![]() |
ঋদেনদিক মিত্রো |
জোৎস্না-কলা
[
অগ্রিম একটা অনিবার্য কথা বলি ! এটা পড়ে কবিতাটা পড়লে পাঠ্য-সুখ পাবেন !
মানে তখন কবিতাটা পড়লে পূর্নতা পাবেন ! এখানে "কলা " মানে Arts বা শিল্প !
অনেকেই বুঝে গেছেন ! যাইহোক, জোৎস্নাকে কত রকম ভাবে ভাবা যায়, বা
জোৎস্না কত রকম ভাবে তার যোগ্যতা মেলে ধরতে পারে, সেটা নিয়েই কবিতা !
কঠিন ও আধুনিকতর চিত্রকল্পের অন্তমিলহীন কবিতা এটি ! প্রথমের দিকে একটু
মিশ্র অন্তমিলএ ঢুকে, পুরো বেরিয়ে যাওয়া হয়েছে, ইচ্ছে করে, কারণ এর
টার্নিং টা সেটাই চেয়েছিলো ! এটাও মুক্ত ঘূর্ণন ছন্দ ! ছন্দ মানে ভিতরের
তাল , --- অন্তমিল নয়, এটাও খেয়াল রাখতে হবে সবাইকে ! চিত্রকল্প মানে
নির্দিষ্ট বিশেষ-বিশেষ শব্দ দিয়ে ওই শব্দ পেরিয়ে পৃথক অনুভূতির স্তরকে টেনে
নিয়ে আসা! এর লাক্ষণিক ব্যবহার খুব কঠিন! পড়তে গিয়ে অনুভব করবেন !
কিন্তু, এর স্তর খুব নিগূঢ় সুন্দর ! অনেকে এটা জানেন ! কঠিন চিত্রকল্পের
ব্যবহার বাংলাতে আনেন জীবনানন্দ দাশ, সেই স্তর পেরিয়ে কেউ-কেউ চিত্রকল্পের
ব্যবহারকে আরো নতুনতর করেন, সেই নতুনতর চিত্রকল্পের পর্যায়ের একটি কবিতা
এটি! কিন্তু, নানা কারণে এই বিষয়গুলি অনেকের কাছে অজানা থাকতেই পারে,
তাই জানিয়ে দেওয়া হলো ! কবিতার কিছু-কিছু বিষয় এই ভাবে ব্যাখ্যা করে দিলে
পাঠকগন তৃপ্তি পাবেন, কবিতার প্রতিও আরো ভালোবাসা জন্মাবে! কবিতা পড়ানো ও
কবিতা নিয়ে অনেক রহস্য জানানোর ক্ষেত্রে শিক্ষা-ব্যবস্থা বিশেষ ধরণের
দায়িত্ব নিলে জনচেতনার স্তর উন্নততর হবে, বাড়বে কবিতার পাঠক, এবং এইসব
কবিতা-পরিণত-মেধা তখন পৃথিবীর যেকোনো বিষয়ে মাথা খাটিয়ে কাজ করতে পারবে !
আসবে বিশ্বশান্তির পথ ! কারণ, কবিতার উপলব্ধিটাই মেধার পূর্নতা আনে, এবং
মেধা পরিণত না হলে ঠিক ও ভুলের উপলব্ধিগত স্তরের গভীর পার্থক্য ও বিশ্বের
প্রতি দায়বদ্ধতার প্রবণতা আসতে পারে না ! বহুমাত্রিক চিন্তার ক্ষমতা না-এলে
মানুষ ভ্রমেই থাকবে ! তাই শান্তির সব চেষ্টা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে
পৃথিবীতে!]
--------------------------------------------------
⭐️⭐️⭐️⭐️⭐️
রাত-জুড়ে জোৎস্না উড়ে-উড়ে সকালে ঘুমালো,
উড়ে-উড়ে কী সব করেছে সারারাত,
মহাবিশ্বের শুকসারী গল্প নিয়ে
নতুন কেনা চাদরের মত খুলে দিয়ে
ছড়িয়ে দিলো নতুন জিনিসের নিজস্ব গন্ধ সপাট,
সকাল হবার আগে থেকে পরপর তার চোখ জুড়ালো !
কে বলে জোৎস্নার নিজস্ব কোনো ভাষা নেই?
নিজের মতন সে ঢুকে পড়ে যেখানে সেখানে,
মানুষের সাথে খাটে শুয়ে কিসমিসি শীতলতায়
প্লাস ছায়া পথ আর মাইনাস ছায়াপথের
নির্মাণ-কাহিনীকে সুতিপোশাকের পবিত্রতায় টেনে আনে,
আবার ঘাসের ভিতরে ঢুকে গিয়ে
তিলক পরিয়ে দিয়ে আসে ঘাস-ফড়িংকে,
রাস্তার কুকুরদের সাথেও করে পায়চারি,
একটু খানি জেল্লা লাগিয়ে,
পোড়ো বাড়িটার ভিতরও ঢুকে প'ড়ে
দু চার কলি গেয়ে নেয় ভূত-বাউল,
ভূতেরাও চলে আসে
সদাচারী স্বেত-গোলাপের আওয়াজে,
জোৎস্নার কণ্ঠে শোনে ভূত-বাউল,
তারপর নাচ চলে অনেকক্ষণ,
হঠাৎ ক'রে জোৎস্না থেকে নীরবতা চুরি ক'রে
গরম-গরম জিলিপির মত খেতে-খেতে
দৃশ্য থেকে হতে থাকে বিয়োজন,
হাটেবাজারে ঝাপ-পড়া দোকানে একটু ঘোরা ফেরা ক'রে
হঠাৎ সে দ্যাখে বাজারের মাঠে পড়ে আছে
নলিনী দাসের গুড় হাঁড়ি থেকে গত কাল
ঝরে পড়া গুড়ের দিকে,
সাথে-সাথে ছুটে গিয়ে সেখানে দাঁড়ায়,
এইবার আঙ্গুল লাগিয়ে ঐ ধুলা-ঘষা গুড় নিয়ে
শুঁকে নিয়ে জিভেতে লাগিয়ে নিয়ে
স্বাদ চেখে কী যেন ভাবতে থাকে
চার পাশে তাকিয়ে,
রাত্রি মানেই কি পৃথিবীর নিদ্রা-জগৎ?
এই প্রশ্ন তার উঁকি মারে
বাজারের পুকুরেতে রাত্রিতে ভেসে ওঠা মাছের
মুখ তুলে আকাশ টা দেখবার মত,
এমন সময় এক অলৌকিক বেশে আসা সারমেয়
জোৎস্নাকে মাটি থেকে গুড় চেটে খেতে দেখে
অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
ভারতে সদ্য পা রাখা আলেকজান্ডারের মত,
জোৎস্না তখন একটু মুখ ভেংচে দিয়ে
হাত পা নেড়ে একটু জগিং করতে শুরু করে,
কতকগুলো কীট পোকা জেগে উঠলো
জোৎস্নার জগিং এর পায়ের শব্দে,
কিন্তু তারা ঝগড়ায় গেলো না,
বরং, মহাকাশের এই অতিথিকে নিয়ে
নিজেরা যে যার মত গর্ত অতিক্রম করে
মিলিত হলো এক স্থানে গল্পের জন্যে,
একটা পেঁচা দেখছিলো
মিষ্টি দোকানের দেওয়ালের ফোকরে ব'সে,
সে দেখলো, খেলাটা তো বেশ,
যদিও একান্ত গোপনে সে এ দৃশ্য গিলে নিলো যেন
এক গ্লাস ঠান্ডা জলে আধ চা চামচ চিনি,
এর পর জোৎস্না কোথায় যাবে,
হাওয়া লাগিয়ে গায়ে ভাবছে আকাশের চেয়ে
পৃথিবী অনেক বেশী মজবুত কাহিনীর সলজ্জতা,
যেখানে পুরুষ ও নারী ব'লে দুটো প্রাণ আছে,
এরাও আবার নাকি এক একটা আলাদা আকাশ,
প্রাণ কী? জোৎস্না হারিয়ে যায় এই প্রশ্নে একা,
প্রাণ মানে কি মহাশূন্যের সৃজনী চলন?
অস্তিত্বহীনতার একটা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বিশেষ,
তাই জন্ম ও মৃত্যু ব'লে একটা খেলা হয়,
যেখানে জীবন আছে ঠিক সেখানে,
তাহলে জীবন মানে তো কোনো আলো নয়,
মৃত্যু মানেও নয় অন্ধকার,
এই সব শুধু মহা বিশ্বের এক কাহিনী বাঁধন,
তার জন্য কিছু নয়ন-পরিক্রমা,
তাই নিয়ে সারাটা পৃথিবী জুড়ে
দীর্ঘ শ্বাস শুধু পায়চারি করে,
কিন্তু কিছু কথা থেকে যায় শেষে,
প্রাণ কি কিছুই নয় তবে?
জোৎস্নার ভিতর জাগে এই অনুভূতি,
তারপর সে ঢুলতে থাকে চুপ চাপ,
ঘুমিয়ে পড়ে এইবার,
চোখ খুলতে দেখে সকাল!
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন