"হাতে যদি না মারিত,
শত মারিত ঠোঁটে "
হাতে শারীরিক নির্যাতন না করতে পারলেও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয় - ঠোঁটে মানে অশ্লীল ভাষার মাধ্যমে ।গালি শব্দের ভাষা দিয়েই পুরুষ গড়ে তোলে নারীর উপরে ভাষিক অবরোধ ।যেমন -এটম বোম ,গাড়ির চেসিস,ডবল ডেকার ,গোলাপ জাম ,কালনাগিনী,কচিমাল ইত্যাদি। সে বিষয়গুলি নোংরামীতে ভরপুর ,নারীর জন্য এই বিষয়গুলি অপমানসূচক ।বাংলা ভাষায় এসব শব্দের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু বিদেশী শব্দ। বাংলা ভাষায় নারী কর্তিক পুরুষকে বিরক্ত করবার কোন শব্দ নেই । কিন্তু পুরুষ যে নারীকে বিরক্ত করে তাঁর জন্য সমাজে তৈরি হয়েছে অসংখ্য শব্দ ।এই শব্দ গুলো দিয়েই পুরুষ সৃষ্টি করে নারীর উপর ভাষাগত অবরোধ বা ভাষিক অবরোধ ।আমাদের সমাজে যে সব পুরুষ স্ত্রীর কথামত চলে ,তাদের বলা হয় 'স্ত্রৈণ'। এই শব্দটি প্রয়োগ হয় পুরুষের জন্য নেতিবাচক বা অসম্মানজনক হিসাবে। বিষয়টি এরকম যেন নারীর কথা পুরুষের শুনতেই মানা বা তা করলে প্রায়চিত্ত করতে হতে পারে ॥
"I believe in strong women .I believe in the woman who doesn't need to hide behind her husband's back .I believe if you have problems ,as a woman you deal with them ,you don't play victim ,you don't make yourself look pitiful ,you don't point fingures ,you stand and you deal .You face the world with a head held high and you carry the universe in your heart. (আমি সেই নারীকে বিশ্বাস করি যে হবে দৃঢ় ,যিনি নিজের জন্য দাঁড়াতে সক্ষম।আমি সেই নারীকে বিশ্বাস করি যার স্বামীর পিছনে লুকোবার প্রয়োজন নেই ।আমি বিশ্বাস করি নিজের সমস্যার মোকাবিলা সে নিজে একাধারে করুন ,আপনার প্রতি তাঁরা যে অন্যায় ব্যবহার করেন তাঁর বিরুদ্ধে আপনি থাকেন কিন্তু আপনি তা কিছুতেই স্বীকার করেন না ,আপনি আঙ্গুলের দিকে তাকাতে ভয় করেন না ,আপনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন্ নিজ পায়ে এবং চুক্তি করতে পারেন্ নিজ সম্মান রক্ষার্থে ।আপনি উচ্চ একটি শীর নিয়ে নিজেকে প্রকাশিত করেন বিশ্বের মুখোমুখি আর আপনার সেই হৃদয় এই মহাবিশ্বের ভার বহন করে নিয়ে চলবেন )|
সারাজীবন নারী গোলামির বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল ।সামাজিক জীব হিসাবে তাঁদের কোন স্বীকৃতি ছিল না ।দাসী ও স্ত্রী দের মধ্যে সামাজিকতার কোন ভিন্নতা ছিল না ।বিশ্বের বহু সভ্য জাতি নারী জাতিকে কোন না কোনভাবে উত্তরাধিকারিনি হওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে এবং বর্তমানে বঞ্চিত করবার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে ।এসবের কথা মাথায় রেখেই বর্তমান বিশ্বে আজ সর্বাধিক আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল নারীর ক্ষমতায়ন ।বহুল আলোচিত এই প্রত্যয়টিকে এখন সামাজিক উন্নয়নের সূচক হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে ।কিন্তু এতদ্সত্বেও দেশজুড়ে নারী নির্যাতন ,নারী হত্যা ,ধর্ষণ ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে ।নারীর পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে ক্রমশঃ অবনতিই হচ্ছে ।সেহেতু এই প্রসঙ্গটির গুরুত্ব দিন প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
নারীর ভাষাগত নিপীড়নের প্রথম জায়গাটি হল তাঁর পরিবার ,তাছাড়া কর্মক্ষেত্রতো আছেই ।আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় এখনো ভাষাগত কিছু পার্থক্য খুঁজে পাই আমরা ।গ্রামাঞ্চলে এখনো নারীরা তাঁদের স্বামীদেরকে 'আপনি ' বলে সম্বোধন করে থাকেন ।'তুমি' বলে সম্বোধন করলে 'বেয়াদপ' ,'আদপকায়দাহীন' নারী বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে ।গ্রামাঞ্চলে এখনো বয়স্ক মহিলারা তাঁদের স্বামীর নাম মুখে নেয়না ।স্বামীর নাম মুখে নিলে পাপ হয় ,স্ত্রী এখনো স্বামীর সমকক্ষ নয় ।তাই নাম ধরে ডাকতে পারেনা ।এটা মহিলাদের জন্য আস্পর্ধা অথচ পুরুষরা নাম ধরে ডাকার পাশাপাশি খানকি ,মাগী ,ছিনাল এই শব্দগুলো বলতে সামাজিক কোন বিধি নিষেধের মধ্যে পড়তে হয়না ।
একজন নারী বিবাহের পরে স্বামীর ঘরে এসে তার শ্বাশুড়ীর দ্বারা নির্যাতিত হন ।সেই জীবনের রেশ থেকে যায় সারাজীবনের একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ।এই নারীর পুত্রবধূ যখন নববধূ হয়ে ঘরে আসেন তখন তিঁনি শ্বাশুড়ীর ভূমিকায় দ্বায়িত্ব পালন করেন ।শুরু হয় ভাষাগত নানা উত্পীড়ন ।যৌতুকের টাকা চাওয়ার জন্য নববধূকে মারধর ও চলত ।নারীর মনসাত্তিক এই বিষয়টি বংশপরম্পরায় চলতে থাকে ।পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর এই ভূমিকাকে সাধুবাদ জানায় কারণ তাদের কাজগুলিরই নারী বাস্তবায়ন করছে ।আমাদের সমাজের চিত্র এটি ।আমাদের সমাজে মেয়েরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করলে সবাই চেয়ে চেয়ে দেখে কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে একটু ভালো কথা বলেনা উল্টে তার পরিহাস করেন ,জ্বালাময়ী কথা বলে কান ভারি করে তোলে দুঃখী মেয়েটির জীবন ।তিলে তিলে ক্ষয়ে যায় জীবনি শক্তি ,সেইজন্যই কখনো কখনো সে বেঁচে নিতে বাধ্য হয় আত্মহননের পথ আর যারা জীবিত থাকেন তাঁরা প্রতিদিনই আত্মহত্যা করেন নিজের ইচ্ছা ,ভালবাসা আর সমর্পণের বিনিময়ে ,এরকম নোংরা ভাবে বেঁচে থেকে ও তাদের সম্মান নিয়ে বাঁচতে বলি আমরা ,অন্যের সম্মান রক্ষার জন্য কি নিজের সব কিছুর বিসর্জন দিয়ে দিতে হয় ! আমরা একজনের ছাইয়ের উপরে নিজেদের সুখের প্রাসাদ নির্মাণ করেই মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকি ,বিরাট কাজই না আমরা করছি শিক্ষার মুখোশের পিছনে ।
এ সময়ের নারীরা ঘোমটা সরিয়ে সামনে এগিয়ে আসলেও সংসারের সংকীর্ণ পরিসরে নারী কলটেপা পুতুলের মত নিয়মমাফিক জীবন যাপনে বাধ্য থাকে ।পরিবারিক ,সামাজিক বাঁধা ছাড়াও নারীর পেশিশক্তির অপেক্ষাকৃত কম ভূমিকার সম্যক উপলব্ধি ও সচেতনতা এবং ন্যায়ের শাসনের সুদূর পরাহত অবস্থা সমাজের দানবদের প্ররোচিত করে নারীর উপর জুলুম চালিয়ে যেতে ,আর নারীকে প্রায়শই তা উদ্বুদ্ধ করে মুখ বুজে সয়ে যাবার জন্য ।নারী : এক কলটেপা পুতুল |এ প্রসঙ্গে কিছু কথা মনে পড়ে যায় আমার , "She made broken look beautiful and strong look invincible.She walked with the universe on her shoulders and made it look like a pair of wings "- "তাঁর কর্তিক গঠিত ভাঙা চেহারা হল সুন্দর আর কঠিন অর্থাত দৃঢ় চেহারা হল অজৈব ।তিঁনি পৃথিবীর সমস্ত বোঝা নিজ কাঁধে তুলে নেন আর সেই বেদনাকে পাখনা বানিয়ে চলেন স্বপ্নউড়ানের উদ্দেশ্যে "-
আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত ,অবিরতভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা সংগঠিত হয়ে আসছে যা অধিকাংশ সময় সমাজের উপরের স্তরে ভেসে উঠতে পারেনা ।যে নারীটি সহিংসতার শিকার হয় সে যেমন পরিবারে ও সমাজে অপাংক্তেয় হয়ে পরে তেমনি নারীটির পরিবার ও সমাজে মুখ দেখাবার জায়গা পায়না ।চিরাচরিত সমাজব্যবস্থা মেয়েটিকে তার পরিবারসহ একঘরে করে রাখে ।আর তখনই চলে অকথ্য ভাষায় ভাষিক ও মানসিক নিপীড়ন ।বিপদে দূরে চলে যাবার এই সংস্কৃতি সত্যিই অমানবিক ,অপ্রত্যাশিত ।ভাষাগত নিপীড়ন মরণব্যাধী ক্যান্সারের মতই শেষ করে দেয় নারীর কর্ম ,সৃজনশীলতা -ব্যক্তিত্ব ,মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকবার অধিকার ।ভাষা হয়ে উঠুক সংস্কৃতিক বিনিময়ের ,সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনের বাহন ,নিপীড়নের বাহন নয় |
তাই আমাদের প্রতিবাদ ও হচ্ছে এক নারীবাদের ভাষায় ,পুরুষের প্রেসক্রিপশনে নয় ।তাতে যদি নারীর সঙ্গে পুরুষের ,নারীর সঙ্গে নারীর বিরোধ হয় হোক ।সে বিষয়ে যদি নারীর সঙ্গে পুরুষের ,নারীর সঙ্গে নারীর নতুন বোঝাপড়া তৈরি করে ,তবেই তা সার্থক ।সেই বিরোধ আর সমঝোতা থেকে উঠে আসবে এক নতুন মহাকাশ ,'নারীর নিজস্ব ভাষা'।তৈরি হবে নতুন পাঠক যারা নিজেদের যোগ্য করে তুলবে নারীর জন্য ,নতুন ভাষার জন্য, যা হবে সম্মানের ভাষা ॥
'আমি বলতে চাইছিনা যে নারী আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে উঠুক অশিষ্ট ভাষা বা ওই পথেই মেয়েদের ক্রমমুক্তি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি ।যেটা বলতে চাইছি সেটা হল ,"ছিঃ মা ,খারাপ কথা বলতে নেই ,তুমি না মেয়েমানুষ ,"- এই সংলাপ যেন আর রচিত না হয় ,না পর্দায় না জীবনে ।(মেয়েমানুষের ভাষা - কীন্কীনী বন্দোপাধ্যায় )।
"women 's liberty ,women's independence " are words on everybody's lips these days but they stay on the lips and don't go any further .Do you know why ? I've found out that liberty can be obtained neither by the arguments nor by pleading justice and morality .You can easily understand that its comes of its own accord - through one's own fulfillment , by the enlargement of one's own soul ." - (Sarat Chandra Chattopadhyay ).

পুরুষ তার আপন জগতে বাড়ে বাড়ে নতুন আগন্তুক ।আজ পর্যন্ত কতবার সে গড়ে তুলেছে নিজ বিধিবিধান ।বিধাতা তাকে নিজ জীবনের পথ বাঁধিয়ে দেননি৷ কত দেশে কত কালে তাঁদের আপন পথ বানিয়ে নিতে হল ।কিন্তু সেখানে নব নব সভ্যতার উল্টো - পাল্টা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দিয়ে নারীর জীবনের মূল ধারা চলেছে এক প্রশস্ত পথে ।প্রকৃতি তাঁকে জে হৃদয়সম্পদ দিয়েছেন নিত্যকৌতুহলপ্রবন্ বুদ্ধির হাতে ,তাঁকে নতুন নতুন অধ্যাবসায়ে পরখ করতে দেওয়া হয়নি|বাঙ্গালী মেয়ে হিসাবে আরো কিছু কিছু নেগেটিভ কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি ।যেমন মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম ,মেয়েদের কথা বড় দাও ,মেয়েলি পরিকল্পনা বড় দাও ,মেয়েলি কান্না থামাও ,মেয়েলি স্বভাব বদলাও ,মেয়েটি কালো আরেকটি দেখ ,মেয়েটি মাল বা একটি বস্তু ইত্যাদি ইত্যাদি ।আসলে মেয়েদের গায়ের বর্ণই কি সব !আমার কাছে ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাসই হল আসল বর্ণ ।যা নারীর মর্যাদা বাড়ায় ।এই শক্তি যৌতুক কেও হার মানায় ।এই শক্তিই নারী নির্যাতন কমায় ।মাথা উঁচু করেও বাঁচতে শেখায় ।নিন্দুকের মাথা নত করতে শেখায় ।কিন্তু এই সমাজে অনেক নারী আজও অবহেলিত ,অবাঞ্ছিত জীবন যাপন করে চলেছেন ।শুধুমাত্র ভক্তি আর দায়বদ্ধতার কারণে ।বিনিময়ে সে কিছুই পায়না ।তারপরেও সে মাটি আঁকড়ে পরে থাকে ।কারণ তার যাওয়ার তো কোন জায়গা নেই ।আর সেই সুযোগে নারী হয় আরো নির্যাতিত ।এখন মনে হয় নারীর প্রতি এসব নেগেটিভ ধারণা আসলে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মানুষেরা বেশি করেন ,কারণ সে যা দেখে এসেছে তার পিতা মাতার কাছ থেকে তাই তার জীবনে ও প্রয়োগ করেন ।এঁরা নারী জাতিকে সম্মান করতে শেখেনি ,শিখেছে শুধু প্রভুত্ব করতে হয় ।তাঁরা ভুলে যায় জে তাঁরা কোন মায়ের গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেছিল ।একটি শারমেয়কে শেখানো হয় কিভাবে প্রভুভক্ত হতে হয় কিন্তু তার বিনিময়ে তাকে তাকে তার মজুরি ,আদর ,যত্ন ,ভালবাসা ও খাদ্য দেওয়া হয় ,কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক নারী এই শারমেয় এঁর থেকে ও নিকৃষ্ট জীবন যাপন করেন ।এটাই দুর্ভাগ্য ।আবার কাউকে সব দিয়ে ও নিঃসঙ্গ করে রাখা ও হয় ।ভেবে দেখুন ।
আপনি যদি দেশের একজন শিক্ষিত নাগরিক হিসাবে নিজেকে মার্জিত করেন তবে আপনি সমাজকে এবং নিজ পরিবারকে কি শিক্ষা দিচ্ছেন সেটা একটু ভেবে দেখুন ।আপনার দেওয়া শিক্ষার উপরেই নির্ভর করবে আপনার শিক্ষার্থী কি ধরনের আচরণ করবে অন্যের প্রতি ।তাকে মানুষ বানাবেন নাকি প্রভু বানাবেন তার দায়িত্ব আপনারই ।
"Lock up your libraries if you like ; but there is no gate ,no lock ,no bolt that you can set upon the freedom of my mind .You educate a man ; You educate only a man .You educate a woman ; You educate a generation .Above all be the heroine of your life women's ,not the victim ."-
"একটি গাছ ততদিন সতেজ থাকে দেখবেন যতদিন তাতে জল দেওয়া হয় , আমরা প্রয়োজনে ভুলে যাই সেই গাছটার কথা ,তার ছায়ায় বসে আমরা একদিন যে সস্তি অনুভব করেছি তার কথা ,জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতে ভুলে যাই এরকম অনেক কথাই ,কিন্তু জল এবং সার না পাবার কারণে কিন্তু গাছটা ক্রমে শুকিয়ে যায় ,সে তোমার জীবনের সাথে কিন্তু চলবে না ! গাছটাকে যখন একদিন মৃতপ্রায় দেখি তখন মনে পরে ইসস্ কি ভুল করেছিলাম আমি ! নিজের ভুলে সব কিছু গুলিয়ে ফেলে গাছটারই যত্ন নেওয়া হল না আমার !অত সাধের একটা জিনিস নষ্ট হয়ে গেল ।সম্পর্ক ও ঠিক সেরকম ,সেটার যত্ন নিতে হয় ,হাজার অশান্তির মধ্যেও ,তা না হলে তোমার সময়ের ভিত্তিতে সে চলবে না কোন সময়েই আর সময় চলে সময়ের মতন ,নিজের গতিপথে নিজের মতন করে নিয়ন্ত্রণ করে সব কিছুকে যা কেউ রোধ করতে পারবে না ।কোন মূল্যবান সম্পদ কে তাই যাতে সময় আমাদের থেকে কেড়ে নিতে না পারে বা গ্রাস করতে না পারে ,সেহেতু আমাদের নিজেদেরই সেটার যত্ন নিতে হয় ,অন্য কেউ সেটা করে দেবে না ॥"
" সময়ের কথাটা এই কারণেই বললাম যে সময়ের সাথে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত থাকে ।সময়কে তুচ্ছ জ্ঞান করলে সময় যেরকম আমাদের একটা সময় গিয়ে তুচ্ছ জ্ঞান করে আমাদের সম্পর্ক গুলির ক্ষেত্রে ও ওই একই প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান থাকে ।আমরা আমাদের জীবনে কোন অগ্রিম মূল্যের বিষয় কে গুরুত্ব দিয়ে থাকি সর্বদাই ।কিন্তু কখন ভেবে দেখেছেন কি ? 'একটা হীরের আংটি কেনবার পরে আপনার কাছে থাকা প্রাক্তণ সোনার আংটির মূল্য হীন হয়ে যাওয়া উচিত্ ! সেও তো একদিন আপনার শোভা বর্ধক হিসাবে কাজ করেছে । আজ নয় আপনি অন্য দামী কিছু পেয়েছেন কিন্তু একদিন সেটা ও তো আপনার কাছে দামীই ছিল ॥"
নারী চিরদিনই পুরুষের ইচ্ছেতে বন্দী ।এক সময়ে হাটে বাজারে দাসী হিসাবে মেয়েরা বিক্রি হত ।রূপের ভিত্তিতে তার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ।সময়ের পরিবর্তন ঘটলেও এই নিম্নগামী মানসিকতার কোন পরিবর্তন ঘটেনি ।এখনো নারীকে ভোগের বস্তু হিসাবেই মনে করা হয়ে থাকে ।তাই কেবলমাত্র রূপটারই প্রাসঙ্গিকতা বারবার উঠে আসে ও তার স্বভাবিক জীবনযাত্রার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ।কেন এত বৈষম্য ?একটি মানুষ ভালো না মন্দ বিচার করবার আগে সে কালো না ফর্সা সেটা বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ।বিয়ের পাত্রী কালো হলেই মহা সমস্যা কিন্তু ফর্সা ,বোকা-সোকা পুতুল মেয়ে হলে সোনায় সোহাগা ।মেয়েদের ঘরের পুতুল করে রাখতে চায় কিনা ছেলেরা !
কালো রঙ নিয়ে কেন এত হীনমন্যতা ?গায়ের রঙ নিয়ে চিন্তা না করে শিক্ষায় ,ব্যক্তিত্বে ,মানসিকতায় অনন্যা হয়ে উঠতে পরিবারগুলো কোনভাবেই উত্সাহ দেয়না কোনকালেই বরং কালো মেয়েকে পুরুষের মনের মতন করে গড়ে তুলতেই সব আগ্রহী হয়ে ওঠে ।মেয়েরা কি শুধু পুরুষের মনের মতন করে হওয়ার জন্য জন্মেছে ?তাঁর নিজের কি নিজের মনের মতন হবার কোন যোগ্যতা নেই ?কেন আমরা সব সময় পুরুষের ভালো লাগারই প্রাধান্য দিই ?
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে চিন্তাশীল মানুষকে আরো অনেক বেশি সজাগ হতে হবে ।সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে ।নারী সমাজের জীবনের বাস্তব দিকগুলি গুরুত্ত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং তাঁর অবস্থান কোথায় ! বা কোথায় থাকা উচিত্ তা উপলব্ধি করতে পারাটা অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ |নারীদের নিরাপত্তা কোথাও নেই ।কারণ নারীরা একা একা চলতে সাহস পায়না ।সন্ধ্যার পরে একটা মেয়েকে বাইরে বেরতে হলে ঘরে ফেরা পর্যন্ত তাকে সন্ত্রস্ত থাকতে হয় ।যে সহিংস আচরণ করছে তাকে দোষী না মনে করে ,যার উপরে সহিংসতা করা হল তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয় ।সহিংসতার সমন্ধে সমাজে সচেতনতার এই অভাব পূরণে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে ।নারীর প্রতি সহিংসতা ,নির্যাতন ,নিপীড়ন ,বঞ্চনা ,বৈষম্য এগুলো মোটেই কাম্য নয় ।আর এই অযৌক্তিক আচরণ দূর হোক এটাই প্রত্যাশা আমাদের ।নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভাবে দেখা দরকার ,এতে বাড়াবাড়ি না করে যৌক্তিক পন্থায় সবাই এগিয়ে আসুক এটাই আহ্বান ।
শারীরিক গঠন একটি মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না ।কিন্তু শারীরিক সৌন্দর্যকে একটি যোগ্যতা বলেই ধরা হয় মেয়েদের ক্ষেত্রে ।একটি মেয়ে কালো না ফর্সা ,বেঁটে না লম্বা ,মাথায় চুল আছে নাকি নেই ,নাক খাড়া বা নাকি বোচা ,এগুলো তার যোগ্যতার (?) মধ্যে পড়ে |মেয়ের গায়ের রং কালো হলে পরিবারের ঘুম উড়ে যায় তাকে যে কোন উপায়ে ফর্সা বানানোর চেষ্টায় ।মেয়েটি যতই উচ্চশিক্ষিত হোক না কেন সেটিকে তার যোগ্যতা হিসাবে দেখতে চাইবেনা কেউ ।যেন শরীরটিই নারীর সম্বল আর সেই শরীর পুরুষের মনের মতন না হলেই বিপদ ! - "সৌন্দর্য্য থাকে মনে ,ব্যক্তিত্বে ,মানসিকতায় ,বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ঠুনকো ...."।কথাগুলো আমরা মুখে বললে ও বিশ্বাস করি কি ?
এখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের কদর সর্বত্রই ।ছেলেদের ক্ষেত্রে tall ,dark ,handsome ,হল প্রকৃত সুন্দর ।আমাদের দেশে কোন ছেলে যত বেশি ফর্সা হয় তত বেশি ঠাট্টার পাত্র হয় ।ছেলেদের বেলায় কালো রঙের বেশ কদর ।কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে ?যত বেশি গাঢ় হবে গায়ের রং ,তত বেশি উপেক্ষার পাত্রী হবে সে ।ফর্সা হলে তার কদর বিস্তৃত হবে চারিদিকে ।বিয়ের ক্ষেত্রে ,চাকরির বাজারে ,সব মেয়েদের জয়- জয়কার।আর টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন গুলোতে তো তাঁরা আরো দশ ধাপ এগিয়ে থাকবে ,কালো রঙকে সাদা বানানোর যে কত রকম প্রচেষ্টা !
কই পুরুষের সৌন্দর্য্য নিয়ে আপেক্ষিক ভাবে সেরকম কোন চর্চা দেখতে পাওয়া যায়না ,তবে হ্যাঁ আজকালের সুন্দর পুরুষের কদর বেশি কিন্তু তাঁরা কই কালো মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে যেতে চায় না বা সিনেমা তে কালো মেয়ের বিপরীতে হিরোর চরিত্রে অভিনয় করতে চায় না ?কিন্তু ফর্সা নায়িকা বা বৌমা বাধ্যতামূলক ,কি বলুন ?খুব কম পুরুষকেই আজও ভাবতে হয় নারীর মতন করে ঘষে মেজে শরীরকে তৈরি করবার কথা ! একটি পুরুষ যতই কুত্সিত হোক না কেন ,একটি সুন্দরী বৌ বা গার্লফ্রেন্ডের আকাঙ্খা সে করেই থাকে আর একটা কালো মেয়ের উচিত্ বাড়ির মধ্যে দোর দিয়ে বসে থাকা ,কি বলুন !কেন ?তার বুঝি সুন্দরের আকাঙ্খা করতে নেই ,সে বুঝি সমাজের বাইরের কোন প্রাণী ,অর্বাচীন ,আশাব্যাঞ্জক হতে গেলে তাকে সরকারি পারমিশন নিয়ে আসতে হবে বুঝি ?অন্যদিকে আলকাতরার মতন কালো ছেলে ও ফর্সা বৌ খোঁজে ,এই তো আমাদের সমাজব্যবস্থা !চকচকে টাক থাকলে ও দীর্ঘ চুলের অধিকারিণী মেয়েকে বৌ করে আনতে কোন অসুবিধা হয় না !
প্রতিটি মেয়েই তার ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কে কে ভুলে যেতে চায় ,কিন্তু পারে না ।কারণ যখন কেউ কিছুকে ভালবেসে ফেলে তখন তার নিজের উপর থেকে সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ।আর সম্পর্কে ভেঙ্গে যাওয়ার পরে ও সেটা প্রকৃতিক ভাবে চলতে থাকে ।তাই ইচ্ছা সত্বেও মেয়েরা সেখান থেকে ফিরে আসতে পারেন না ।তাই মেয়েদের থেকে যাওয়াটাকে তাঁদের দুর্বলতা বা অসহায়তাভাবে না দেখে আমাদের উচিত্ সেটাকে তাঁর মহতোতার ,বিবেকবোধ ,শিক্ষা ,সাহচর্য ও করুণার পরিচয় হিসাবে দেখা ।এত কিছু সামলে ও সে সব ঝড়ের সাথে লড়াই করে ও খুঁটির মত জমি আগলে পোড়ে থাকে ,কিসের ভিত্তিতে ,একটু ভালবাসা আর সম্মানের আশা ব্যতীত আর কিছুর জন্য নয় !এই যে অর্থাহোংকারী পুরুষ সমাজ -পারবেন এই স্যাক্রিফাইস এঁর মূল্য দিতে ?কোন টাকার অংক নির্ধারণ করবেন একে কনসেশন দেওয়ার জন্য ?পারবেন না ।কারণ মহত্তাকে কোনদিন কেনা যায়না ,অর্থ কোনদিন ভালবাসাকে কিনতে পারে না ,সাহচর্য কে কিনতে পারে না ,করুণাকে কিনতে পারে না ,শিক্ষাকে কিনতে পারে না ,চোখের জলের দাম নির্ধারণ করতে পারে না ,বিবেকবোধের জাগরণ ঘটাতে পারে না ,পারে শুধু বিরাট অট্টালিকার মধ্যে সব সামগ্রী দিয়ে একজনকে মাটির পুতুল বানিয়ে রাখতে ,যে কিনা উঠতে বললে উঠবে আর বসতে বললে বসবে ,তার বিনিময়ে সেই মেয়েটি কি পায় !চোখের জল মুছুন !স্বান্তনা দিয়ে আর কতদিন এরকম ভাবে বাঁচবেন ?কোনঠাসা হতে হতে তো দেওয়ালে পীঠ ঠেকে গেল !তবুও কেন সহ্য করে চলেছেন ?বলুন !
নারীরাই সম্মান ,নারীকে সম্মান করুন ,একজন নারীর চোখে সম্মানিত হতে পারলে গোটা প্রকৃতির চোখেই সম্মানিত হওয়া যায় ,একজন নারীর দীর্ঘশ্বাস গোটা প্রকৃতিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে বাধ্য করে ।আমার এই বিস্তারিত সংরক্ষণ নারী সমাজের ভিত্তিকে আন্দোলিত করবার জন্য নয় কিম্বা পুরুষ সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করবার অভিপ্রায়ে ও নয় ,এটা আমার আর্তনাদ শুধুমাত্র তাদের উদ্দেশ্যে যারা শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষার অন্ধকারে বেঁচে থাকতে ভালবাসেন বা বাঁচিয়ে রাখতে ভালবাসেন ।সম্মান সকলেরই কাম্য ,নারী পুরুষ ভেদে নয় ,আশা করি আমার এই আলোচনা বহু মানুষের ঘুমিয়ে থাকা অভিব্যক্তিকে পুনরায় স্পন্দিত করতে সক্ষম হবে ।নারী পরিবার তথা সমাজের ভিত্তি ।ভিত্তি হারিয়ে গেলে পরিবার এবং সমাজ উভয়েই ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে ,স্বার্থকতা সেখানেই যেখানে মানুষের আশীর্বাদ কুড়ানো যায় ,অভিশাপত আমরা অনেকই কুড়ালাম ?
শেষ করতে চাই কিছু কথা দিয়ে , "Where women are respected ,there are gods make their home ,where they are not
respected ,all human action remain unproductive ,there are two ways of spreading light ....... to be the candle or the mirror that reflects it ".
নারীর ক্ষমতায়ন যার উপরে নির্ভর করে 1.Ability to participate in decision making 2.Control over economic resources and 3.Change and equal opportunity .
Rowland ক্ষমতায়ন কে ত্রিমাত্রিক বলে মনে করেন ,তাঁর মতে এটা হলো ব্যক্তিগত ,সম্পর্কগত ,এবং সমষ্টিগত ,ব্যক্তিগত দিক হচ্ছে , "A sense of self and individual confidence and capability and undoing the defects of internalized opposition .সমষ্টিগত দিক হচ্ছে , "where individual work together ,to achieve a more extensive impact than each could have done alone ,groups acting at village or neighbourhood level or be more institutionalized such formal procedures of united Nations আর সম্পর্কগত দিক হচ্ছে ,"Developing the ability to negotiate and influence the nature of a relatiinship and decisions made within it "-
মেয়েরা তো আজও পরিত্যক্তা ! যে হাত দিয়ে তুমি কাউকে ফিরিয়ে দিলে আজ ,কিন্তু মনে রাখতে হবে সে হাত যেন কোনদিন কারুর কাছে পাততে না হয় !ভালবাসার আনন্দ ,কাউকে সম্মান দেবার আনন্দ হাসির মাধম্যে বাতাসে মিশে যায় ,ইচ্ছা করলেই বারংবার ফিরে পাওয়া যায় না ।আর সেগুলির দিকে ফিরে দেখার বেদনা বুকের মধ্যে বরফের মতন জমাট বেঁধে থাকে ,হঠাত করে মনে পড়লেই তা চোখ দিয়ে গলে ঝরে পড়ে ।মেয়েদের মধ্যে এই ভালবাসা আর সম্মান শুধু স্মৃতির মধ্যেই কেন বেঁচে থাকে বলুনতো !তা সারাজীবন ভোর চলে না কেন ?তাদের সাথে ,তাদের পাশে ,হাত ধরে ,সঙ্গে করে ?সব মেয়েদের জীবন দুঃখের মধ্যে দিয়েই শুরু আর শেষ হয়ে যায় কেন ?প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত শুধু কর্তব্যের মধ্যেই কেটে যায় কেন ?যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই কেন বাঁচতে হয় ?কিছু করবার বিনিময়েই শুধুমাত্র কেন প্রাপ্তি জোটে ?হাসানোর বিনিময়ে কান্না জোটে কেন ?কষ্ট -দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার বিনিময়ে সেগুলিই তাদের জীবনকে আরো বেশি করে গ্রাস করে কেন ?যখন একটি পুরুষের জীবন শেষ হয় তখন আমরা লিখি সমাপ্তি আর যখন কোন নারীর জীবন যুদ্ধের ইতি টানি তখন কি সহজেই সেটার নামকরণ করি 'অসমাপ্তি' বলে ।কেন ?
আপনার জীবনের সর্বাত্মক সমাপ্তির অংশীদার যিনি তাঁর জীবনের সব কিছু আপনার কাছে থেকে ও ,আপনার পাশে থেকে ও ,আপনার সব দায় -দায়িত্ত্ব ,বোঝা নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে ও কিভাবে তার শেষটা এরকমই অসমাপ্ত থেকে যায় বলতে পারেন্ ?তাহলে আমি আছি ,আমি করি বলে বলে যে সবাই চিত্কার করেন ,মেয়েদের পাশে থাকবার প্রতিশ্রুতি দেন ,তাঁরা থাকা সত্বেও অধিকাংশ মেয়ের জীবনেও এই অসমাপ্ততা কেন !বলতে পারেন্ ?নিজেকে এভাবে প্রশ্ন করেছেন কোনদিন ?করে না থাকলে এবার করুন ?নাহলে আপনার পরিবারে থাকা কোন নারীরও হয়ত এরকমভাবেই দহন যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে প্রতিদিনই ,প্রতিনিয়ত ,তাঁদের অহংকারের কারণ হয়ে উঠুন ,অভিমান বা ক্ষোভের নয় !কারণ নীরবে কাঁদার চেয়ে বড় কষ্ট বোধহয় পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নেই ।- এই উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ কবিতার কিছু লাইন মনে পড়ে গেল -
"কিছু মানুষের কষ্ট চোখ দিয়ে ঝরে ,কিছু ,কষ্টকে মেজাজ দিয়ে প্রকাশ করে ,কিছু হৃদয়ের মাঝে লুকিয়ে পড়ে ,তবে যে কেবল মুখ বুঝে সহ্য করে ,তারাই জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে "-
প্রতিটা মেয়েই তাঁর ভালবাসার মানুষটিকে অন্যের কাছে বড় করে উপস্থাপন করে ,এটা তাঁদের স্বভাব ।সেই মানুষটির কোন খারাপ দিক চোখে পড়লেও সেটা সহজে বিশ্বাস করতে সে চায় না ,এটা তাঁর আস্থা আর কিছু মেয়ে আছে যাদের বারবার দূরে ঠেলে দিলেও তাঁরা ছেড়ে যেতে চায় না ,এটাই হচ্ছে ভালবাসা ,তাই এটিকে দায়িত্ব বা কর্তব্যকর্ম ভেবে এই মানদণ্ডে মাপতে যাবেন না ,এটাই আপনাদের কাছে অনুরোধ ।মেয়েদের জীবন দুর্বিষহ করবার অধিকার কারোর নেই এমনকি স্বয়ং মেয়েদেরও নয় ॥
তাই মেয়েদের উদ্দেশ্যে আমি কিছু কথা বলতে চাই ।অনুকরণ নয় ,অনুসরণ নয় ,নিজেকে খুঁজুন ,নিজেকে জানুন ,নিজের পথে চলুন ।কারণ অধিকাংশ রূপসীরই হাসির শোভা মাংসপেশীর কৃতিত্ব ,হৃদয়ের কৃতিত্ব নয় ।ছেলেটি তার বিছানা গুছিয়ে না রাখলে মা খুশি হয় ,দেখে যে একটি পুরুষের জন্ম হয়েছে ,কিন্তু মেয়েটি বিছানা না গোছালে একটি নারীর মৃত্যু দেখে মা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ।গত দুশো বছরে গবাদী পশুর অবস্থার যতটা পরিবর্তন হয়েছে , নারীর অবস্থার ততোটা উন্নতি ঘটেনি ।সেইজন্য পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম 'মা'।মেয়ের সন্ধান মেয়েদের কাছেই সবচেয়ে কম ।তারা জানেও না যে ,এইজন্য মেয়েদের ভাগ্যে ঘরে ঘরে অপমানিত হওয়া এত সহজ ।তারা আপনার আলো আপনি নিভিয়ে বসে আছে ।তারপরে কেবলই মরছে ভয়ে ......ভাবনায় ,.......অযোগ্য লোকের হাতে .........খাচ্ছে মার .......আর মনে করছে সেটাই নীরবে সহ্য করাতেই স্ত্রী জন্মের সর্বোচ্চ চরিতার্থ |
জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিশ্ব অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করলেও এখনো কিছু কিছু নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা মানব সমাজকে পীড়া দেয়। এর একটি হচ্ছে নারী নির্যাতন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপরও সাধারণভাবে তারা শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের দিক দিয়ে এখনো পুরুষের সমকক্ষ নয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ( ৪ এপ্রিল ) বলা হয়েছে, বিশ্বের দরিদ্র জনগণের ৭০ শতাংশই নারী এবং মাত্র এক শতাংশ নারীর নিজস্ব মালিকানায় সম্পত্তি আছে। এ প্রতিবেদনটিই প্রমাণ করে যে, নারীরা কোনভাবেই পুরুষের সমানাধিকার পাচ্ছে না। এছাড়া দুঃখজনকভাবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।
আসল কথা হলো এখনো সমাজে সমতা আসেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনো মনে করে সন্তান জন্ম, পালন ও ঘর সংসার সামাল দেয়া মুলত মেয়েদেরই কাজ।এমন কি বাইরে থেকে উপার্জন করে আনলেও ঘরের দায়িত্ব একা মেয়েদেরই। কাজ শেষে ফেরার সময় মেয়েটির অন্তর্গত চিন্তা থাকে ঘরে কি লাঞ্চ এবং কি ডিনার হবে। বাচ্চারা কিই বা করছে। এ সব তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। আর এ অভ্যাস তাদের রমণীয় গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করে সমাজ। কিন্তু তারা যে সংসারের বাইরেও সংসারের সাচ্ছন্দের জন্য বাড়তি উপার্জন করছে তার জন্য কোন বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেনা। সমাজের অধিকাংশ পুরুষ মনে করে, নিজের মা-বোন ছাড়া যে কাউকে সুযোগ পেলেই যৌন হয়রানী করা যায়। তারা মনে করে নারী কেবল ‘মমতাময়ী’, স্নেহময়ী হলেই তাকে সম্মান করতে হবে নয়তো যা ইচ্ছে তাই ভাবা যায়, এবং বলা যায় তাকে নিয়ে। এই নিয়ে বেশীর ভাগ পুরুষের আছে সনাতনী আগ্রহ এবং ইচ্ছা পূরণের অভিপ্রায়।
সমাজে এখনো নারীর মূল্যায়ন ও সম্মান নির্ধারিত হয় তার শাররিক বৈশিষ্ঠ্য ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে। অনেক পুরুষের সবচেয়ে সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা একজন মেয়ের শারীরিক কাঠামো; দৃষ্টি জুড়ে, মনন জুড়ে শুধু বিশেষ কিছু অংশ ও অঙ্গ। এই যে মনোবৈকল্য যেসব পুরুষের, তাদের মনোজাগতিক সুস্থতা কামনা করা ছাড়া নারীদের আর কিছুই করার নেই।
বহু বিষয়ে সমাজ এখনো নারীদের অবমূল্যায়ন করছে। অনেক অসঙ্গতি ও অসামঞ্জস্যর মাঝে এ প্রসঙ্গে শুধু ধর্ষণের কথাটি উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক। ধর্ষণ মানে ইচ্ছার বিরদ্ধে নারীর শরীর ব্যাবহার। যখন কেউ নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পুর্বক তার শরীরকে ব্যাবহার করে সেটাই ধর্ষণ। একজন নারী ধর্ষিত হলে শাররিক ও মানসিক ভাবে নিজেই হতাশ ও পর্জুদস্ত হয়ে পরে। সেখানে সমাজ তাকে প্রত্যাখ্যান করে অমানবিকভাবে যেন ধর্ষিত হওয়াটা তার অপরাধ। যেখানে সে নিজেই ভুক্তভোগী সেখানে সমাজ তাকে আরও নিন্দার দিকে ঠেলে দিয়ে শাররিক ও মানসিক সবদিক থেকে ধ্বংস করে ফেলে। সেটা শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বলে কথা নয়। মেয়ে মাত্রই ধর্ষিত হলে তারা তখন হয়ে যায় ধর্ষিতা যেন মানুষ নয়। হয়ে যায় অস্পৃশ্য ও সমালোচনার বস্তু। সমাজে সে আর সম্মানিত নয়। একজন ধর্ষিত নারীকে কোন পুরুষ নিঃশঙ্ক চিত্তে আর ভালবাসতে পারেনা কিংবা কোন পরিবার তাকে আনন্দচিত্তে বউ হিসেবে গ্রহণ করতে চায়না। অথচ এটা তার শরীরের অনিচ্ছাকৃত ব্যাবহার মাত্র। এই ধারণার আমূল পরিবর্তন দরকার সমাজে ও গোটা বিশ্বে।
সমাপ্ত
References :-
Charmes, Jacques, and Saskia Wieringa. "Measuring women's empowerment: an assessment of the gender-related development index and the gender empowerment measure."Journal of Human Development 4.3 (2003): 419-435.
Pillarisetti, J.; McGillivray, Mark (1998-06-01). "Human Development and Gender Empowerment: Methodological and Measurement Issues".Development Policy Review. 16 (2): 197–203. doi:10.1111/1467-7679.00059.ISSN 1467-7679.
Nussbaum, Martha C. (1995). "Introduction". In Martha C. Nussbaum & Jonathan Glover (eds.). Women, Culture, and Development: A Study of Human Capabilities. Oxford: Clarendon Press. pp. 1–15. ISBN 9780198289647.
"World Survey on the Role of Women In Development". Women's Control over Economic Resources and Access to Financial Resources, including Microfinance (PDF) (Report). New York: United Nations. 2009. Archived(PDF) from the original on 2017-08-29. Retrieved 2017-06-29.
Sutton, J. & Pollock, S. (2000). "Online Activism for Women's Rights".Cyberpsychology & Behavior. 3 (5): 699–706. doi:10.1089/10949310050191700.
Morahan-Martin, J. (2000). "Women and the Internet: Promise and Perils".Cyberpsychology & Behavior. 3 (5): 683–691. doi:10.1089/10949310050191683.
"Statistics". AWARE RSS. AWARE. 22 April 2010. Archived from the original on 13 May 2016. Retrieved19 May 2016.
Stein, A.I. (2009). "Women Lawyers Blog for Workplace Equality: Blogging as a Feminist Legal Method". Yale Journal of Law and Feminism. 20 (2): 357–408. Archived from the original on 2016-08-20. Retrieved 2016-06-22.
Safia Samee Ali (April 11, 2016)."'Motherhood Penalty' Can Affect Women Who Never Even Have a Child".NBC News. Archived from the original on June 20, 2016. Retrieved June 22,2016.
UNDP. 2013. Human Development Report. The Rise of the South. Human Progress in a Diverse World; New York, UNDP.
UNESCO. 2014. EFA Global Monitoring Report 2013/2014: Teaching and Learning, Paris, UNESCO.
UNESCO (2015). Mobile phones and literacy: Empowerment in Women's Hands; A Cross-Case Analysis of Nine Experiences (PDF). 33: UNESCO.ISBN 978-92-3-100123-9. Archived(PDF) from the original on 2017-05-17. Retrieved 2017-05-10.
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন