লালনের যে গান গুলো আমার অন্তরকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। এমনই তাৎপর্যময় কয়েকটি গানের বাণী তুলে ধরছি ...
"এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে যেদিন হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান জাতি গোত্র নাহি রবে "
""সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন
লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান।
একই ঘাটে আসা যাওয়া
একই পাটনি দিচ্ছে খেওয়া
কেউ খায়না কারও ছোঁয়া
বিভিন্ন জল কে কোথায় পান। "
এমনি আরও একটি গান,
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সব দেখি তানা না না।
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রম তো গেল না। "
![]() |
বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় ছেউড়িতে লালনের মাজার |
সবলোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
লালন কয় জাতের কী রূপ
দেখলাম না এই নজরে ll
সুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারী লোকের কী হয় বিধান
বামুন চিনি পৈতে প্রমান
বামুনি চিনি কিসেরে ll
কেউ মালায় কেউবা তসবি গলে
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলে
আসার কিংবা যাওয়ার কালে
জাতের চিহ্ন রয় কার রে ll
জগৎ ঘুড়ে জাতের কথা
লোকে গল্প করে যথা তথা
লালন বলে জাতের ফাতা
বিকিয়েছি সাধবাজারে ll
লালন যুক্তিবাদী হয়ে বলতে চেয়েছেন এ গানে জাত বর্ণ ধর্মের নামে আচার-বিচার অর্থহীন জাত বর্ণের বিচারে মানুষকে হেয় জ্ঞান করে যাগ-যজ্ঞ জব তপ মূর্তি পূজা রোজা নামাজ তীর্থ হজ করলে ধর্ম সাধন হয় না মানুষের মাঝে আছেন ভগবান। এই জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে মানুষকে বিশ্বাস করতে হয় ও ভালো বাসতে হয়। জল পড়া, তেল পড়া, ভূত পুজো,তাবিজ কবজ ধারণ এসব কর্মকাণ্ড দেখে, অশিক্ষিত মানুষদের মনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি কারীদের লালন তার গানের মাধ্যমে মানবিক হতে বলেছেন মানুষকে, বিশ্বাস করতে বলেছেন সৎ হতে বলেছেন। মানুষ বিনা ধর্মতত্ত্ব বাঁচে না, মানুষতত্ত্বই ধর্মতত্ত্ব।
"মানুষ অবিশ্বাসে পাইনেরে সেই মানুষ নিধি
এই মানুষের মিলতো মানুষ চিনতাম যদি।
অধরচাঁদের যতই খেলা
সর্বোত্তম মানুষ লীলা
না বুঝে মন হলি ভোলা
মানুষ বিরোধী। "
আর একটি গান -----
"এমন মানব জনম আর কী হবে ,
মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে।
অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবের উত্তম কিছু নাই
দেব দেবতাগণ করে আরাধনা
জনম নিতে মানবে।
কত ভাগ্যের ফলে না জানি
মনরে পেয়েছ এই মানব তরণী। "
"এই মানুষে হবে মাধুর্য ভজন
তাইতো মানবরূপ গড়লো নিরঞ্জন "
ঈশ্বর কে অধর চাঁদ বলে ডেকেছেন লালন। মানবদেহকে মন্দির জ্ঞান করে সেই মন্দির অর্চনা অর্থে দেহকে প্রধান করে এই গানের কলি রচিত হয়েছে। দেহের ভেতর ভগবানের অবস্থান ও দেহ মনের সমন্বয় সাধনই দেহতত্ব গানের মূল বিষয়। বাউল গায়কের পোশাকে তার নিদর্শন লক্ষ করা যায়। বাউল পোশাকে উদাসী ভাব তারা বৈষ্টম বৈষ্টমী দের মতো গলায় কন্ঠি ধারণ করেন না। বাউলগান বিশেষ কোনো সময় বা বিশেষ কোনো দেবদেবীকে স্মরণ করে গাওয়া হয়না। বাউল গান যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে গাওয়া যায়। লালন বাউল, তাঁর সব গানেই দেহতত্বকেই আশ্রয় করে গান লিখেছেন। দেহতত্বের গান আর বাউল গানের মূল ভাবনা প্রায় এক ও অভিন্ন।
বাউল বলেছেন আত্মা খুঁজতে-- নিজ নিজ মোকামে।
আপনাকে যে জেনেছে নিগূঢ়তত্ব , সেই পেয়েছে খোঁজ।
বাংলা গানের জগতে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাউল লালন ফকিরের গানের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। পূজো পার্বনের পড়ে এসেছে এই দেহতত্ব বা মন, শিক্ষা বা তুক্ষা গান। এর ইতিহাসটা জেনে রাখা ভালো যে দশম- দ্বাদশ শতকে বৌদ্ধধর্মের তান্ত্রিক শাখা বাংলাদেশে ও কামরুপে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রয়োদশ শতকে তুর্কি আক্রমণের দেড়শো বছরের পর, বাংলায় শাসন ব্যবস্থা খানিকটা স্থিতিশীল হয়ে পড়লে, সুফী সম্প্রদায় মূলত দেহতত্ববাদী বাউলগণ একতারা বাজিয়ে পথে প্রান্তরে,নদীর ঘাটে বসে তাঁদের বাউলাগান সাধনা করতেন। এই গান শুনে বহু মানুষ অনুপ্রাণিত হয় ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আর এভাবেই বাউল গানের ধারা বিস্তার লাভ করে। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে লালনের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন স্বয়ং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। কথিত আছে এই একটি মাত্র স্কেচ আছে যা লালনকে পরিচিত করায়। সে সময় লালনের বয়স ছিল ১১৫ বছর।
বাউল লালন বলছেন -----
মিলন হবে কতদিনে
আমার মনের মানুষের সনে ll
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছে কালো শশী
হবো বলে চরণদাসী
তা হয়না কপাল গুনে ll
মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণে
কালারে হারায়ে তেমন
ঐরূপ হেরি এ দর্পনে ll
ঐরূপ যখন স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জার ভয়
লালন ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সেই জানে ll
আখড়ায় বসে একাত্ম হয়ে লালন এ গান গেয়ে মানুষর মনে জাগিয়েছেন চেতনা। ধর্মধ্বজী মানুষ পুরোহিত মোল্লা সমাজপতিরা নিচুতলার মানুষদের অস্পৃশ্য অশুচি বলে একপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাঁরাও এসময় নতুন ভাবনার আলোকে দীপ্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মনেও জেগেছিলো মানবতাবোধ, সাম্যবাদ, ভাতৃত্ববোধ। লালনের পথে সাধনায় উৎসাহী হয়েছেন। বাউল লালনের সাধনায় নারী পুরুষ মিলে সাধনা করায় বাঁধা ছিলোনা কিন্তু এই মেলামেশাকে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ ভালো চোখে দেখতেন না। লালনকেও সে সময় তাঁদের কবলে পড়তে হয়েছিল। তাঁদের ভয় ছিল যে বাউল ফকিরের মতে ও পথে মানুষ বিশ্বাসী হতে থাকলে ধর্মের কৌলিন্য বিনষ্ট হবে আর সেই সাথে নিচুতলার মানুষদের থেকে যে অর্থ ধর্ম প্রণামী বাবদ আদায় হয়, তা বন্ধ হবে।
বাউলদের এ ধরণের সাধনায়, মানুষ-- বলতে সমগ্র মানবজাতিকে বোঝায়। এই পথের মূলে হলো মানুষ। বাউল সাধকরা ব্রত উপবাস, মঠ- মন্দির, কোরান -পুরান, রোজা-নামাজ মানেন না। মানেন শুধু মানুষের অন্তরের মানুষ আর ভগবানকে। খোঁজেন জীবনের লক্ষ্যকে। চাতকের মতো মগ্ন থাকেন আত্ম সাধনায়।
মনের মানুষের সাথে মিলনে আত্ম উৎসর্গ করে পেতে চান মনুষত্বের আখ্যা রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল অ্যালেন গিন্সবার্গ এর মত বহু কবি সাহিত্যিক দার্শনিক বহু বুদ্ধিজীবী মানুষ লালনের গানে প্রভাবিত হয়েছেন। গান্ধীর ও দুই যুগ আগে ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম 'মহাত্মা' উপাধি লালনকে দেওয়া হয়েছিল বাউল সম্রাট উপাধিও তারই প্রাপ্য লালন ফকির, লালন সাঁই, ফকির লালন শাহ নামে পরিচিত ছিলেন এই বাঙালি সাধক ও গায়ক লালন।
গীতিকার সুরকার বাউল দার্শনিক লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়াতে ছেউড়িয়া কুমারখালী তে জন্ম তার দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন বিশাখা। লালন অশ্বারোহণে দক্ষ ছিলেন সংসারী ছিলেন কিন্তু জীবদ্দশায় তাকে কোন ধরনের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতেও দেখা যায়নি। লালনের রচিত গানেই প্রমাণ পাওয়া যায় শিল্পী ও সাধকের কোন জাত হয় না। বৈষ্ণব ধর্মের আলোচনা করতে দেখে হিন্দুরা তাকে বৈষ্ণবও মনে করতেন। মূলত অসম্প্রদায়িক ও মানব ধর্মে বিশ্বাসী লালনের ধর্মতত্ত্ব মানবতাবাদী দর্শনে অনুপ্রাণিত বহু অনুগামী ও শিষ্য এসেছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে দেড়শোটির মতো বাউল গান রচনা করেন।
যেমন ---
"আমার মন যখন জাগলি না রে "
এই গান দেহতত্বেরই গান। রবীন্দ্রনাথ ও লালন দুজনের ভাবনা ও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সাধনার সাথে তাঁর আরাধ্য ও ভালোবাসার ধন এর সমন্বয়। লালনের ভাবনাকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথের মতো করে যখন কোনো কবি ভালোবাসার ধনের জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তখন তিনি শুধু কবি নন সার্থক সাধকও।
লালন সাহিত্যে তথা গানে শুধু অধ্যাত্ম ভাবনা নয় বাস্তব ভাবনারও প্রকাশ আছে। সমাজের নিম্ন বর্গীয় খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে সাহিত্য ভাবনায় কজন উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সে কালে ? তাঁদের জীবন কাটতো দারিদ্রে। লালনও তৎকালীন সমাজে ছিলেন অবহেলিত বঞ্চিত। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা গৃহহারা, অমানবিকতা লালন অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। জাত বর্ণ গোষ্ঠী নিয়েও বিবাদের মাঝে পড়েছেন তিনি। অস্তিত্বের সংকটে পীড়িত হয়েও সাহিত্য সাধনা এক অসাধ্য সাধন। লালনের স্বতঃস্ফূর্ত সাহিত্য প্রতিভাকে তাই কুর্নিশ জানাতেই হবে। তাঁর গানে সমকালীন সমাজ ও ধর্মের চিত্র বাঙময় হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে ব্রাত্য অবহেলিত মানুষের আশা-নিরাশা, ভাবনা-চিন্তা ও বিশ্বাস। তাই তিনি সার্থক সাহিত্যিক ও সফল গীতিকার।
রবীন্দ্রনাথ শুধু লালনের গানে উৎসাহী ছিলেন না। বাউল লালনের সাধনক্ষেত্র মানে ছেঁউড়িয়ার আখড়া
টিও যেনো প্রাধান্য পায় টিকে থাকে বাউল সুর সে বিষয়ে কর্ম উদ্যোগ ও নিয়েছিলেন। বাউলগীতি সাধনারই সম্পদ। সুর অবহেলার নয় সুর বিনষ্ট হলে বাউল গানের আবেদন ও আকর্ষণ থাকে না। বাউল বানীর ভাষা মর্ম, সুর, সব মিলিয়ে বাউলগানের অস্তিত্ব। যা রবীন্দ্রনাথের মনকে উদ্বেল করেছিল ও তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রবাউলে। রচনা করেছেন রাবীন্দ্রিক বাউলাঙ্গের গান।
"আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।
এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা "।
" আপনি আমার কোনখানে
বেড়াই তারই সন্ধানে "
আরও বলেছেন -----" আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি "
লালনের মহিমা রবীন্দ্রমানসকে প্রাঞ্জল করেছিল বলেই লালন তত্ত্বে অনুরাগী হয়ে এভাবেই অধরা মনের মানুষের খোঁজে মেতে উঠেছেন ও আত্ম অন্বেষণ ব্যক্ত করেছেন গানে, কবিতায় প্রবন্ধে। লালনের শীর্ষ নেতাকে সাঁই বলে সম্বোধন করতেন প্রতিবছর শীতকালে আখড়ায় একটি ভান্ডারের আয়োজন করতেন প্রায় দশ হাজার শিষ্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক একত্রিত হতেন এবং সেখানে সংগীত বাউল গান ও বিভিন্ন আলোচনা হতো। কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ অর্থাৎ হরিনাথ বাউল এর গান যখন বাংলার মানুষের মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল তখন লালন ছিলেন তার সাধন স্থলের নিভৃতে আত্মস্থ হয়ে। প্রচারবিমুখ লালন তার জীবন কালের উচ্চবর্ণীয় কিছু মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছিলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের মাধ্যমে। লালন ফকির কে জনৈক ভক্ত বলে উল্লেখ করে হরিনাথ লালনের একটি গান উদ্ধৃত করেছিলেন তার ব্রহ্মাণ্ড বেদ গ্রন্থে ---
"কে বলছে লালন সাঁইয়ের লীলাখেলা
দেখিয়ে সব পুঁথির মালা l"
সমাজসেবী সাহিত্য মনস্ক হরিদাস এর জীবনবোধে আধ্যাত্মিক মাত্রা যুক্ত হয়েছিল লালন ফকিরের সান্নিধ্যে থাকার ফলে। লালনের বাউল গান তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। বাউল গান ও বাউল দল গঠন করতে। জলধর সেন অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, প্রফুল্ল চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের মত সাহিত্য শিষ্যদের বাউল গান ও লালনের গানের দল গড়ার অভিপ্রায় জেগেছিল।
লালন লেখেন ----
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়
ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতাম পাখীর পায় ll
আট কুঠুরি নয় দরজা আঁটা মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা
তার ওপরে সদর কোঠা আয়না মহল তায় ll
কপালের ফের নইলে কী আর পাখিটির এমন ব্যবহার
খাঁচা ছেড়ে পাখি আমার কোনখানে পালায় ll
মন তুই করলি খাঁচার আশে খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে
কোনদিন খাঁচা পড়ব ধ্বসে ফকির লালন কেঁদে কয় ll
রবীন্দ্রনাথ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় দর্শন মহাসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার সময় তাঁর ভাষণে "অচিন পাখি " গানের স্রষ্টাকে পল্লীগায়ক বা ভিলেজ পোয়েট বলে অভিহিত করে বলেছেন। "অচিন পাখি" গানের সঙ্গে তুলনা করেছেন ইংরেজ শেলীর কবিতা। উপনিষদের ঋষির বাণীই প্রতিধ্বনিত হয়েছে "অচিনপাখি " গানে, কেমন করে অচেনা,অসীমকে অনুভবে উপলব্ধিতে পেতে হয়। রবীন্দ্রনাথ উপনিষদের ঋষির সঙ্গে পল্লীকবি লালনকে তুলনা করে অমর করে তুলেছেন। দেহরূপ খাঁচার প্রান পাখি তো অধরা, অসীম ঈশ্বর তাঁকে মনের বেড়ি অর্থাৎ ডোরে বাঁধতে চান, সাধকতাই ঈশ্বরকে খুঁজে পেতে গেয়ে যান এই গানা।
আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর
সেথায় এক পড়শি বসত করে।
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পাড়ে
আমি বাঞ্ছা করি দেখবো তারে কেমনে সে পাড় যাইর।
কী বলবো সে পড়শীর কথা
ও তার হস্তপদ স্কন্ধ নাইরে
ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর ক্ষণেক ভাসে নীড়ে
পড়শী যদি আমায় ছুঁতো আমার যম যাতনা সকল যেত দূরে
সে আর লালন একসাথে রয় তবু লক্ষ যোজন ফাঁক র।
ঈশ্বরকে অনুভবে পাওয়া যায় উপলব্ধিতে। ঈশ্বর দূরে নয়, সাধকের মাঝে বিরাজ করেন তাকে পেতে মঠে মন মন্দিরে হজে বা কোন তীর্থস্থানে যেতে হয় না।
"ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায় আপন ঘর না বুঝে বাইরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায় "।
"বেদে কি আর মর্ম জানে
যে রূপে শায়েরী লীলাখেলা আছে এই দেহ ভুবনে
মনুষ্যত্ব ভজরে সার বেড়ি ছাড়া বৈরাগ্যের মনে।"
অর্থাৎ দেহ মন ও বস্তুজগতকে অস্বীকার করে ঈশ্বর জানা যায় না। বাউল শব্দের অর্থ বাউরাবাতুল। বাতুল মানে পাগল শব্দ থেকেই অর্থবোধক শব্দ এসেছে। পাগলই বটে বাউলরা তারা ঈশ্বরকে খোঁজেন নাকি মনের মানুষেরে খোঁজেন জানেন শুধু সাধক বাউল। গগন হরকরা, মদন বাউল, পাগলা কানাই আরও অনেক বাউলের মধ্যে লালনের গান রবীন্দ্রনাথের মনকে মাতিয়েছিলো, উদ্বেলিত করেছিল। ভিন্ন বাউল রীতির সাধক ও আছেন কিন্তু লালন -- বাংলার বাউল সম্রাট, বাউল শিরোমণি। বাংলার বাউল সাধনার ঐতিহ্যকে নতুন মাত্রায় ঋদ্ধ করেছে লালনগীতি। লালন ছিলেন এক এবং অন্যতম দিশারীর ভূমিকায়।
রবীন্দ্রনাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লোকজীবন লোকগীতি তথা বাউল ফকিরদের সাধনা সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে শিক্ষিত মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীরা গবেষণা কাজে ব্রতী হয়েছেন। অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী লালনের কিছু গান ও বাণী আবিষ্কার করেন ও অতি যত্নে সংগ্রহ করে রাখেন। পল্লী সুর ও গানে এক মাধুর্যময় আবেদন থাকে l সব গীতিকার ছাপিয়ে লালনগীতি অর্জন করেছে অনন্যতা। সুর লয় ভাব এর পরেও এ গানের বলিষ্ঠ ভাষা শুনে শ্রোতামাত্রই হন আপ্লুত। আধ্যাত্মীক ভাবনা ও প্রগাঢ় বিশ্বাসকে বাণীময় করেছেন লালন। যে ভাষায় গ্রাম্য নিরক্ষর মানুষ কথা বলে, মাটির কাছে থাকা সহজ সরল মানুষের মনের কথাই লালন-সুর ও ছন্দে বেঁধেছেন।
তাই তো লালনের গান আজ বিশ্বের মানুষ ও সকল পড়ুয়াদের কাছেও পরম সম্পদ। লালন আজ অধ্যয়নের বিষয় গবেষণার বিষয়।
11 Comments:
দারুন হয়েছে
অসাধারন লেখা খুব ভালো লাগলো বিশ্লেষণে মুগ্ধতা রেখে গেলাম
Osadharon kobi protivar ononno nojir. Onoboddo lekhonir prokash. Arsi nogorer srosthar bisoye gobesona mulok lekhonir jonno osonkhho dhonnobad
Osadharon kobi protivar ononno nojir. Onoboddo lekhonir prokash. Arsi nogorer srosthar bisoye gobesona mulok lekhonir jonno osonkhho dhonnobad
জীবন কখনও থেমে থাকে না l সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিবাহিত হয় l লালনের জীবনও গতিময় প্রতিভাপুরুষ রূপে চিহ্নিত হয়েছে lলেখক ছবি ধর এর লেখায় অমূল্য মূল্যবোধ গোটা লেখাটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে l আংশিক লালন চরিত্রে ভাঁটা থাকলেও জোয়ার টেনে অধিকাংশই লেখিকা পূর্ণ করতে সক্ষম l লেখার মধ্যে তত সমসাময়িক পরিবেশেএর জীবনযাত্রার রূপ বেশে লালনের গানে যে চিত্র ধরা পরে তাতে বর্তমান সময়েও উপযুক্ত এবং প্রাণউজ্জ্বল দৃষ্টি l অবাক এটাই যে অনেকেই এমন কাজ করে উঠতে সাহস ও সময় পাইনা যা ছবি ধর পেরেছে ও পেয়েছে l ওকে কুর্নিশ জানাই ! ভালো থাকুক লেখিকা এবং এই "বাংলাসাহিত্য " যাঁদের ভাবধারা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বাংলা কে রূপবতী করে তোলায় মুললক্ষ l
ভালো লেখা l সত্ সাহস বড় বিষয় l শুভেচ্ছা অভিনন্দন ভালবাসা ভালবাসা l চিরন্তন ভালো লেখ ভালো থেক সকলে l
অনবদ্য লেখা
দারুণ লেখা
Osodharan, odwitiya, vilakshan protibha..
দারুন একটি লেখা।
Sotti darun Lekha. Onek kichhu Jana jay Tomar Lekha theke.😊
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন