সারা বিশ্বই এখন যেন ত্রাস সৃষ্টি করেছে এই করোনা ভাইরাস ! মূলত সারা বিশ্বেই মৃত্যু মিছিল অব্যাহত ! খুব একটা স্বস্তির জায়গায় নেই আমাদের এই ভারতবর্ষ ! প্রায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ! সবাই এখন হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করছে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দিকে ! তবে লক ডাউন কিন্তু এর স্থায়ী সমাধান নয় , অন্ততপক্ষে করোনা ভাইরাসের শৃঙ্খল বা সংক্রমণের গতিটাকে সাময়িক রোধ করা সম্ভব ! কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো ! তবে আজ মন ভালো নেই আপামর বাঙালির ! বাস্তবে ধরৎ ঋতু সত্যিই যেন তুলনারহিত ! নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘের ভেলা, অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকা শিউলি ফুল , কিম্বা দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠে আন্দোলিত কাশফুল দেখে প্রতিবারই আপনার বা আমার মনটা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে ! এইতো গতবছরও এইসব দৃশ্য দেখে বুঝেছিলাম যে মা দুর্গার বোধনের দিন আসন্ন ! কিন্তু এইবছর পরিস্থিতি ভিন্ন ! তবে দুর্গা পুজো অবশ্যই হবে ! কিন্তু সেই বিশাল আড়ম্বর বোধহয় আর সম্ভব নয় ! সেই থিমের পুজো দেখতে পুজো মন্ডপে অসংখ্য দর্শনার্থীদের ভিড় এইবছর একেবারেই সম্ভব নয় ! খবরে প্রকাশ, ইতিমধ্যেই কুমোরটুলিতে প্রচুর মৃৎশিল্পী সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেছেন ! করোনা আবহে এখনো পর্যন্ত আর সেইভাবে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা নেই ! ঠাকুরের কিছু বায়না হয়তো হয়েছে, কিন্তু খুব একটা কিছু নয় ! এবছর কলকাতার অনেক পুজো কমিটি কিন্তু তাদের বাজেটে কাটছাঁট করেছে ! এমনকি তারা থিম পুজো ছেড়ে একচালা সেই সাবেকি দুর্গা প্রতিমা গড়তে চাইছেন ! এমনকি কতিপয় পুজো কমিটি তাদের বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে দরিদ্র মানুষদের ,অন্ন, বস্ত্র দান করতে ইচ্ছুক ! হ্যাঁ, লক ডাউনের জেরে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন ! তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ ! তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পুজো মন্ডপে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখাই শ্রেয় ! এবং অবশ্যই প্রত্যেক দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করাটা আবশ্যিক ! সম্প্রতি শুনলাম যে, আসানসোলের কিছু পুজো কমিটি এইবার ঘট পুজো করবে ! ঈশ্বর সাকার ? নাকি নিরাকার, এই প্রশ্ন আজ অবান্তর ! তবে নিয়মনিষ্ঠা করে ঘট পুজোর গুরুত্ব আজও অপরিসীম ! বাস্তবে ঘট হল মানুষের বুদ্ধির আধার ! ঘটকে প্রথমে গঙ্গা মাটির তালের মধ্যে পঞ্চশস্য দিয়ে তার ওপর বসানো হয়। আর ঘটের মধ্যে থাকে গঙ্গা জল এবং ওপরে অবশ্যই পাঁচটি আমের পল্লব ! আর তার ওপর একটি ফল সিন্দুর মাখিয়ে স্থাপন করে সঠিক মন্ত্রচ্চারণের মাধ্যমে ঘটে দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয় ! কিন্তু এই ঘট আসলে কি ? তখন সমুদ্র মন্থন চলছে ! দেব আর অসুরের তুমুল যুদ্ধ ! সমুদ্র থেকে একে একে উত্থিত হচ্ছে নানা ধরনের রত্ন , মণি মাণিক্য ! তারপরেই উঠলেন স্বয়ং মহালক্ষ্মী ! কিন্তু তারপরেই সফেন সমুদ্র থেকে উঠতে থাকে চরাচরের বিষ হলাহল !চারিদিকেই ত্রাহি ত্রাহি রব ! তবে কি মহা প্রলয় আসন্ন ? কিন্তু সেই আশীবিষকে কে'ই বা ধারণ করবেন ? অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ! তখন স্বয়ং বিশ্বকর্মা সেই বিষ রাখার জন্য একটি পানপাত্র নির্মাণ করলেন ! যেটি পরবর্তী সময়ে আমাদের কাছে হয়ে উঠেছে অতি পরিচিত ঘট ! তবে মূর্তি পুজোর নেপথ্যে মৃৎশিল্পীদের একটি নিজস্ব কল্পনা বা চেতনা থাকে , যার মাধ্যমে শিল্পী কিন্তু আমাদের পৌরাণিক দেবদেবীরদের একটি চিরাচরিত' লুক' দিয়ে থাকেন ! সেক্ষেত্রে অন্যথা হয় না ! তবে শিল্পীর সেই নিজস্ব কল্পনা বা চেতনাকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই কিন্তু একটি পৃথক ঘট স্থাপন করাটা একটি শাস্ত্রসম্মত পন্হা ! পরিশেষে বলি, এই অতিমারীর সময়ে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত দুর্গা পুজোতে আড়ম্বর কমিয়ে দরিদ্রনারায়ণ সেবা করা !
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন