![]() |
নিঃস্ব : মৃদুল শ্রীমানী |
মেয়ের বাবা হাত জোড় করে বললেন "কিন্তু আমাদের সঙ্গতি খুব কম।"
ছেলের মা বললেন" তা হোক, মেয়েকে আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে।"
ছেলের বাবা বললেন" তাহলে ওই কথাই রইল, আমাদের তরফে আশি জন বরযাত্রী।"
প্রায় ককিয়ে উঠলেন মেয়ের বাবা। " আশি জন ! আমার কারখানায় ঠিক মতো মাইনে দিতে পারছে না ক'মাস হল।"
ছেলের মা বললেন " আমার ছেলের যে বড্ডো শখ। বন্ধু বান্ধব অনেক। বুঝলেন কি না ! আর আমাদের বড়ো ফ্যামিলি। আশি জন মানে আমাদের কাছে নস্যি!"
মেয়ের মা দরজার আড়াল থেকে বললেন " আমরা সব মিলিয়ে আশি জনের মতো ব্যবস্থা করতে পারব। তা আপনারাই যদি আশি জনের গোঁ ধরে থাকেন, তাহলে আমাদের আত্মীয় কুটুম সব বাদ দিতে হয়।"
ছেলের মা জোর দিয়ে বললেন " আমার ছেলের খুব শখ। বুঝলেন কি না, বিয়ে তো একবারই হবে!"
কোথা থেকে একেবারে ঘরোয়া পোশাকে মেয়েটি এসে বললে " শুনুন, আমারও বিয়ে একবারই হবে। আমি চাই না, আমার বিয়ে দিয়ে বাবাটা একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাক। বাবার কারখানায় খুব গোলমাল চলছে।"
তার মা তাকে শান্ত করে ঘরে নিয়ে গেলেন।
ছেলের মা মেয়ের বাবাকে শুনিয়ে তাঁর স্বামীকে বললেন " দেখেছ, আমি আগেই বলেছিলাম, এ মেয়ের লজ্জা শরম কিছুই নেই। কি পোশাক পরে শ্বশুরের সামনে দাঁড়াতে হয়, সেটাই জানে না।"
মেয়ের বাবা মুখ নিচু করে একটা দীর্ঘশ্বাস লুকোলেন।
ছেলের বাবার মনে পড়লো, তাঁর বিয়ের সময়েও বরযাত্রীর সংখ্যা নিয়ে মেয়ের দাদা কাকুতি মিনতি করেছিল। বলেছিল " আমাদের মাথার ওপর বাপ নেই। বড় দাদা পাগল। মেয়েটাকে আপনারা উদ্ধার করুন।" শেষ অবধি সম্পর্কটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ছেলের মাকে সে কথা মনে করিয়ে দিতে বাধল তাঁর। বললেন, " আপনাদের যখন এতই অসুবিধে, তখন নয় আমরা ফিরেই যাচ্ছি।"
মেয়ের বাবা চোখ বুজে আকাশের দিকে চেয়ে বললেন " হে ভগবান!"
তাঁর বন্ধ চোখের কোল থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন