগুলো ভেঙেচুরে জ্বালিয়ে দেবেন না।
মনে রাখবেন, ওখানে ওরা থাকে---
ওরা মানে ভরত, গৌরব আর নিমাই।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন