![]() |
তোমার দেশ কোথা হে পথিক : মৃদুল শ্রীমানী |
অঙ্কের হিসেবের কথা বারবার বলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বদেশি আন্দোলন গড়ে তুলতে দেশের নেতারা বিধান দেন বিদেশি পণ্য বর্জনের। কর্মীরা হুজুগ করেন বিদেশি কাপড়ের বহ্ন্যুৎসবের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওইখানে বলে বসেন, দেশি মিলের কাপড়ের দামটা বিদেশি কাপড়ের থেকে বেশি পড়লে, গরিব মানুষের উপর জুলুমবাজি করে তাকে বেশি পয়সা খসিয়ে দেশি কাপড় কিনতে বাধ্য করা কতদূর ন্যায়সঙ্গত? ওইখানে তিনি একেবারে টাকাকড়ির হিসেবে বাস্তব জগৎ কে চিনতে চান।
যখন দেশের নেতা বলেন, সবাই মিলে একজোটে চরকায় সুতো কাটলে নির্দিষ্ট তারিখে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করবে, তখনও তিনি প্রশ্ন তোলেন, চরকায় সুতো বানাতে কতটা কি খরচা পড়ে, আর তাতে কাপড়চোপড়ের দামটা কি অঙ্ক ছোঁয়। সোজাসুজি বলে বসেন, দেশের সব মানুষকে তাদের সব কাজ ফেলে চরকা কাটতে জবরদস্তি করা কতদূর যুক্তিযুক্ত।
হিসাবশাস্ত্র আর অর্থনীতির গোড়ার ধারণাগুলি চোখ বন্ধ করে অস্বীকার তাঁরা করতে পারেন, যাঁদের ঘরে রুটি মাখনের জোগাড়ে কমতি নেই। কিন্তু যাকে উদয়াস্ত ঘাম ঝরিয়ে পেটের ভাত জোটাতে হয়, সে মানুষের উপর শৌখিন রাজনীতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যায় না। দেশ বলতে আসলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ। গুটিকয়েক এলিটকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশ সীমাবদ্ধ ছিল না।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন