![]() |
সূরজ দাশ |
কখনও রাত্তির হলে আবার ডাকব তোকে , ঘুম
চোখের ভেতর হাত নেড়ে হেঁটে যাব দুপুর অবধি
দাঁতে দাঁত চেপে যদি ফিরে আসি, আগুনের পাশে
বৃষ্টির বন্দুক রেখে যদি ছোট্ট বিকেলের কাছে
মাথা নোয়াই, খেতে খেতে যদি রাত্রি নামে মাঠে
যদি শৈশবের প্রশ্নগুলো গল্প হতে তৈরি হয়
কিভাবে জিজ্ঞেস করব তোকে এরপর ? সারারাত
এখন তো ধস নামে, বেলা বাড়লে পুকুর ভরে যায়
কচুরিপানায়, কোথাকার মাছরাঙা নদী ডালে
বসে বৈশাখের চুল ছেঁড়ে, মেঘের বালিশে মাথা
রোদের কাঁথায় বিকেল বিছিয়ে রাত্রিও শিখেছে খেলা
যার জন্য এতদিন হিংসে পুষেছি আনমনে
যার জন্য পুঁই–চচ্চড়ির মতো লেপটে থাকতাম
সেইতো এখন চোদ্দশ বারো, তিরিশ বছর
কিন্তু এখন কি কোনও কাজ আছে ? এই তো যথার্থ
স্নিগ্ধ অবহেলা ! বসে আছি বেশ, একলা দুপুর
মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যায় দেহাতি বিকেল
তবু স্লেটে লিখছি রেখে স্নানের ইশারা ! এতকাল
যেভাবে একার সাথে বহুরাত ছলনা করিনি
যেভাবে আনত থেকে বহুবার লিখেছি রহস্য
শ্যাওলা বৃষ্টিতে ভিজে যেভাবে ছুঁয়েছি ভবিষ্যৎ
সেভাবেই লালসার সবুজ ব্যাঙাচিগুলো, কি আশ্চর্য
বেঁচে নেই একটিও আর ! এভাবেই আছি তবু
রাত্রির নাভিতে মুখ, মুখের ভেতর জ্বলন্ত চাবুক
কিছুই কি করার নেই ? ভেবেছি আগুন থেকে তুলে
আনবো ভোরের হাসি ! হিংসার টবে ধাক্কা খেতে খেতে
তারপরও মুছে দেব স্নাতক পাখির ভাসা ! বল
এরপর আর তুই হিংসে করবি ? আমাকে কি আর
দুপুরের লাল শাকে ছড়িয়ে দিবি না ? সুপারির
গোপন খোসায় আমাকে ভাঙ্গ না তুই ! বেলা শেষে
গড়িয়ে দে সাত-পাঁচ দোতারা একতারার মাঠে
বসে বসে বাহান্ন তাসের তেপ্পান্ন ম্যাজিক হবো
বিদুরের অন্ন হয়ে তোর হাঁড়িতে খিচুড়ি হবো
তোর সান্ধ্যভাষা বুঝে বনচাঁড়ালের ছড়া গানে
রবিবার হবো ! চিতা থেকে তুলে আনবো পুরনো
মনসার গান ! ভাসানের দিন সঙ্গে থাকবি তো ?
জবর দখল যারা করেছিল আমার অহং
তাদের বলব গিয়ে এই নাও উচ্ছেদ নোটিশ
এবারের মত রাত্রি হও ! চারদিকে সর্ষেফুল
আর বাঁদরের দাঁত খিঁচানোর মতো দুহাত পা
লম্বা করে আকাশে লটকে দেব পিঁপড়ের টোপ
এখন এখানে কেউ নেই, চলো রাত্রি, অন্ধকার
হতে হতে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে আসি, দুঃখ যদি
কিছু থাকে, ফেনা ফেনা, উত্তুরে হাওয়ায় ডুবে যাব
তখন ব্যর্থতা চিনে ঘাসের সংকলনে স্থান
করে নেব, এক-আধখানা ঋতুউৎসব এলে
শিবের গাজন যারা গায় পথে , তাদের বলব
এই দেখো, ধান ভাঙতে আমিও শিখেছি শিবের গীত
বিশ্বাস করুন, বহু কাটাকাটি খেলেছি জীবনে
বালিশে হেলান দিয়ে আজ তাই রাত্রির প্রার্থনা
কাঁসাই দিনের স্মৃতি ধাক্কা মেরে স্বপ্ন ছুঁতে চায়
শোনো, এই সবে কাঁদতে শিখেছি, শূন্য কলশিতে
আওয়াজ উঠলে যে রকম ইচ্ছেরা লাফিয়ে ওঠে
তেমনই ভুলের মেঘ ভাঙতে ভাঙতে, ঘরময়
ভেসে গেছে নীলের সমুদ্রে ! আড়ালে যে ছিল নদী
পাতানো বান্ধবী, সে আজ দূরের ফুল, মাথা নাড়ে
হাওয়া বাতাসের সাথে নেচে ওঠে পায়ের আলতা
কি আর করবো ! কচিঘাসে ঠেকলে পা নড়ে ওঠে
বুকের বিদ্যুৎ ! কাদা পায়ে শুতে গিয়ে, কেউ এক
বলেছিল মাটি নাকি জলদেবতার খোলাচুল
কি কঠিন স্নায়ুচাপ, কি জটিল দ্বন্দ্ব, লণ্ডভণ্ড
সব কিত কিত, অন্ধকার আর সাদা রাত্রি, ঘুম...
আমি কি পাগল হয়ে গেছি ? বল তুই, কেন এত
কথার পর কথা মনে পড়ছে ? কেন এত শব্দ
খরচ করছি দেবী ? কার জন্য আজও দুঃখে কাঁদি ?
দুর্গন্ধ বুকে নিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম অন্ধকারে আমার মতন
আরও কত চাঁদ-পাখি বিজিত ভিখারি হয়ে সন্তানের
কবিতার পাশে চুপচাপ বেনারসি, ওঁ প্রজাপতি, শান্তি খোঁজে
আপাত সহজ গানে এত জটিলতা, তবু কেন
সে সব জানলা দিয়ে ঘরে ঢোকে ; হেরো, মুখপোড়া
আমি কাঁথা মুরি দিয়ে আটকাই সে সব আঘাত
এরপর বল তুই, কি দোষ করেছি, বিছানায়
শুয়ে শুয়ে পুরনো খাতার গন্ধে বলতে পারিস
তোকে নষ্ট করেছি, দুখণ্ড করে ফেলেছি নিজেকে
গুটি গুটি শুয়ে তখন, গিটারে ঝড় তুলে আহা
আশ্চর্য বৃষ্টির দুল দেবো তোকে, দুকানে দুলিয়ে
সেসব, আমাকে হাওয়া দিস, পেট ভরে তোর
বৈশাখের আগুন দেখবো, জলে ভিজে কাছে পিঠে
যে কোনও রাস্তায় খাঁ খাঁ, ফোকলা নিঃশ্বাসে কি দারুন
যুদ্ধ যুদ্ধ শিক্ষকতা, নদীর চোয়ালে দাঁতে দাঁত...
জানলা দরজা খুলে ঘর বাড়ি লণ্ডভণ্ড সব
থাকে থাকে গচ্ছিত বই-এর ফাঁকে রুগ্ন নদীব্রিজ
পিঠে নৌকো নিয়ে অকস্মাৎ, হাসতে হাসতে আহা
ছাদে বসে ঘুমের পুস্তিকা হাতে আজও ব্রতকথা ...
বুকের বোতাম খুলে ঢুকে যাবো মেঘের ছায়ায়
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন