বাংলাদেশ এ পঞ্চানন চর্চার হাল হকিকত : সুবীর সরকার

সুবীর সরকার
বাংলাদেশ এ পঞ্চানন চর্চার হাল হকিকত

পঞ্চানন বর্মা।রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মা।লোকস্মৃতিতে ঠাকুর পঞ্চানন।রাজবংশী জনসমাজের কাছে তিনি মিথ ও কিংবদন্তীসম।উত্তর পূর্বাঞ্চলের অগ্রণী এই সমাজ সংস্কারক একজন ব্যাপ্ত ও বহুবর্ন ব্যক্তিত্ব।দেশীয় রাজ্য কোচবিহারের খলিসমারিতে এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে তার জন্ম।উচ্চ শিক্ষিত এই ব্যক্তি পরবর্তীতে রংপুর চলে যান।রংপুর আদালতে ব্যাবহারজীবী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে।রাজবংশী সমাজের মানুষকে উপবিত ধারনের জন্য শুরু করেন আইনি ও কঠিনতম এক লড়াই।চলতে থাকে 'ক্ষত্রিয় সমিতির' পুনর্গঠনের কাজও।
তিনি লেখেন 'ডাঙধরি মাও' কবিতাটি।গড়ে তোলেন 'ক্ষত্রিয় ব্যাংক'।একটি শিক্ষিত ও সচেতন রাজবংশী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে রায়সাহেব সারাজীবন উদ্যমী থেকেছেন।তার লড়াইয়ের ফলশ্রুতিতে অবশেষে রাজবংশীরা
ফিরে পান ক্ষত্রিয়ত্বের প্রতীক উপবিত ধারণের
অধিকার।
বর্তমান বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ শহরের পাশে 'পেরোলবাড়ি'-তে করতোয়া নদীর পাড়ে প্রথম উপবিত গ্রহণের অনুষ্ঠান এক ঐতিহাসিক ঘটনা।এই পেরোলবাড়ির কাছেই টাকাহারা গ্রামে জন্মেছিলেন আর এক বরণীয় ব্যক্তিত্ব কলীন্দ্র নাথ বর্মন।যিনি প্রথম 'রাজবংশী ভাষার অভিধান' রচনা করেছিলেন।এখনো প্রতিবছর  ২৭-এ মাঘ ক্ষত্রিয় সমিতির উদ্যোগে এই কর্মসূচি  নিয়মিত পালন করা হয়।
এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর পরেও এখন পর্যন্ত তার জীবন ও কর্মকান্ড নিয়ে কাজ চলছে।রায়সাহেব যে মুক্তচিন্তা ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাকে অনুসরণ করে উন্নত এক অগ্রণী রাজবংশী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ চলছে।
রাজনৈতিক কারণে ১৯৪৭-এর পরে বাংলাদেশ বিদেশী রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায়।কিন্তু সেখানে রয়ে যায় সুবিশাল রাজবংশী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা, তাদের ধর্ম কর্ম পূজাপার্বন লোকাচার ও লোকগান আর কুশান বিসহরা সাইটল সোনা রায় রুপা রায়ের গানবাদ্য নিয়েই।
নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের রংপুর,দিনাজপুর,গাইবান্ধা,লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম,পঞ্চগড়,নীলফামারীতে রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মা কে নিয়ে চর্চা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
কয়েকবার ভাঙনের পরেও রংপুর ক্ষত্রিয় সমিতি নুতন ভাবে পঞ্চানন চর্চায় সক্রিয়।জীতেন রায়,রণজিৎ রায়,পুষ্পজিত বর্মা,গীতিময় রায়,সুনীল সরকার দের উগ্যোগে কাজ সংগঠিতভাবেই চলছে।এগিয়ে আসছেন কলেজ ও বিষবিদ্যালয়ের শিক্ষিত অংশের কেউ কেউ।
কুড়িগ্রামে নীলকমল মিশ্র, বাদশা আলম,ভুপতিভূষণ বর্মারা সক্রিয় আছেন।
পঞ্চগড় ও দেবীগঞ্জে ক্ষত্রিয় সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৭-এ মাঘ আয়োজিত হয় পঁচানোন মেলার।পঁচানোন বর্মাকে নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।দেশ বিদেশের গবেষকরা সেখানে অংশ নেন।দুলাল রায়,হরিশ রায়েরা সেখানে অন্যতম সংগঠক।
দিনাজপুর ও নীলফামারীতে পঁচানোন চর্চা এবং ক্ষত্রিয় সমিতির আন্দোলনের অক্লান্ত ব্যক্তিত্ব গোরাচাঁদ অধিকারী।
এভাবে কিছুটা মন্থর হলেও পঞ্চানন বর্মাকে নিয়ে চর্চা কিন্তু বাংলাদেশে বিরতিহীনভাবেই চলছে।
প্রবাদপ্রতিম এই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে হয়তো আগামীতে অনেক কাজ হবে বর্তমান বাংলাদেশে।আর দেরিতে হলেও আমরা সেটা জানতে পারবো।ইতিমধ্যে 'রংপুর ক্ষত্রিয় সমিতি' থেকে রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মা কে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষনাগ্রন্থ সংকলনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
জয়তু,পঞ্চানন।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.