সূর্যগ্রহণ একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। আমাদের মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ চলমান। আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলি তাদের উপগ্রহ সমেত সূর্যকে পাক খাচ্ছে। প্লুটো ইত্যাদি বামন গ্রহগুলি, গ্রহাণুপুঞ্জ, ধূমকেতু, যা কিছুই সৌরমণ্ডলে রয়েছে, তা সূর্যের আকর্ষণে তাকে ঘিরে পরিভ্রমণ করছে। চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারদিকে। সূর্যের অত্যুজ্জ্বল আলো আছে। শুধু দৃশ্য আলো নয়, তাপরশ্মি ও এক্স রে, গামা রে, অতিবেগুনি রশ্মিও সূর্য প্রতিনিয়ত বিকিরণ করছে। সেই আলো চাঁদের কালো এবড়ো খেবড়ো তলে পড়ে যেটুকু প্রতিফলিত হয়, তাতেই আমরা চাঁদকে অমন সুন্দর দেখি। চাঁদের তল সুমসৃণ হলে তার দিকে তাকানো কঠিন হত। চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চলে আসে। তখন হয় অমাবস্যা। অমাবস্যায় আমরা চাঁদকে দেখতে পাই না। কেননা, তখন চাঁদের অপর পিঠে আলো পড়ে। চাঁদ পৃথিবী আর সূর্য সব সময় এক তলে থাকে না। যে সময় অমবস্যার দিনে সূর্য ও পৃথিবীর সমতলে চাঁদ ঢুকে পড়ে, তখন হয় সূর্যগ্রহণ। এটা একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে অজ্ঞতার কারণে অনেকেই এতে নানাবিধ ভয় পেয়ে থাকেন। প্রকৃত তথ্য জানলে এই অযৌক্তিক ভয় কাটতে সাহায্য হবে।
সূর্য আমাদের সব চেয়ে কাছের নক্ষত্র। মাত্র পনেরো কোটি কিলোমিটার দূরে থেকে পৃথিবীটাকে সে বনবন করে লাট্টুর মতো ঘোরাচ্ছে। আর চাঁদ পৃথিবীর সবচাইতে কাছের মহাজাগতিক বস্তু। চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। চাঁদকে পৃথিবী এমনভাবে বেঁধে রেখেছে যাতে পৃথিবী থেকে চাঁদের একটি দিকই দেখা যায়।
সূর্যকে পৃথিবী তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের কিছু বেশি সময়ে একপাক খাচ্ছে। চাঁদ পৃথিবীকে পাক খাচ্ছে সাতাশ দিনে। চাঁদের ভর পৃথিবীর তুলনায় খুব কম। পৃথিবীর একশো ভাগের একভাগের সামান্য বেশি। আর সূর্যের ভর পৃথিবীর তিনলক্ষ ত্রিশ হাজার গুণ। পৃথিবী থেকে চাঁদ সৌরজাগতিক মাপকাঠিতে যথেষ্ট কাছে রয়েছে। সেটা হল তিনলক্ষ চুরাশি হাজার চারশো দুই কিলোমিটার। ত্রিশখানা পৃথিবী পরপর রাখলে এই দূরত্ব তৈরি হয়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছায় আট মিনিট ঊনিশ সেকেণ্ড সময়ে। আর চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে পুরো দেড় সেকেণ্ড সময়ও লাগে না। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের তুলনায় পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব অতি সামান্য। কাছের জিনিসকে আমরা বড় দেখি। আর দূরের জিনিসকে মনে হয় ছোট। দূরত্বের এই বিরাট হেরফের আছে বলেই, সূর্যের তুলনায় চাঁদ অতি ছোট হলেও পৃথিবী থেকে তাদের চেহারা এক রকম বলে মনে হয়।
সূর্যের ভিতরে প্রতি সেকেণ্ড সময়ে ছয়শো মিলিয়ন টন হাউড্রোজেন তাপপারমাণবিক প্রক্রিয়ায় হিলিয়মে রূপান্তরিত হয়। ওই সময়কালে চার মিলিয়ন টন পদার্থ শক্তি হিসেবে বেরিয়ে আসছে। তাপ আর দৃশ্য আলোর পাশাপাশি মহাজাগতিক রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ছুটে আসে। এইসব রশ্মি বিপজ্জনক। সারাক্ষণ সূর্য এভাবে শক্তি বিকিরণ করে চলছে। পৃথিবী ও গ্রহগুলি নিজের মেরুরেখায় পাক খাচ্ছে বলে দিন ও রাত্রি হয়। দিন মানে সূর্য পৃথিবীকে আলোকরশ্মি ও তাপরশ্মির ঝরণাধারায় স্নান করায়। সূর্য পৃথিবী ও চন্দ্র এক তলে নেই। কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যেকার সমতলে চলে এলে গ্রহণ হয়। হিসাব করে বলা যায়, কবে আবার সূর্যগ্রহণ হবে।
পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে বিরাট মহাশূন্য। সূর্যের যে আলোকমণ্ডল, যে আলোকমণ্ডলে তৈরি আলো পৃথিবীতে আসে, সেই অংশের গড় উষ্ণতা প্রায় ছয় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যেকার সমতলে চাঁদ এসে পড়লে তবেই সূর্যগ্রহণ হয়। তখন সূর্যের পুরো চাকতি ঢেকে গেলে তাকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলে। খানিকটা ঢেকে গেলে তাকে বলে খণ্ডগ্রাস গ্রহণ। আর চাকতির মাঝখানে আড়াল করলে, বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়।
সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার সময় তাপরশ্মি সাথে করে আনে। আরো আনে গামা রশ্মি, এক্স রশ্মি ইত্যাদি। সূর্যের উদয় ও অস্ত যেমন স্বাভাবিক, তেমনি গ্রহণও একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সাবধানতা অবলম্বন করে সূর্যগ্রহণ দেখুন। তবে খালি চোখে নয়। সতর্কতা অবলম্বন করুন।
সূর্যগ্রহণের সময় জীবাণুর বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন