বাংলাসাহিত্যে শিক্ষক : মৃদুল শ্রীমানী

 বাংলাসাহিত্যে শিক্ষক : মৃদুল শ্রীমানী
 বাংলাসাহিত্যে শিক্ষক : মৃদুল শ্রীমানী

শিক্ষক দিবসে আমার পথের পাঁচালির হরিহর রায়ের ছেলে অপুর প্রথম পাঠশালা অভিজ্ঞতাটি মনে পড়ল। গুরুমশায় নিজের মুদি দোকানের ভিতরেই পাঠশালা বসাতেন। নুন তেল চিনি বিক্রিও চলছে , আবার পাঠশালাও চলছে। ছাত্ররা একঘেয়ে ভাবে মুখস্থ করে চলেছিল ... এই সেই জনস্থান মধ্যবর্তী  প্রস্রবণ গিরি...। শিক্ষকের পাঠ দেবার পদ্ধতি প্রকরণ দেখে বালক অপু হেসে ফেলেছিল। গুরুমশাই বলেছিলেন, হাসচো কেন খোকা, এটা কি নাট্যশালা?
বাংলার পাঠশালাগুলি যে বাস্তবে কি, তা সেই গুরুমশায় বলে গিয়েছেন।


সেই যে পাঠশালা নিয়ে বলছিলাম, পাঠশালাগুলির হালচাল নিয়ে ভাবতে গিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পালকির গান কবিতাটা মনের মধ্যে বাজছিল। "গুরুমশাই দোকান করে, পাঠশালাটি দোকান ঘরে।"
 হরিহর রায়ের ছেলে অপুর অভিজ্ঞতার সাথে কি আশ্চর্য মিল!  দোকানঘর ও পাঠশালার অভিন্নতা আমাকে আশ্চর্য করে।


পাঠশালার কথায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা মনে পড়বে না, তাও কি হয়?
বিন্দুর ছেলে উপন্যাসে বিন্দুর ননদ ভাজে গল্পগাছায় ননদ দাবী করে বসল মাস্টাররা সব ঘুষ চায়। ঘুষ না দিলে পাশ করায় না।


ওই বিন্দুর ছেলে উপন্যাসেই বিন্দু তার জায়ের ছেলে, যাকে নিজের ছেলের অধিক করে মানুষ করত, তাকে পাঠশালায় পাঠাবার জন্যে কত রকম উদ্যোগ নিয়েছে। তার পর গোটা পাঠশালাটাকেই নিজেদের চণ্ডীমণ্ডপে তুলে আনার ব্যবস্থা করেছে। বড় জা , যে বাচ্চাটার প্রকৃত মা, সে কারণ জানতে চাইলে বলেছে পোড়োরা যদি ওর বাচ্চার চোখে খুঁচিয়ে দেয় !
সত্যি নয়, যদি।


পাঠশালা নিয়ে ভাবতে গেলে শরৎচন্দ্রের পল্লী সমাজ উপন্যাসের কথাও ভুলতে পারছি কই! সেই যে রমেশ ছিল, সে পল্লীর বিধ্বস্ত পাঠশালাটিকে সারিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে শুনে রমা মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল।


"কাক পণ্ডিত" নামে একটা গল্প ছিল আমাদের পাঠ্য ছিল। গল্পের লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ।
সুশিক্ষিত জমিদার গিয়েছেন পাঠশালা সন্দর্শনে । তার সামনে হাত কচলাচ্ছেন শিক্ষক । আদ্যন্ত গ্রাম্য আচরণে ভরপুর একজন শিক্ষক ।


"খোঁড়া মুচির পাঠশালা" নামে একটা লেখা পেয়েছিলাম সুকুমার রায়ের কলমে। শিক্ষক ভদ্রলোক পেশায় ছিলেন রবিদাস। যারা মুচির কাজ করেন, তাদের রবিদাস বলা যায়। এই মুচি শিক্ষক জীবনে অনেক কৃতী ছাত্র তৈরী করেছিলেন। রাস্তায় দেখা হলেই ছাত্ররা তাঁকে প্রণাম করত। তার অন্নসংস্থানের দায়িত্ব নিতে চাইত। মুচি ভদ্রলোক রাজি হতেন না। নিজের পেশায় থেকেই তিনি শিক্ষকতা করে যেতেন। এই রকম শিক্ষকের কথা লিখেছেন বলে সুকুমার রায়ের উপর আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.