![]() |
পিতৃ-স্নেহ : আরতি ধর |
একটা পুত্র সন্তানের আশায় পর পর পাঁচ টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে পিতা বিশ্বনাথ আজ বিরক্ত নিজের উপর, বিরক্ত কন্যা দের প্রতি। আর স্ত্রী কে তো অপয়া ছাড়া আর কোনো কিছু ভাবতেই পারেন না। কন্যা রা তার কাছে গোটা পাঁচেক বোঝা ব ই আর কিছুই নয়।
বড় মেয়ে রমা অত্যন্ত শান্ত, সুশ্রী, মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে তার বুঝি নিজেকে অপরাধী মনে হয়। মনে দুঃখ বাবা যে কখনো তাদের আদর করেন নি, মা বলে ডেকে মাথায় হাত রাখেন নি। বড় সাধ মনে বাবার হাতের স্নেহ মাখা স্পর্শ পেতে ইচ্ছে হয়।
সবে মাত্র মাধ্যমিক পাশ করেছে রমা। বয়েস পনেরো। বিশ্বনাথ রমার জন্য পাত্র পছন্দ করেছেন। শুনে অবাক হয় রমার মা মীরা। "সে কি গো! ও যে এখনো বাচ্চা "?
"ছাড়ো তো, বাচ্চা নয়, বোঝা, যত তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারি বেঁচে যাই"।মুখ দিয়ে একবার বলতে ও সাহস হয় না রমার যে সে আরো পড়তে চায়, নিজের পায়ে দাড়াতে চায়, সংসারে এবং বোন দের পাশে দাঁড়াতে চায়। বাবা শব্দ টা তে বিতৃষ্ণা আসে তার।
বিয়ে হয়ে গেল রমার। ছোট্ট পরিবার, স্বামী ফল বিক্রি করে, শ্বশুর দর্জি কাজ করে। বেশ সুখের সংসার। অভাবের সংসারে জন্ম নিয়ে সব রকমের ঘরোয়া কাজ তার জানা আছে। তবুও কেমন যেন একটা ভয় ভয় লাগে তার।
কাজ থেকে ফিরেছে শ্বশুর মশাই। দৌড়ে এক গ্লাস জল নিয়ে দাড়ায় রমা শ্বশুরের কাছে। হাতে গ্লাস টা ধরিয়ে দিয়ে পিছন ফিরতেই একটা ডাকে চমকে তাকায় রমা
'মা'
'তুই আমাকে বাবা বলে ডাকবি না? আমার যে মেয়ে নেই রে মা। আর কাল তৈরি হয়ে থাকবি, তোকে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে যাবো, তোর এখন পড়াশোনার বয়স, সংসারের না। আগে বড় হ, নিজেকে তৈরি কর, তারপর না হয় সংসার করিস'!!
'বাবা' একটা শীতল অনুভূতি যেন ছুঁয়ে গেলো সারা দেহে। চোখে আনন্দের বন্যা নিয়ে পরম ভরসায় পিতার বুকে আশ্রয় নিলো রমা।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন